জয়ের বাইরেও আরও যা চাইছে বাংলাদেশ
তামিম ইকবাল সংবাদ সম্মেলনে এলেন কিছুটা মুখ ভার নিয়ে। যদিও সিরিজের তীব্রতা আর প্রতিপক্ষ বিবেচনায় তার নির্ভারই থাকার কথা। অবশ্য খানিক পরই বোঝা গেল তার ভেতরের অস্বস্তির কারণ। বেশ কয়েকদিন ধরে চলা চোট নিয়ে ভুগছেন দোলাচলে। জানিয়ে দিলেন খেলতে নামবেন শতভাগ ফিটনেস ছাড়া। তামিমের এই চোটের অস্বস্তির মতন বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে অল্প বিস্তর যা খামতি তা দূর করার মিশনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নামছে বাংলাদেশ।
বুধবার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া সিরিজে বাংলাদেশের লক্ষ্য একাধিক। প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই সিরিজ জেতা, দ্বিতীয়ত ব্যাকআপ ব্যাটারদের বাজিয়ে দেখে বিশ্বকাপের স্কোয়াডের সিদ্ধান্তের দিকে এগুনো। এরপরই আসবে স্পোর্টিং উইকেটে বড় রানের ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্যের পরীক্ষা।
আরেকটি বিষয় প্রকাশ্যে না বললেও হয়ত এই সিরিজজুড়ে ঘুরে ফিরেই আসবে। অধিনায়ক তামিমের ছন্দ ফিরে পাওয়া, শতভাগ ফিট তামিমকে পাওয়া। সবগুলো সমীকরণ মিললে নিশ্চিতভাবে হাসি চওড়া হবে টিম ম্যানেজমেন্টের। বিশেষ করে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতেও একই ভেন্যুতে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলেছিল দুদল। কঠিন লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানেই বাংলাদেশ সিরিজ জিতে যায়। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ফর্ম বিবেচনায় এরচেয়েও ভালো ফলের প্রত্যাশা অমূলক নয়।
সেই ফল নিশ্চিত করতে গিয়েই শুরুতে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষায় যাবে না স্বাগতিকরা। পাঁচ পেসারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলালেও ব্যাটিং লাইনআপে চেনা সমন্বয়ই দেখা যাবে। ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা থাকলেও অন্তত প্রথম ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করেছেন তামিম। তার সঙ্গে ওপেনে থাকছেন লিটন দাস। এরপর একে একে নামবেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজসহ বাকি বোলাররা। বাড়তি বোলার না খেলালে সাত নম্বরে সুযোগ পেতে পারেন আফিফ হোসেন।
এই সিরিজে স্কোয়াডের সবাইকে অন্তত এক ম্যাচ করে হলেও খেলানোর চেষ্টা করার কথা বলেছেন তামিম, তবে সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেননি তিনি। সঙ্গত কারণেই তা বোধগম্য। ওপেনার নাঈম শেখের সুযোগ পাওয়া নির্ভর করছে যদি, কিন্তুর উপর। যদি বাংলাদেশ প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলে তবে নাঈম শেষ ম্যাচে হয়ত নামবেন। কিন্তু এর অন্যথা হলে সিরিজ নির্ধরণী ম্যাচে কোন ঝুঁকির দিকে হাঁটা হবে না।
আরেকটা উপায়ে নাঈমের সুযোগ মিলতে পারে। অর্থাৎ তামিমের চোটের কারণে না খেলার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া। নতুবা হয়ত পুরো সিরিজ বেঞ্চ গরম করেই পার করতে হবে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহককে। বিকল্প ব্যাটারদের বাজিয়ে দেখা নিয়ে সংশয়ের জায়গা তাই থেকে যাচ্ছে।
আফগানদের বিপক্ষে মিরপুরের বদলে চট্টগ্রামে খেলা রাখা হয়েছে বিশ্বকাপের কথা ভেবেই। ভারতের ভেন্যুগুলোতে বিশ্বকাপে বড় রানের ম্যাচ হতে পারে। কয়েকটি ভেন্যুতে পেসাররা পাবেন বাড়তি সুবিধা। জহুর আহমেদের বাইশগজেও রাখা হয়েছে বেশ খানিকটা ঘাস। খেলার শুরুতে তাই পেসাররা সিম মুভমেন্ট পাবেন, ম্যাচ আগালে ব্যাটারদের হাতে যাবে সব নাটাই। এমন উইকেটে ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বড় রান করার চ্যালেঞ্জ নিতে চায় বাংলাদেশ। জয়ের পাশাপাশি এই লক্ষ্য পূরণ হলে দলের ভেতরে বড় কিছু করার আশা বেড়ে যাবে।
অধিনায়ক তামিমকে নিয়ে চলা গুমোট পরিস্থিতিও উড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপার আছে। এই ইস্যুতে স্বাভাবিকভাবে কেউই কথা বলেননি। যদি তামিম চোটের কারণে পুরো সিরিজ খেলতে না পারেন, কিংবা খেলেও যদি রান না পান তাহলে খচখচানিটা জ্বালাতনের কারণ হতে পারে। বিশ্বকাপের আগে আগে অধিনায়কের অস্বস্তি কোন দলই চায় না।
শেষ পর্যন্ত সবগুলো সমীকরণ মিলে যাওয়া কঠিন বা অসম্ভব। তবে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি কিছু হিসেব মিলতেই হবে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, ইবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ।
Comments