‘আমরা সম্মানটা চাই, যেটা ছেলেরা সব খেলাধুলাতে পায়’

বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আগামী নিয়ে নিজের ভাবনা, আকুতি রেখেছেন ভালো উইকেটে খেলার।

২০২৩ সালে বাংলাদেশের নারী দল পেয়েছে বেশ কিছু সাফল্য। ঘরের মাঠে ভারত ও পাকিস্তানকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েও জয় পেয়েছে তারা। পালাবদল পেরিয়ে দলকে একটা ভালো জায়গায় এনে সফল নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন আগামী নিয়ে নিজের ভাবনা, আকুতি রেখেছেন ভালো উইকেটে খেলার।

দ্য ডেইলি স্টার: যদি বলি ২০২৩ সালটা একটু পর্যালোচনা করে দেখেন...

নিগার সুলতানা জ্যোতি: ২০২৩ সালটা নারী ক্রিকেটের জন্য অনেক তাৎপর্যপূর্ণ গিয়েছে। আমরা নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছি, এটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ফলও এসেছে। ব্যক্তিগত কিছু নৈপুণ্যও ছিল। ২০২৩ সালটা বলব নারী ক্রিকেটের জন্য প্রাপ্তির জায়গা। আমরা যা ক্রিকেট খেলেছি, যদি পর্যালোচনা করি, তাহলে সেক্ষেত্রে বলব, আমাদের অন্যতম সেরা বছর। ভালো ক্রিকেট খেলেছি এবং খেলার পরিমাণটাও বেশি ছিল।

দ্য ডেইলি স্টার: নতুন বছরে প্রত্যাশা কী থাকবে?

জ্যোতি: ২০২৩ সালটা যেভাবে গিয়েছে, আমি বলতে পারব না যে, ২০২৪ সালটা সেভাবেই কাটাব। নির্ভর করছে পদক্ষেপের উপর, আমরা কোনভাবে পদক্ষেপ নেব। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমাদের (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপ আছে এই বছরে। তারপরে সবচেয়ে বড় কথা, এই বছর যা খেলা আছে সব দেশে, দেশের বাইরে কোনো খেলা নেই। নিজেদের কন্ডিশনে তো ভালো করার ইচ্ছা সবারই আছে। প্রত্যেকবারই প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে আমরা কী করতে যাব। কাজেই প্রস্তুতি যদি ঠিক থাকে, যেমন মার্চের শেষে অস্ট্রেলিয়া আসবে, তাদের বিপক্ষে খেলার আগে ভালো প্রস্তুতি (যদি) নিতে পারি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আমরা কখনো খেলিনি। প্রথমবারের মতন খেলব, সেখানেও চমক দেখাতে পারি। সেই সামর্থ্য আমাদের ভেতর আছে। মেয়েরা সবাই এখন বিশ্বাস করে, আমরা যদি দল হিসেবে খেলতে পারি, তাহলে যেকোনো কিছু সম্ভব। যেটা (আত্মবিশ্বাস) হয়তো একটা সময় আমাদের এতটা শক্ত ছিল না, যার কারণে আমরা দলগতভাবে ফল পাচ্ছিলাম না। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ছিল, বছরের পর বছর খেলোয়াড়রা ব্যক্তিগতভাবে পারফর্ম করলেও দলীয়ভাবে ফুটে উঠছিল না। আমার কাছে মনে হয়, ২০২৪ সাল আমাদের জন্য বড় কিছু নিয়ে আসবে। কিছু অর্জন করতে পারব। ২০২৩ সালের ধারাবাহিকতা রাখলে ২০২৪ সালে আমাদের জন্য বড় সুযোগ দাঁড়িয়ে আছে।

দ্য ডেইলি স্টার: ভারতকে হারালেন ঘরের মাঠে, ওই জায়গা থেকেও কি অস্ট্রেলিয়াকে হারানো বিশ্বাস পান?

