টি-টোয়েন্টি উৎসবে মেতেছে সিলেটবাসী

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এইতো গত মার্চেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল দর্শক খরা। আয়ারল্যান্ড সিরিজে স্টেডিয়ামের অধিকাংশ গ্যালারীই ছিল খালি। টিকিট নিয়ে ছিল না কোনো কাড়াকাড়ি। কিন্তু চার মাস পর পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানদের ম্যাচ দেখতে মাঠে ফিরেছেন দর্শকরা। তাতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারী।

অথচ আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ম্যাচ চলাকালীন সময়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। তার উপর আগের রাতেও হয়েছে বৃষ্টি। সকাল থেকে আকাশ মেঘে ঢাকা। ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কা তো ছিলই। কিন্তু এসব শঙ্কাতেও আটকে থাকেননি দর্শকরা। সময় গড়ানোর সঙ্গেসঙ্গে স্টেডিয়ামে প্রান্তে ভিড় জমাতে শুরু করেন সমর্থকরা। ম্যাচ শুরুর আগেই ভরে ওঠে গ্যালারী।

এদিন স্টেডিয়ামের গ্যালারী যে পূর্ণ থাকবে তার ইঙ্গিত মিলেছিল আগের দিনই। টিকিট কাউন্টারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। একটি টিকিটের জন্য হাহাকারও শোনা গিয়েছে সমর্থকদের। দুইশ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা সব ধরণের টিকিটেরই ছিল আকাশচুম্বী চাহিদা।

এদিনও টিকিট কাউন্টারে একটি টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা চালান দর্শকরা। তাদের অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। জার্সি ও পতাকা বিক্রেতাদের চাহিদাও ছিল অনেক। অনেকে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে জার্সি কিনে পরছেন। কেউবা গায়ে আঁকছেন দেশের পতাকা।

মূলত শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ ছিল স্থানীয় সমর্থকদের। তার উপর এবার আর ভর দুপুরে খেলা নেই, যেমনটা ছিল আয়ারল্যান্ড সিরিজে। ম্যাচ শুরু হতে যাচ্ছে সন্ধ্যা ৬টায়। আর প্রতিপক্ষও অনেকটাই চেনা। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবিরা বিপিএলের সুবাদে এই মাঠে খেলেছেন অনেকবারই।

সবমিলিয়ে এবার দর্শকদের আগ্রহ যেন একটু বেশি। স্থানীয় ছেলে সুমন সিলেটে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সব সিরিজেই কোনো না কোনো ম্যাচ দেখেছেন। সমর্থকদের তুমুল আগ্রহ নিয়ে বললেন, 'আয়ারল্যান্ড যখন এসেছিল তখন রোজা ছিল। তাই তেমন দর্শক হয়নি। এবার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বলে সবার একটু বেশি আগ্রহ। এছাড়া খেলাটাও শেষ বিকেলে।'

টি-টোয়েন্টিতে শক্তিশালী হলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশই জিতবে বলে আশা করছেন তিনি, 'আফগানরা ভয়ানক দল। তবে বাংলাদেশ দল কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতেও ভালো খেলছে। হয়তো ভালো লড়াই হবে। আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত জিতবে বাংলাদেশই।'

শুধু স্থানীয়রাই নয়, সিলেটের বাইরে থেকেও এসেছেন অনেকে। ভৈরব থেকে রাকিবুল হাসান জোবায়ের এসেছেন ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে, 'আগে ঢাকাতে খেলা দেখেছি অনেক। সিলেটে খুব বেশি আসা হয়নি খেলা দেখতে। এবার টি-টোয়েন্টি বলে চলে এলাম ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে।' 

হবিগঞ্জ থেকে নিজের পুরো পরিবার নিয়ে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন কামাল, 'অনেক দিন পর বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসেছি। পুরো পরিবার নিয়েই এসেছি। আসলে আমার ভাতিজিই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করি আজকে বাংলাদেশ জিতবে।'

জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ওয়াহিদ ও তার বন্ধুরা। সিলেটে অনুষ্ঠিত প্রায় সব ম্যাচই দেখেন নিয়মিত। তবে আয়ারল্যান্ড সিরিজে মাঠে থাকতে পারেননি পরীক্ষার জন্য। প্রত্যাশা করছেন এ ম্যাচে জিতবে বাংলাদেশ।

এবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে সিরিজে প্রত্যাশিত দর্শক ছিলেন না। উল্টো মাঠে যে কয়জন দর্শক ছিলেন তাদের বেশির ভাগই ছিলেন আফগানিস্তানের সমর্থক। স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা আফগানিরা চলে আসেন রশিদ-নবিদের সমর্থনে। তাদের সমর্থনে গর্জে উঠেছিল আফগানরা। জিতে নিয়েছিল সিরিজও।

তাদের মতো অনেকেই চলে এসেছেন সিলেটেও। ঢাকায় আইইউটিতে অধ্যয়নরত পাঁচ ছাত্র চলে এসেছেন খেলা দেখতে। চট্টগ্রাম থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও পাঁচ জন। এমনকি একজন এসেছেন নিউজিল্যান্ড থেকে। ওয়ানডের মতো এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজও আফগানরা জিতে নিবেন বলে বিশ্বাস করেন তারা।

তাদের একজন সাব্বির আহমেদ বললেন, 'আমরা ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি। শেষ ম্যাচটা জিততে পারিনি। রশিদ খান খেলেনি। তাকে বিশ্রাম দিয়েছিল টি-টোয়েন্টির জন্য। আমাদের আরও অনেক ভালো বোলার আছে। মুজিব আছে, ফারুকিও ভালো। আশা করছি এই সিরিজও জিতব। তবে বাংলাদেশ দুর্বল দল না। আমার বিশ্বাস ভালো লড়াই হবে। হারজিত ব্যাপার না। আমরা খেলাটা উপভোগ করব।

Comments

The Daily Star  | English

No sharp rise in crime, data shows stability: govt

The interim government today said that available data does not fully support claims of a sharp rise in crimes across Bangladesh this year

21m ago