জোড়া সুপার ওভারের সুপার রোমাঞ্চে জিতল ভারত

রোহিত শর্মার রেকর্ডময় সেঞ্চুরির সঙ্গে রিঙ্কু সিংয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বিশাল পুঁজিই পেয়েছিল ভারত। কিন্তু রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহীম জাদরান ও গুলবাদিন নাইবের ব্যাটে সেই পুঁজি ছুঁয়ে ফেলে আফগানিস্তান। তাতে সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি। কিন্তু সুপার ওভারেও দুই দল সমান রান তোলে। তাতে আরেক দফা সুপার খেলতে হয় তাদের। এই দফায় আর পেরে ওঠেনি আফগানিস্তান। রোমাঞ্চকর এক জয়ে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেই ছাড়ে ভারত।

বুধবার বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আফগানিস্তানকে সুপার ওভারে হারিয়েছে ভারত। মূল ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১২ রান করে স্বাগতিক দলটি। জবাবে নিজেদের ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১২ রান করে আফগানিস্তানও। এরপর প্রথম সুপার ওভারে দুই দলই করে ১৬ রান। দ্বিতীয় সুপার ওভারে ভারত ১২ রানের লক্ষ্য দিলে তিন বলেই দুই উইকেট হারিয়ে হার মানতে বাধ্য হয় আফগানরা।

মূল ম্যাচে নায়ক রোহিত শর্মা ও পার্শ্বনায়ক রিঙ্কু সিং হলেও সুপার ওভারে সব আলো কেড়ে নেন লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুই। তার করা সুপার ওভারে মাত্র ৩ বল খেলতে পারে আফগানিস্তান। তাতে ১ রান নিয়ে হারিয়ে ফেলে দুই উইকেট। মোহাম্মদ নবি ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ দুইজনই লংঅফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। এর আগে রোহিত শর্মার একটি করে চার ছক্কায় ১১ রান করেছিল ভারত। এর আগে প্রথম সুপার ওভারেও দারুণ ব্যাট করেন রোহিত। সেখানে দুটি ছক্কা মেরেছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় ১৬ রানের বেশি করতে পারেনি তারা।

তবে মূল ম্যাচে রোহিত শর্মার সঙ্গে অসাধারণ খেলেছেন রিঙ্কু সিং। অধিনায়ক রোহিতের সঙ্গে ১৯০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন তিনি। যা যে কোনো উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগের রেকর্ড ছিল ২০২২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দিপক হুদা ও সাঞ্জু স্যামসনের গড়া ১৭৬ রানের জুটি। আর পঞ্চম উইকেটে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নতুন বিশ্বরেকর্ড। গত বছর হংকংয়ের বিপক্ষে ১৪৫ রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েছিলেন নেপালের দিপেন্দ্র আইরে ও কুশল মাল্লা।

ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১২১ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক রোহিত। মাত্র ৬৯ বলে ১১টি চার ও ৮টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। তাতে নতুন এক রেকর্ড গড়েন এই ওপেনার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৫টি সেঞ্চুরির মালিক বনে যান তিনি। এছাড়া ভারতের ব্যাটারদের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ ইনিংসও এটা। অধিনায়ক হিসেবেও বিরাট কোহলির করা ১৫৭০ রানকে ছাড়িয়ে যান রোহিত।

একই সঙ্গে রিঙ্কু সিংকে সঙ্গে নিয়ে করিম জানাতের করা শেষ ওভারে ৩৬ রান তুলে নেন রোহিত শর্মা। এক ওভারে একাধিক ব্যাটার ব্যাট করে এটাই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তবে এক ওভারে ৩৬ রান নেওয়ার ঘটনা আছে আরও দুটি। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ৩৬ রান নেন ভারতের যুবরাজ সিং। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার আকিলা ধনাঞ্জয়ার এক ওভারে ৩৬ নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড।

দলীয় রানেও নতুন একটি রেকর্ড হয়েছে। ২৫ রানের কমে চার উইকেট হারানোর পর এর আগে কোনো দলই দুইশ রান করতে পারেনি। প্রথম সারির দল তো অনেক কম। ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ রানে চার উইকেট হারানোর পর ৬ উইকেটে ১৮৮ রান তুলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

অথচ এদিন শুরুটা ভয়ঙ্কর ছিল ভারতের। দলীয় ২২ রানেই ফিরে যান ভারতের চার ব্যাটার। চলতি সিরিজে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পেয়ে আগুন ঝরানো বোলিং করেন ফরিদ আহমেদ। তার তোপে দলীয় ১৮ রানেই ভাঙে ওপেনিং জুটি। যশস্বী জসওয়ালকে মোহাম্মদ নবির ক্যাচে পরিণত করার পরের বলে বিরাট কোহলিকেও তুলে নেন তিনি। এরপর শিবাম দুবেকে ফেরান আজমতউল্লাহ ওমরজাই। পরের ওভারে ফিরে সাঞ্জু স্যামসনকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের বিপদে ফেলে দেন ফরিদ।

আফগান বোলারদের গল্প এইটুকুই। এরপর রিঙ্কুর সঙ্গে কিছুটা ধীর গতিতেই ইনিংস মেরামত করতে থাকেন রোহিত। ফলে পাওয়ার প্লেতে আসে মাত্র ৩০ রান। ১০ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ৬১ রান। এরপর ক্রমেই হাত খুলতে থাকেন এই দুই ব্যাটার। শেষ ১০ ওভারে ১৫১ রান যোগ করেন তারা। তাতেই লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় দলটি। ৩৯ বলে ২টি চার ও ৬টি ছক্কায় অপরাজিত ৬৯ রান করেন রিঙ্কু।

লক্ষ্য তাড়ায় আফগানদের সূচনাটা ছিল দুর্দান্ত। ইব্রাহীম জাদরানের সঙ্গে ৯৩ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে আউট হন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। এরপর ১৪ রানের ব্যবধানে এ দুই সেট ব্যাটার সহ আজমতউল্লাহ ওমরজাইও আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে আফগানরা। তবে মোহাম্মদ নবির সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন গুলবাদিন নাইব। এরপর নবি আউট হলে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলের জয়ের পথেই নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রানের। প্রথম চার বলে একটি চার ও ছক্কায় ১৪ রান করেন গুলবাদিন। শেষ দুই বলে তখন দরকার ৫ রানের। পঞ্চম বলে নেন ২ রান। শেষ বলে ৩ রান প্রয়োজন হলে ২ রানের বেশি করতে পারেননি। ফলে সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি। ২৩ বলে সমান ৪টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৫৫ রান করেন গুলবাদিন। গুরবাজ ও ইব্রাহীম দুই জনই করেন ৫০ রান করে। ১৬ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় করেন ৩৪ রান।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

5h ago