জ্যোতি: অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। তারা ভারতে টেস্ট হারলেও ওয়ানডেতে কিন্তু জিতেছে। সব থেকে ভালো দিক হচ্ছে, প্রত্যেকটা ম্যাচ হাইস্কোরিং ছিল। ভারতও ভালো করেছে। অস্ট্রেলিয়া সফল রান তাড়া করেছে, আবার ভারত লক্ষ্য তাড়া করতে যেয়ে অল্প রানে হেরেছে। সব মিলিয়ে ভালো ক্রিকেট হয়েছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কন্ডিশনে শক্ত। তবু আমি চাইব, খুব ভালো উইকেটে যেন খেলা হয়। বোলাররাও উপকৃত হয়, আমরাও যেন ভালো রান করতে পারি। দেখুন, সবাই আমাদের দেশে খেলার আগে চিন্তা করে যে, বাংলাদেশ তাদের নিজেদের কন্ডিশনে শক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যেভাবে খেলে আসছি, আমাদেরকে তারা হালকাভাবে নিবে না। আমরা দলীয়ভাবে নির্দিষ্ট দিনে ভালো করতে পারি, পরিকল্পনা কাজে লাগালে ভালো ক্রিকেট খেলব অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। জিতব নাকি হারব জানি না। আমি বিশ্বাস করি, ভালো খেলাটা (জরুরি)। কারণ, আমরা ১০০ রান করে ওদের ৮০ রানে অলআউট করে ম্যাচ জিতলাম, এতে করে আমাদের ক্রিকেটের কিন্তু কোনো উন্নতি হলো না। আমার কথা হলো, দুই পক্ষের যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট হয়। তারাও যেন অনুভব করে আমরা (র‍্যাঙ্কিংয়ের) সাত নম্বর দল হয়েও ওদের কঠিন সময় দিয়েছি।

দ্য ডেইলি স্টার: দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কী শিখলেন?

জ্যোতি: আমি প্রথমত বলব, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগে কখনো (কোনো ম্যাচ) জিততে পারিনি। এটা একটা বিশাল অর্জন যে এবার জিতলাম। তবে একই সঙ্গে দুটো (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) সিরিজেও আমাদের সুযোগ ছিল আরও কিছু অর্জন করার, সিরিজ জেতার। এদিক থেকে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেমন খেললাম, প্রথম ওয়ানডেতে যেমন খেললাম, আমাদের সব থেকে সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পেরেছি। আড়াইশ রান করা ওয়ানডেতে, আবার টি-টোয়েন্টিতে দেড়শ রান করা, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে (বড় ব্যাপার)। কারণ, ওরা ওদের কন্ডিশনে খুব শক্তিশালী। আফসোসের পরিমাণ এখন একটু বেশি, কিছুদিন আগেও সেটা ছিল না। এর আগে কখনোই কিছু নিয়ে আসতে পারিনি, শূন্য ছিল হাত। এবার কিছু নিয়ে এসেছি। তবে আরও কিছুর সুযোগ ছিল। ওয়ানডে সংস্করণ আমরা ভালো খেলি, আরেকটু ভালো খেললে আরও বড় অর্জন নিয়ে আসতে পারতাম। তবুও বলব এখন আমরা ম্যাচ জেতা শিখেছি। তবে নিয়মিত ম্যাচ জেতা এবং (সিরিজের) ফল নির্ধারণী ম্যাচগুলোতে স্নায়ুচাপ ধরে রেখে জয় বের করা আনা, এগুলো আমাদের শিখতে হবে। সেটা বাংলাদেশের মাটিতে না কেবল, বাংলাদেশের বাইরেও।

দ্য ডেইলি স্টার: ব্যাটারদের ঘাটতি ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় আপনারা রান পেলেন। ফারজানা হক সেঞ্চুরি করলেন। কিন্তু ঘরের মাঠ ব্যাটারদের ভুগতে দেখা যায়...

