সিরিজ হারের ধাক্কায় খোলস-বন্দি বাংলাদেশ দল

Bangladesh Cricket Team
সিরিজ হারের পর হতাশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, অধিনায়ক লিটন দাস, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

আনন্দের সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়, যন্ত্রণার সময় যেন কাটতেই চায় না।  বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন টের পাচ্ছেন সময়ের এই ভ্রান্তি। অনেকদিন ধরে ঘরের মাঠে এমন ধাক্কা খায়নি বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবালের অবসর কাণ্ড আর সিরিজ হার অনেকটা গর্তে ঢুকিয়ে দিয়েছে পুরো টিম ম্যানেজমেন্টকে।

ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশের গর্বের জায়গা ছিল চওড়া। ওয়ানডে সুপার লিগ তিনে থেকে শেষ করার তৃপ্তির ঢেকুর সুযোগ পেলেই তুলতেন ক্রিকেটার ও দল সংশ্লিষ্ট সবাই। আফগানিস্তান এবার এসে দেখিয়ে দিল ভিন্ন বাস্তবতার ছবি।

এক সিরিজ হারাতেই তারা খারাপ দল হয়ে যাননি, সিরিজ হারের পর জোর দিয়ে বলতে চাইলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। খারাপ দল হননি বটে। তবে এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপ ঘিরে স্বপ্নে বড় চোটই লেগে গেছে।

চট্টগ্রামে এখনো বাংলাদেশের একটা ওয়ানডে বাকি, সেই ম্যাচটা হোয়াইটওয়াশের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর মিশন ছাড়া কিছু নয়। নিজেদের তাতিয়ে দেওয়া, ভেতরে আগুন তৈরি করার রসদ তাতে পাওয়া মুশকিল। বরং ম্যাচটা এত দেরিতে কেন, তেমন অনুভূতিই হয়তো ভিড় করছে অনেকের মনের ভেতর। এই সিরিজ এখন যত দ্রুত শেষ হবে, ততই যেন রক্ষা।

শনিবার রাতে ১৪২ রানে বিধ্বস্ত হওয়ার পর রোববার কোন অনুশীলন রাখা হয়নি, কোন মিডিয়া এক্টিভিটিও নেই। মঙ্গলবার শেষ ম্যাচের আগে সোমবার নিজেদের ঝালিয়ে নেবেন লিটন দাসরা। তার আগে রোববার তাদের দিনটা কাটল গৃহবন্দী হয়ে। অবশ্য টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের চার ক্রিকেটারকে নিয়ে সকালে মাঠে গিয়েছিলেন, প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও  সহকারী কোচ নিক পোথাস। রনি তালুকদারদের স্পিন সামলানোর তালিম দিয়েছেন তারা।

দলের বাকিরা হোটেল থেকে বের হননি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু আছেন দলের সঙ্গে। তিনিও কথা বলতে রাজী হননি। এমনকি 'তামিম কাণ্ড' নিয়ে কোন প্রশ্ন না করার শর্তেও তার মন গলেনি। মূলত উপরমহল থেকেই জারি হয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। অনানুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভালোমন্দ জানালেও অন রেকর্ড কারোরই কথা বলার অনুমতি নেই। মাঠ ও মাঠের বাইরে নাজুক অবস্থায় থাকা বাংলাদেশ দল গণমাধ্যম যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার নীতি নিয়েছে।

জানা গেছে, তামিমের আচমকা অবসর ও নাটকীয় ফিরে আসা মিলিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দলের ভেতরেও তৈরি করেছে গুমোট ভাব। তামিমের অবসর ক্রিকেটারদের খুব প্রভাবিত না করলেও দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন তার ফিরে আসার ঘটনাপ্রবাহ অনেকেরই মনোযোগ নাড়িয়ে দিয়েছে।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শুরুর বোলিং-ফিল্ডিংয়েও সেই আভাস স্পষ্ট। ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও বলছিল ঠিক মাঠে থেকেও যেন মাঠে নেই তারা। বাংলাদেশের বোলারদের এলোমেলো শুরুই গড়ে দেয় ম্যাচের গতিপথ।

আফগানিস্তান ৩৩১ রান করার পরই যে দলের ভেতর নেতিবাচক হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছিলে তা ম্যাচ শেষে কথা বলতে এসে আড়াল করেননি মিরাজও। আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণের শক্তির কথা ভেবেই লক্ষ্য নিজেদের নাগালের বাইরে মনে হচ্ছিল তাদের।

মুখে না বললেও আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে রান করার ভীতি দূর হয়নি ব্যাটারদের। এখন তাদের পেস আক্রমণও জুতসই। কোন তরিকায় খেললে পরীক্ষা পাশ করা যাবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই আছে দোলাচল।

অথচ আফগানিস্তানকে আগামী বড় দুই আসর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে শিকার ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। স্বপ্ন দেখা হচ্ছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের। বাস্তবতা বলছে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠাও বেশ কঠিন।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের গ্রুপে আছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। সম্প্রতি দারুণ ছন্দে থাকা লঙ্কানরা ফিরে পাচ্ছে তাদের পুরনো দাপুটে দিন। এই দুই দলকে টপকে বাংলাদেশ সুপার ফোরে যাওয়ার ফেভারিট এখন আর নয়।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের ভেতর-বাহিরের হাওয়া অস্বাভাবিক। এই সিরিজ শুরুর আগের বাস্তবতার সঙ্গে বর্তমান সময় যেন বহু দূরের দেশ।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি বোঝা যাবে আরেকটি উদাহরণ দেখালে। বাকি সবাই বিধি নিষেধ দেখালেও গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার লোক নন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডে দেখতে চট্টগ্রামে এসে তাকেও দেখা গেল ভিন্ন মেজাজে। খেলা শেষের বেশ খানিকটা আগে অনেকটা নীরবে মাঠ ছেড়ে যান তিনি। রোববার মিরপুর শেরে  বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত ও বাংলাদেশ নারী দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর দিন উপস্থিত ছিলেন।

আনুষ্ঠানিকতা থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে হয়েছে। বেশিরভাগ কথা সীমাবদ্ধ রেখেছেন মেয়েদের খেলা নিয়ে। ছেলেদের সিরিজ হার নিয়ে তার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া,  'মন তো খারাপ হবেই। এটা সবারই। সারা দেশের মানুষেরই মন খারাপ।'

বাংলাদেশ দল এই বিষাদগ্রস্ত অবস্থা থেকে আগামী কদিন বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আভাস মিলছে না। শেষ ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ যদি জেতা যায় তবে হয়ত প্রলেপ লাগবে ক্ষতে। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে অস্বস্তি পুরো দূর হবে না।  

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Divisions widen over July Charter’s status, implementation

Major political parties are divided over the July Charter’s implementation timeline

11h ago