মারুফ-আরিফুলের নৈপুণ্যে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশের যুবারা
বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধার তোপে দুইশর নিচে থামতে হলো ভারতকে। জবাবে ৩৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ল বাংলাদেশ। শঙ্কা উড়িয়ে এরপর দলকে টানলেন ডানহাতি ব্যাটার আরিফুল ইসলাম। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন বাঁহাতি ব্যাটার আহরার আমিন। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল টাইগার যুবারা।
দুবাইতে শুক্রবার আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে লো স্কোরিং ম্যাচে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪২.২ ওভারে মাত্র ১৮৮ রানে অলআউট হয় ভারতীয়রা। লক্ষ্য তাড়ায় ৪৩ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে ১৮৯ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালের টিকিট পেয়েছে তারা। এর আগে ২০১৯ সালের প্রতিযোগিতায় ভারতের কাছে হেরেই রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ।
একই সময়ে শুরু হওয়া আসরের প্রথম সেমিতে চমক দেখিয়ে জিতে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে আয়োজক সংযুক্ত আরব আমিরাত। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে তারা পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে ১১ রানে। আমিরাতের করা ১৯৩ রানের জবাবে শক্ত অবস্থান থেকে পথ হারিয়ে পাকিস্তানিরা থামে ১৮২ রানে। আগামী রোববার ফাইনালে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আমিরাত।
প্রতিপক্ষের ইনিংসের প্রথম তিনটি উইকেটই যায় মারুফের ঝুলিতে। শেষদিকে বল হাতে ফিরে আরও একবার উল্লাস করেন তিনি। সব মিলিয়ে ৪ উইকেট নিতে ১০ ওভারে তিনি দেন ৪১ রান। চারে নামা আরিফুল অল্পের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন। ৯০ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসে তিনি করেন ৯৪ রান। তার ব্যাট থেকে ৯ চারের সঙ্গে আসে ৪ ছক্কা।
ব্যাটিংয়ের শুরুতে ভারত কেঁপে ওঠে মারুফের তীব্র আঘাতে। ডানহাতি পেসার রোহানাত দৌলা বর্ষণ উইকেট শিকারে যুক্ত হলে মহাবিপর্যয়ে পড়ে তারা। এরপর মুশির খান ও মুরুগান অভিষেকের ফিফটিতে তিন অঙ্কের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা এড়ায় দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই রাখে বাংলাদেশ।
বর্ষণ ৭ ওভারে ৩৯ রানের বিনিময়ে পান ২ উইকেট। অফ স্পিনার শেখ পারভেজ জীবন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আঁটসাঁট বোলিং উপহার দেন। ৮.৪ ওভারে ২৯ রানে তার শিকার নিচের সারির ২ উইকেট। মাঝে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু পাইয়ে দেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। মুশির ও অভিষেকের ৮৪ রানের জুটি ভাঙেন বাঁহাতি বোলিং অলরাউন্ডার। বাকিটি রানআউট।
প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। টাইগার পেসারদের তোপ সামলানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না তারা। একের পর এক ব্যাটার সাজঘরে ফেরায় ১৬তম ওভারে দলীয় ৬১ রানে পতন হয় তাদের ষষ্ঠ উইকেটের।
সপ্তম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন মুশির ও অভিষেক। তাদের ব্যাটে দুইশর কাছাকাছি পর্যন্ত যেতে পারে ভারত। ছয়ে নামা মুশির ৩ চারে ৬১ বলে করেন ৫০ রান। আটে নামা অভিষেকের ব্যাট থেকে ৬ চার ও ২ ছয়ে আসে ৭৪ বলে ৬২ রান। ভারতের ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। বাই, লেগ বাই ও ওয়াইড মিলিয়ে ২০ রান পায় তারা। এছাড়া, দুই অঙ্কে যেতে পারেন দলটির আর মাত্র তিন খেলোয়াড়।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামলে পঞ্চম বলেই ওপেনার জিশান আলম বোল্ড হন। তিনি পান টানা দ্বিতীয় ডাকের তেতো স্বাদ। আগের ম্যাচে খেলেছিলেন ৪ বল, এদিন মোকাবিলা করতে পারেন স্রেফ একটি ডেলিভারি। চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান থিতু হতে পারেননি। ১৯ বলে ১৩ রানে বিদায় নিতে হয় তাকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো আরেক ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি কাটা পড়েন রানআউটে। ২২ বলে ৭ করে সাজঘরে ফেরেন চলতি আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
দশম ওভারের মধ্যে টপ অর্ডারের সবাইকে খুইয়ে চাপে পড়া দলকে জয়ের কক্ষপথে নিয়ে যান আরিফুল ও আহরার। চতুর্থ উইকেটে তারা গড়েন ১৩৮ রানের জুটি। আরিফুল সাবলীল ছন্দে ব্যাট করেন। ৬১ বলে ফিফটি স্পর্শ করার পর তিনি তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকেন। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগালেও শেষমেশ ৬ রান দূরে থামেন তিনি। তখন লক্ষ্য থেকে মাত্র ১৭ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ। রাজ লিম্বানির বলে আরিফুলের ক্যাচ নেন ভারতের অধিনায়ক উদয় স্মরণ।
শিবলির আউটের পর আরও ২ উইকেট পড়লেও পরিস্থিতি অনুকূলের বাইরে যায়নি। মোহাম্মদ শিহাব জেমস মাঠ ছাড়েন দ্রুত। সময় নিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকা আহরার করেন ৪৪ রান। ১০১ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৩ চার। বাংলাদেশের অধিনায়ক রাব্বি ১১ বলে ৩ ও জীবন ৬ বলে ২ রানে অপরাজিত থেকে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
Comments