জ্যোতি: আপনি ক্রিকেটের সঙ্গে আছেন, ক্রিকেট দেখছেন। আপনি জানেন যে, কতটা কঠিন হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোতে স্ট্রাইক রেট ভালো রেখে ব্যাট করা। এটা আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না (হাসি)। আমরা যখন একটা ভালো উইকেট পাই, তখন খেলা অন্যরকম হয়ে যায়। এশিয়ার উইকেটে স্পিন নির্ভর থাকে, অনেক কিছু ভেবে খেলতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখুন ভালো বাউন্স আছে, গতি আছে, ট্রু উইকেট। আমি এটায় অজুহাত দেব না, আবার এটা সবচেয়ে বড় অজুহাতও হতে পারে (ব্যাটারদের ঘরের মাঠে রান না করা)। আপনি যদি ছেলেদের দলের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট দেখেন এশিয়াতে এবং এশিয়ার বাইরে তাহলে বুঝবেন (পার্থক্য)। ভারতে এখন ভালো উইকেট হয়। কিন্তু বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কায় একশ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে (ব্যাট) করাও কঠিন হয়ে যায়। ছেলেদেরই কঠিন হয়। আমাদের তো বটেই। কারণ, আমরা এত পাওয়ার শট খেলি না। এটা একট বড় একটা পয়েন্ট যে, কেন আমাদের ব্যাটিংয়ের উন্নতি হচ্ছে না। আমরা কিন্তু ব্যাটিং নিয়েই কাজ করছি। তবু সংগ্রাম করছি। কেন সংগ্রাম করছি, এটার পেছনের দিকটা কিন্তু বুঝতে হবে। আর স্পিনাররা কেন ভালো করছে (সেটাও বুঝতে হবে)। দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু এতটা স্পিন ধরে না, সেখানে তারা এত প্রভাব ফেলেনি। আমরা কিন্তু দেশিই বেশি খেলি। আমাদের স্ট্রাইক রেটে তাই এসবের প্রভাব আছে। আমি নিজেই যখন দেখি, আমার কেন এই অবস্থা!

সবাই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসার পর অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। (ফারজানা) পিংকি আপু ওয়ানডেতে সব সময় ভালো খেলে। মুর্শিদা (খাতুন) ভালো অবস্থায় আছে। শামীমা (সুলতানা) আপু নিয়মিত রান করছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে আমরা শীর্ষ চার ব্যাটারই রান করেছি, উন্নতি হচ্ছে। (কোচ) হাসান (তিলকরত্নে) স্যার কিন্তু ব্যাটারদের নিয়েই কাজ করছেন। উনি এসে পরিসংখ্যান বের করে দেখেছেন, আমাদের বোলাররা (প্রতিপক্ষকে) এত কম রানে আটকে দেওয়ার পরও কেন ম্যাচ জিততে পারছিলাম না। আমরা এসব উইকেটেও ভালো রান করার উপায় খুঁজে বের করছি। কিন্তু আরেকটু ভালো উইকেট পেলে ভালো হয়।

দ্য ডেইলি স্টার: তাহলে আপনার মতে, ঘরের মাঠের কন্ডিশন ব্যাট করার জন্য কঠিন কন্ডিশন না? আপনার চাওয়া, এখানেও যেন ব্যাটাররা রান করতে পারে?

জ্যোতি: অবশ্যই, অবশ্যই। দেখুন, ক্রিকেট এখন ওই জায়গায় নাই। ক্রিকেট এখন রানের খেলা। আপনার যদি তিনশ রান করার অভ্যাস না থাকে, তাহলে বড় মঞ্চে যেয়ে কীভাবে তিনশ রান করবেন। কী হয়, আমরা টি-টোয়েন্টিতে এখন রান করি ১৪০ সর্বোচ্চ বা ১৩০। এমনও হয়েছে যে, ১১০ রান করলেও ম্যাচ জিতে যাই। এরকম হচ্ছে। আইসিসি ইভেন্টে তো তা হয় না, দেড়শ রান করতেই হয়। না হলে বোলারদের কী জবাব দেবেন? আইসিসি ইভেন্টে দুইটা বিভাগই গুরুত্ব পায়। দেখুন, ভারতে কত স্পোটিং উইকেট তৈরি করছে। এজন্য তারা রান করছে, ওয়ানডেতে নিয়মিত আড়াইশর বেশি রান করছে। টি-টোয়েন্টিতে ১৭০, ১৮০ রান করছে কেন? কারণ, ব্যাটিং নির্ভর পিচ থাকে। ব্যাটাররা রান করে। ব্যাটাররা যখন রান করে, তখন মানুষও আগ্রহ পায়। আমরা যদি রান না করি, তাহলে মানুষ কি খেলা দেখতে আসবে? আমরা কেন ১০০ বা ৮০ রানে অলআউট হয়ে যাই? সমস্যাটা কী এটা তো বুঝতে হবে।

দ্য ডেইলি স্টার: নাহিদা আক্তারের পারফরম্যান্স নিয়ে যদি বলেন...

