যেসব অর্জন ও কীর্তি নিয়ে অবসরে গেলেন তামিম

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১৮ বছর ছুঁইছুঁই বয়সে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যাত্রা শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর নানা উত্থান-পতন পেরিয়ে কাটিয়ে দেন ১৬ বছরের বেশি সময়। টাইগারদের ইতিহাসের অনেক অর্জন ও কীর্তির মালিক তিনি। ওয়ানডে দলকেও নিয়মিতভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ২০২০ সাল থেকে। তবে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার ও সফলতম ব্যাটার।

বৃহস্পতিবার নিজ শহর চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ দলকে বিদায় জানিয়েছেন তামিম। কথা বলার সময় কয়েকবার কান্নায় থেমে যান তিনি। মাথা নিচু করে চোখ মুছতে দেখা যায় তাকে। ৩৪ বছর বয়সী তারকা অবশ্য বলেন যে সিদ্ধান্তটি আচমকা নেননি তিনি, 'আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের (বুধবার) ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আমার মনে হয় না বলার দরকার আছে। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে, এটাই ঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিব।'

গত বছর জুলাইতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দেন তামিম। যদিও ২০২০ সালের পর এই সংস্করণে আর খেলতে দেখা যায়নি তাকে। এরপর থেকে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার হাতছানিও ছিল তার সামনে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফিটনেস নিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে থাকা তামিম বিদায়ের করুণ সুর শোনালেন আগেই। তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়েও উঠছিল প্রশ্ন।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তামিমের। হারারেতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। টাইগাররা সেদিন জিতেছিল ১৪ রানে। ১৬ বছরের ব্যবধানে আরেকটি ওয়ানডে হয়ে থাকল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। তবে আগের দিন (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী আফগানদের কাছে ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

৩৪ পেরোনো তামিম অবসরে গেলেন বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ একটি ক্যারিয়ার সঙ্গী করে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক রেকর্ডে জ্বলজ্বল করছে তার নাম, অনেক 'প্রথম' এসেছে তার নৈপুণ্যে। সেসব তুলে ধরা হলো দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।

♦ তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ১৫ হাজার রান রয়েছে তামিমের। ৩৮৫ ম্যাচে ৩৫.৩৯ গড়ে তার সংগ্রহ ১৫১৪৮ রান।

♦আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের সেঞ্চুরির সংখ্যা মোট ২৫টি। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারের ২০টি সেঞ্চুরিও নেই।

♦ তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার তামিম। ওয়ানডেতে ১৪টি, টেস্টে ১০টি ও টি-টোয়েন্টিতে একটি সেঞ্চুরি আছে তার।

♦ ২৪১ ওয়ানডেতে ৩৬.৬২ গড় ও ৭৮.৫৪ স্ট্রাইক রেটে তামিম করেছেন ৮৩১৩ রান। বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এই সংস্করণে ৮ হাজার রানের তালিকায় আছেন তিনি।

♦ওয়ানডেতে ১৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৫৬টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তামিমের। দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সবার উপরে আছেন তিনি।

বাংলাদেশকে ৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে তামিম জয়ের দেখা পেয়েছেন ২১টিতে, হেরেছেন ১৪টিতে। বাকি দুটি ম্যাচে কোনো ফল আসেনি। অন্তত পাঁচটি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে জয়-পরাজয়ের শতকরা হারে (৬০%) বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি।

৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি ফিফটিসহ তামিমের রান ৫১৩৪। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফিফটির সংখ্যায় সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে ও সেঞ্চুরির সংখ্যায় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যৌথভাবে দুইয়ে আছেন তামিম।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। ৭৪ ম্যাচে ২৪.৬৫ গড় ও ১১৭.৪৭ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেছেন ১৭০১ রান।

সব সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চার (১৭৫৩টি) ও ছয় (১৮৮টি) হাঁকিয়েছেন তামিম।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

3h ago