‘খারাপ করলে তো ক্রিকেট ছেড়ে চলে যেতে পারব না’

Soumya Sarkar

২০১৫ সালের দিকে বাংলাদেশকে একা হাতে সিরিজ জেতানো সৌম্য সরকারকে নিয়ে প্রত্যাশার পারদ ছিল চড়া। কিন্তু চড়া প্রত্যাশার ভারে এক সময় বিবর্ণ হয়ে যান তিনি। দলে নিয়মিত থাকার বদলে আসা-যাওয়ার চক্রে ঘুরতে থাকে তার ক্যারিয়ার। জাতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাটে রান খরায় ধেয়ে আসে তুমুল ট্রল, সমালোচনা।  যার অনেকগুলোই প্রীতিকর নয়। আগে এসব নিয়ে ভাবলেও গত এক বছর ধরে খবর দেখা বাদ দিয়েছেন তিনি।

বুধবার নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় পাঁচ বছর পর সৌম্য পেলেন ওয়ানডে সেঞ্চুরি।  তবে এই পাঁচ বছরে তিনি সুযোগ পেয়েছেন বিচ্ছিন্নভাবে। গত চার বছরে লম্বা বিরতি দিয়ে দিয়ে ৭ ওয়ানডেতে ব্যাট করতে দেখা গেছে তাকে। সেসবে পারফর্ম না করে বাদ পড়েছেন, আবার তাকে কোন এক প্রেক্ষিতে ফিরিয়ে এনে তৈরি করা হয়েছে আলোচনা।

এবার ফেরার ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েও তুমুল রোষানলে পড়েন সমর্থক ও গণমাধ্যমের। তবে ঠিক পরের ম্যাচেই ১৫১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রানের স্মরণীয় ইনিংস এলো তার ব্যাটে। কিউইদের মাটিতে কোন এশিয়ান ব্যাটার হিসেবেও সর্বোচ্চ রান করে আলো নিজের দিকে নিয়ে নেন সৌম্য।

সৌম্য বড় রান করলেও বাকিদের ব্যর্থতায় তিনশোর নিচে থাকে দলের পুঁজি। যা নিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করা যায়নি। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে দল হারলেও ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনি।

ভালো করায় এখন স্তুতি পাচ্ছেন। তবে এই বাঁহাতি এক দিন আগেও ট্রল, সমালোচনায় বিদ্ধ ছিলেন প্রবলভাবে। তবে এসবে নজর না দিয়ে নিজের প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখার কথা জানান তিনি,  'আমি তো খেলোয়াড়, আমাকে খেলতেই হবে। ভালো খেললে হয়তোবা ভালো নিয়ে লিখবেন, খারাপ করলে খারাপ নিয়ে লিখবেন। এটা আপনাদের কাজ, আমার কাজ খেলা। ওগুলো নিয়ে ওইরকমভাবে অত ভাবা হয়নি। ভাবলে হয়তবা নিজের উপরই চাপ আসত। বা নিজের উপর নেতিবাচকতা বেশি আসত। আমি কেবল নিজের খেলার উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, আমার যে প্রক্রিয়া ছিলো সেই প্রক্রিয়ার উপর আস্থা ছিলো।'

একটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক কথাবার্তায় চোখ যেত তার, গত এক বছর ধরে সেসব আড়ালে রেখে ঠিক করেছেন ছুটে চলার পথ,  'একটা সময় হয়তবা দেখতাম। এখন সত্য কথা বলতে গত প্রায় এক বছর আমার ফোনে কোন নিউজ আসে না। আমার কোন বন্ধু ক্রিকেট নিয়ে কথা বললে আমি তার সঙ্গে থাকি না। যে ইতিবাচক কথা বলে আমি তার সঙ্গে থাকি। ভালো-খারাপ থাকবে কিন্তু খারাপ করলে তো ক্রিকেট ছেড়ে চলে যেতে পারব না যেহেতু ক্রিকেট খেলোয়াড়। ক্রিকেটের জন্যই এতদূর আসা। ক্রিকেটের জন্য পরিশ্রম করছি। ক্রিকেট নিয়েই চিন্তা করছি।'

২০১৯ সালে ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান ছিলো সৌম্যের।  ২০১৯ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৯ রান করার পর তিনি ওয়ানডেতে সুযোগ পান ২০২১ সালে। ওই বছর  ৬ ম্যাচে একাদশে থেকে ব্যাটিং পান চার ম্যাচে। ৭, ০, ৩২ ও ১ করার পর আরও দুই বছর বাইরে চলে যেতে হয়।  চলতি বছর সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচে একাদশে থেকে এক ম্যাচে ব্যাটিং পেয়ে শূন্য রানে আউট হন, এরপর বাদ পড়েন। এই  ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে আবার দলে ফিরে একাদশেও জায়গা পান। প্রথম ম্যাচে কোন রান না করে আউট হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে করলেন ১৬৯ রান।

মাঝের এই সময়টায় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে  সৌম্যর ব্যাটিং পজিশনও ছিলো এলোমেলো। ৭, ৩, ৪ ও ১ - আলাদা এই চার পজিশনে খেলানো হয়েছে তাকে।

একসময়ের ঝলমলে ক্যারিয়ারে অন্ধকার নেমে যাওয়া, ফের খাদের কিনার থেকে আলোর দেখা। সৌম্যের মতে খেলোয়াড়দের খারাপ সময়টা প্রবল, তবে তার মাঝেও ভালো সময়ের কথা ভেবে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে চান তিনি,  'ক্রিকেট খেলোয়াড় প্রত্যেক দিন ভালো খেলবে না। আপনি যেমন একটা মানুষ প্রত্যেকদিন ভালো খাবার প্রত্যাশা করেন না। আমরাও খেলোয়াড়রা প্রত্যেক দিন ভালো প্রত্যাশা করি না। আমরা ক্রিকেটাররা হাসার থেকে বেশি কাঁদি (কান্না করি)। আমরা যখনই খেলি একটা দুইটা ম্যাচ ভালো খেললে বাকিটা খারাপই যায়। এটা নিয়ে পড়ে থাকি তাহলে নিজেরাই পিছিয়ে যাব। পজিটিভ যেগুলো আছে সেগুলো নিয়েই চিন্তা করা হয় বেশি। কীভাবে সামনে আরও ভালো করা যায় সেইভাবেই ফোকাস করা হয় বা চিন্তা করা হয়। এরমধ্যে কতটুকু পারফেক্ট করার চেষ্টা করি, সেটা নিয়েই এগুতে চাই আমরা।'

সৌম্যের এবারের চ্যালেঞ্জ ধারাবাহিকতা ফেরানো। যদি সেটা করতে পারেন অর্জনের হাতছানি আছে আরও। পরের তিন ইনিংসের মধ্যে ৬৩ রান করলেই দেশের হয়ে দ্রুততম দুই হাজার রানের রেকর্ডও গড়তে পারেন। সৌম্যের কাছে স্রেফ এটুকু নয়, বাংলাদেশ দল নিশ্চতভাবেই চাইবে ডাকাবুকো পারফরম্যান্স। সেই চেনা দাপট।

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

7h ago