জ্যোতি: আমি আর নাহিদা একসঙ্গে দলে ঢুকেছি ২০১৫ সালে। আমরা বন্ধুর মতো, খুব ঘনিষ্ঠ। ওর সঙ্গে বেশি সময় কাটে। ওর পরিপক্বতা বেশি দেখা যাচ্ছে ২০২১ সালের পর থেকে। এর আগে সে অর্ডিনারি বল করত। এখন অসাধারণ বল করে। ও এত পরিপক্ব হয়েছে, প্রত্যেকটা পরিস্থিতি বোঝে এবং খেলাটা ও জানে। ও দলের জন্য অবিচ্ছেদ্য হয়ে গেছে। ওর আরও বেশি কিছু প্রাপ্য। দেখছেন যে, ও আইসিসি মাস সেরা হয়েছে বা ক্রিকইনফোর বছরের সেরা দলে আছে। যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হচ্ছে, আমি চাই ও ওসব জায়গায় খেলুক। কারণ, বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতন একজন বোলার হয়ে গেছে ও। সে দুর্দান্ত ফিল্ডার। আমি ওকে এখনই অলরাউন্ডারের খেতাব দিব না, দিলে চাপ হবে। ব্যাটিংটা ওর বোনাস। ও ব্যাট করতে পছন্দ করে। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমি ওকে  চার-পাঁচ ওভারের স্পেলেও ওয়ানডেতে ব্যবহার করি, সেও ডেলিভার করে।

দ্য ডেইলি স্টার: নারী দলে একটা পালাবদল হয়েছে। সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ, জাহানারা আলমদের জায়গা নতুনরা নিয়ে নিয়েছে। এটা কতটা ইতিবাচক?

জ্যোতি: সব সময় ম্যানেজমেন্টের কথা হয়। একটা কথাই বলতাম, দলের যদি উন্নতি করতে হয়, তাহলে পাইপলাইন শক্ত করতে হবে। একজন আরেকজনকে পুশ করলে ভালো খেলার স্পৃহা বেড়ে যাবে। আজ আমি খেলছি, কাল নাও থাকতে পারি। কখন কী হয়, কেউ বলতে পারে না। সেক্ষেত্রে বিকল্প থাকলে তাগাদা তৈরি হয়, পারফরম্যান্স বেরিয়ে আসে। যদি এমন হয় যে, আমার বিকল্প নেই, আমিই সেরা, তখন পারফরম্যান্স আসে না। এছাড়া, যেভাবে ক্রিকেট বাড়ছে, সেভাবে একটা ভালো সংখ্যক খেলোয়াড় আপনাকে বেঞ্চে রাখতে হবে। কারণ, সবাইকে টানা খেলাতে পারবেন না।মানুষের শরীর এত খেলা নিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ব্যাকআপ রাখতে হয়।

আমরা ছেলেদের দলেও দেখেছি ইনজুরি হয় অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য। খেলোয়াড়দের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেও পাইপলাইনে প্রচুর খেলোয়াড় দরকার। সেক্ষেত্রে আমরা খুব ভাগ্যবান, আমরা খুব ভালো কিছু তরুণ খেলোয়াড় পেয়েছি। যেমন- মারুফা (আক্তার) আছে, রাবেয়া (খাতুন) আছে, স্বর্ণা (আক্তার) আছে। নতুন একটা খেলোয়াড় ঢুকেছে সুমাইয়া (আক্তার)। এদের যদি ভালোভাবে পদপ্রদর্শন করতে পারি, তাহলে দীর্ঘদিন দেশকে সার্ভিস দিতে পারবে।

দ্য ডেইলি স্টার: একজন ব্যাটার হিসেবে ২০২৪ সালে আপনার চাওয়া কী?

