নেতৃত্বের মুন্সিয়ানায় আগামীর ভরসাও কি দিলেন লিটন?

এই অঞ্চলের মানুষের ধারণা, যিনি বেশি চটপটে, ভোকাল তিনি হয়ত নেতা হিসেবেও আদর্শ হবেন। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বেশি কথা বলার চেয়ে কাজের কথা বেশি বলা হয়ত অনেক সময় বড় হয়ে দেখা দেয়।
Litton Das
ড্রেসিংরুমে নিজের ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছেন লিটন দাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

অধিনায়কত্বের সময়কালীন অনেক পরিস্থিতিতে নাকি আড়ষ্ট হয়ে যেতেন মুমিনুল হক। কী করবেন ভেবে পেতেন না। নিজেই সেদিন সাংবাদিকদের বলছিলেন, এমনকি নিউজিল্যান্ডকে হারানো মাউন্ট মাঙ্গানুই টেস্টেও এসেছিল এমন পরিস্থিতি। এসব মুহূর্তে তার চিন্তার জগত সচল করে দিয়েছেন কে জানেন? লিটন দাস। মুমিনুলের মতে লিটন ছিলেন তার অধিনায়কত্বের সময়ের বড় এক ভরসা। খেলা বোঝা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, মাঠ চালানো এসব ব্যাপারে অনুজ লিটন সম্পর্কে অনেক উঁচু ধারনা রাখেন মুমিনুল।

এই নিয়ে সব সংস্করণেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়ে গেল লিটনের। নিউজিল্যান্ডে একবার টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে, হুট করেই। তখন কিছুই খেয়াল করার অবস্থা ছিল না। গত বছর তামিম ইকবাল না থাকায় ভারতের বিপক্ষে পুরো ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে নজর কাড়েন, দলও জেতে সিরিজ।

এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট নেতৃত্বের অভিষেক হলো তার। দলের ৫৪৬ রানের রেকর্ড জয়ের পর আলোচনায় নেতা লিটনও। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্তর্মুখী স্বভাবের বলে পরিচিত লিটন। কম কথা বলা লিটনকে বছর তিনেক আগেও আগামীর নেতার ভূমিকায় হিসেবে রাখেননি খুব বেশি কেউ।

এই অঞ্চলের মানুষের ধারণা, যিনি বেশি চটপটে, ভোকাল তিনি হয়ত নেতা হিসেবেও আদর্শ হবেন। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বেশি কথা বলার চেয়ে কাজের কথা বেশি বলা হয়ত অনেক সময় বড় হয়ে দেখা দেয়।

দলের এক ক্রিকেটার বলছিলেন, 'খেলার মাঠে কোন বিষয় নিয়ে দ্বিধা তৈরি হলে এখন সবার আগে লিটনের সঙ্গে কথার বলার কথা মাথায় আসে, কারণ সে ঝটপট একটা পথ বের করে দেয়।'

Litton Das
ট্রফি হাতে লিটন দাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

খেলাটাকে গভীরভাবে বোঝা এবং ভাইটাল মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মূলত নেতৃত্বের মুন্সিয়ানাকে আলাদা করে। ভারতের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক  বলা যায় মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে। ধোনিও কিন্তু এমনিতে কম কথা বলার লোক। মাঠে অনেক সময়ই দেখা যেত নির্বিকার ধোনি। সাফল্যেও উদযাপনটা তার খুব পরিমিত।

প্রয়োজন ছাড়া ভোকাল হতে দেখা যায়নি ধোনিকে। কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রায়ই চমকে দিতেন তিনি।  ব্যক্তিত্বের এই ধরণটায় মিল আছে লিটনের। দেখানদারি আওয়াজের চেয়ে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বেশি জরুরি।

মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেভাবে কঠিন কোন পরিস্থিতি আসেনি। বলা যায় আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে আসতে দেয়নি স্বাগতিক দল। পাঁচ স্লিপ, গালি, পয়েন্ট নিয়ে বল করতে দেখা গেছে পেসারদের। ঘরের মাঠের জন্য বিরল দৃশ্য। বোলারদের ব্যবহার, ফিল্ডিং সাজানো, প্রতিপক্ষকে চেপে রাখার মানসিকতা ধরে রাখতে হয় অধিনায়ককে। খুব ভালো করে নজর রাখলে লিটন সেদিক থেকে লেটার মার্কস পাবেন।

এই টেস্টে লিটনের আরেকটা জায়গায় উন্নতি দেখা গেছে। সেটা হচ্ছে প্রেস সামলানো হয়। প্রশ্ন পছন্দ না হলেও করে তালগোল পাকিয়ে চটে যাওয়ার ঘটনা বেশ ক'বারই ঘটিয়েছেন। আফগানদের বিপক্ষে টেস্ট জেতার পর থাকে দেখা গেল একদম ভিন্ন।  

'এটা নিশ্চিতভাবেই লিটনের সবচেয়ে লম্বা সংবাদ সম্মেলন।'-আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জিতে প্রায় ২৩ মিনিটের দীর্ঘ প্রশ্ন-উত্তর পর্বের পর  বলছিলেন এক সংবাদকর্মী। দীর্ঘ তো বটেই, কোন অপছন্দের প্রশ্নে খেই হারিয়ে না গিয়ে দিয়েছেন বিশদ ব্যাখ্যা, নিজেকে সামলেছেন। হয়ত টের পাচ্ছেন, স্রেফ মাঠ সামলানোই অধিনায়কের কাজ নয়, মাঠের বাইরেরটাও সামলাতে হয়।

জানিয়েছেন, এক টেস্টের সাময়িক দায়িত্ব হলেও সেটা  উপভোগ করেছেন সবার সাপোর্ট পাওয়ায়, 'অধিনায়কত্ব খুব উপভোগ করেছি।  বোলাররা যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছে…কঠিন উইকেট ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও আমাদের ব্যাটাররা যেভাবে ক্যারেক্টার শো করেছে এটা সম্পূর্ণ ক্রেডিট আমাদের ব্যাটার ও বোলার পুরো দলের।'

টেস্টে গত বছর তাকে সাকিব আল হাসানের ডেপুটি করা হয়। এবার যখন সাকিব চোটে ছিটকে গিয়েছিলেন, অনুমিতভাবেই তার অধিনায়ক হওয়ার কথা। কিন্তু এই টেস্টের আগে কিছু গণমাধ্যমে খবর বের হয়, নেতৃত্ব নিতে চাইছেন না তিনি! যদিও লিটন নিজে কিছু বলেননি। গুঞ্জন ভুল প্রমাণ করে দায়িত্ব তাকে ঠিকই নিতে দেখা যায়। তবে স্থায়ী দায়িত্বের প্রশ্ন ভবিষ্যতের উপর ছেড়েছেন,   'দেখেন, এখন ত আপাতত  একটার জন্য পেয়েছি। (অধিনায়কত্ব)। আশা করব সাকিব ভাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। এবং তার কাছে হস্তান্তর করব। আমি আগামীরা পরে ভাবব। দেখা যাক।'

লিটন পরে ভাবলেও বিসিবি ভেবে রাখতে পারে। পালাবদলের পর অন্তত নেতৃত্ব শূন্যতা যে হচ্ছে না, তার আভাসে ক্রিকেট বোর্ড স্বস্তিও পেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

54m ago