জ্যোতি: ২০২৩ সালে আমি একদম বিশ্রী খেলেছি, একদম সন্তুষ্ট না। আমার দল আমার কাছে যা চেয়েছিল সেটাও আমি করতে পারিনি। কিছু ম্যাচে করেছি, কিছু ম্যাচে করিনি। ব্যাটার হিসেবে আপনি যদি ধারাবাহিক না থাকেন, তাহলে আপনার দ্বারা দলের কোনো সুবিধা হবে না। এই দিক থেকে ২০২৩ সাল আমার ফ্লপ গেছে। এটা মানতে হবে। আমি একটা ম্যাচে করেছি রান, পরে আরও দুই ম্যাচে করিনি। এতে করে দল সুবিধা পেল না। আমি কাজ করছি, আরও কঠোর পরিশ্রম করব। আমি জানি, সবাই আমাকে অনেক ভরসা করে, ২০২৪ সালে ভালো করতে চাই। আমি দাঁড়িয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাস পায় সবাই। আমি রান করতে চাই, ধারাবাহিকভাবে করতে চাই। আমি যদি এটা করি, তাহলে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যায় দলের। আমাকে কম্পিউটার এনালিস্টও বলেছেন, আমি যখন রান করি, তখন দল জেতে। কাজেই আমি বুঝতে পারছি এর গুরুত্ব।

দ্য ডেইলি স্টার: তবু আপনি গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন...

জ্যোতি: তবু আমি সন্তুষ্ট না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা ম্যাচে ৭৫ রান করলাম। তারপরের ম্যাচগুলোতে ৩০ বা এরকম করলাম। আরেকটা ইনিংস যদি বড় করতাম, তাহলে দল উপকৃত হতো। ২০২৪ সালে ব্যাটার হিসেবে নিজেকে ধারাবাহিক দেখতে চাই।

দ্য ডেইলি স্টার: ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীরা কতটা তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা নিচ্ছে সব মিলিয়ে?

জ্যোতি: এটা ভালো প্রশ্ন। দেখুন, আমি যেটা অনুভব করি, এখন আগের অবস্থায় নাই। আগে আমি মনে করতাম যে, নারীদের খেলা নিয়ে এত মাতামাতি নাই। কিন্তু আপনি দেখবেন যে, মেয়েদের ফুটবলে আগ্রহ এটা বিশাল ব্যাপার। মেয়েরা ফুটবলেও খুব ভালো, আমি ফুটবলের খবরই রাখি। বাকি খেলাধুলাতেও বাংলাদেশের মেয়েরা নিশ্চিতভাবে এগোচ্ছে। আর্চারি বলেন, শ্যুটিং বলেন। দেশের বাইরে তো পুরুষদের খেলা যতটা গুরুত্ব পায়, মেয়েদের খেলাকেও তারা ততটাই গুরুত্ব দেয়। মেয়েদের খেলাধুলাতে ওই মূল্যটা তারা দেয়। বর্তমানে একই তালে চলছি কিনা জানি না, কিন্তু অবস্থাটা অনেক ভালো হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টার: কিছু দেশ বেতন-ভাতাও সমান করেছে...

জ্যোতি: এটা কিছু জায়গায় হয়েছে। সব জায়গায় হয়নি। ভারতে দেখবেন সুবিধার দিক থেকে সব খেলায় ছেলে-মেয়েদের প্রায় সমান সমান সবকিছু, আর্থিক সুবিধা থেকে শুরু করে। বাংলাদেশে এটা হবে কিনা আমি জানি না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু চিন্তা-ভাবনারও সমস্যা আছে, মানে মানসিকতার। তবু আশা রাখতে সমস্যা কী (বাংলাদেশে সমতার), মেয়েদেরকেও যদি একই প্রাধান্য দেওয়া হয় খেলাধুলায়। মেয়েরা যেভাবে সুনাম বয়ে আনছে দেশের, বড় বড় পদক আনছে, আমাদের যেন সুবিধা, আর্থিক সুবিধা থাকে।

সম্মান… সবচেয়ে বড় কথা সম্মান। আমরা টাকাও চাই না। আমরা মেয়েরা কিন্তু অনেক কোমল হৃদয়ের। আমরা সম্মানটা চাই। গুরুত্ব দেওয়াটা চাই। দেখতে চাই, আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সম্মানটা মেয়েরা আশা করে, যেটা ছেলেরা সব খেলাধুলাতে পায়। সেটা যদি সমান সমান হতে পারে, তাহলে দেখবেন বিশ্বের নারীরা খেলাধুলায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে।

দ্য ডেইলি স্টার: অধিনায়ক হিসেবে নিজের মূল্যায়ন যদি করতে হয়...

জ্যোতি: আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি দলের কারণে। দল যদি আমাকে ভরসা না করত, অবশ্যই আমি এই জায়গায় আসতাম না। সব কৃতিত্ব দলের সদস্য ও ম্যানেজমেন্টের। তারা আমাকে ভরসা করে, মাঠ ও মাঠের বাইরে। আমি সব সময় বলি, একটা দলের পরিবেশ ভালো রাখতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ড্রেসিংরুম সুন্দর রাখা। আমার সব সময় চেষ্টা থাকে ড্রেসিংরুমটাকে নিরপেক্ষ ও স্বাস্থ্যকর রাখা। আমি সব সময় চিন্তা করি, ড্রেসিংরুমে সবাই যখন একসঙ্গে থাকব, সেখানে যেই মুড নিয়ে মাঠে যাব, সেটাতে কাজ হয়। এটা মেনে চলার চেষ্টা করি।

আমি ভাগ্যবান আল্লাহ পাক আমাকে এই প্রশংসার দোরগোড়ায় এনেছেন, আমি প্রশংসা পাচ্ছি। আমি চেষ্টা করি সৎ থাকার জন্য। আমি চাই সবাই একই সুযোগ পাক। দেখা যায়, অনেক সময় অনেকে গা বাঁচানোর জন্য অনেক কিছু করতে চায়। আমি একদম তা না। সোজাসাপ্টা কথা বলি, বকা দেওয়ার সময় বকাও দেই, সিনিয়রদেরও ছাড়ি না। পরে ড্রেসিংরুমে এসে নরমালও হয়ে যাই। সবাই আমার কথাগুলো ইতিবাচকভাবে নেয়। আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কেউ দ্বিধা তৈরি করে না। সবাই, সবাই সমর্থন করে। আমি এদিক থেকে সতীর্থদের কাছে কৃতজ্ঞ।

দ্য ডেইলি স্টার: আর দল নিয়ে স্বপ্ন?

জ্যোতি: দল নিয়ে স্বপ্নের তো আসলে শেষ নাই। আমরা এখন আইসিসি চক্রে আছি (ওয়ানডে সুপার লিগ)। প্রত্যেকটা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। পয়েন্টগুলো খুবই, খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য। কারণ, আমরা চাই না ২০২৫ সালে যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে, সেখানে যেতে বাছাইপর্ব খেলতে। সরাসরি যেতে চাই। এখন র‍্যাঙ্কিংয়ের সাতে আছি, ছয়ে আসতে চাই। যতটা নিরাপদ থাকা যায়। তিনটি সিরিজ আমরা খেলব অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তিনটা সিরিজে আমাদের পূর্ণ আটটা পয়েন্ট লাগবে। অস্ট্রেলিয়া হোক বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাদের সঙ্গে জিতে যেন আটটা পয়েন্ট নিতে পারি এবং সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারি। এটা সবার সম্মিলিত স্বপ্ন। আমরা জানি, বাছাইপর্ব কতটা চাপের হয়। এটাতে একদম আমরা যেতে চাই না।

আর যেহেতু বাংলাদেশে বিশ্বকাপ, আমাদের ঘরের দর্শকরা থাকবে, আমাদের অভিভাবকরা থাকবে, বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের জন্য বড় সুযোগ। যদি আমরা এখানে ভালো করতে পারি, তাহলে আরও বেশি ফোকাস পাবে। মানুষের আগ্রহ বাড়বে, আমাদের সম্মান বাড়বে বিশ্ব ক্রিকেটে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো খেলা লক্ষ্য। আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচ জিততে পারিনি কিছু আসরে। ম্যাচ জেতা তো অবশ্যই লক্ষ্য।

Comments