‘দেশীয় স্টাইলে চলবে’ বিপিএল
বিপিএলের ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন নাম দুরন্ত নাকি দুর্দান্ত ঢাকা এই নিয়ে দ্বিধা হচ্ছে অনেকের। নামটা আসলে দুর্দান্ত ঢাকা। তবে অনেকেই সেটাকে ভুল করে দুরন্ত ডেকে ফেলছেন। এমনকি বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর ঘোষণার আয়োজনে কর্তৃপক্ষের কেউ কেউও সেই ভুলটি করে ফেললেন। এক্ষেত্রে অবশ্য কাউকে দোষ না যাচ্ছে না। প্রতি বছরই যদি কোন দলের নাম বদল হয় মনে রাখা তো কঠিন। প্রতি আসরে নতুন নতুন নামের ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকলেও দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ইভেন্টে সেভাবে নতুনত্ব কিছু থাকে না, শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দশম আসরেও থাকছে নতুন মোড়কে পুরনো পণ্যই।
২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া বিপিএলে প্রতিবছরই আলোচনা হচ্ছে মৌলিক কয়েকটি অসঙ্গতি নিয়ে। এসব জায়গায় নেই কোন বদল। অংশ নেওয়া দলগুলোর অপ্রস্তুত অবস্থা নিয়মিত দৃশ্য। এবারও টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র দুদিন আগে জানা গেছে অংশ নেওয়া সবগুলো দলের অধিনায়কের নাম।
টুর্নামেন্টের মাঝপথে এক বা একাধিক দলের নেতৃত্বে বদল আসাও আগের আসরগুলোর নিয়মিত ছবি, এবারও তেমনটি হলে অবাক হওয়ার থাকবে না কিছুই।
যে দু'একটি দল কিছুটা পেশাদার আদলে চলে তারা হতাশ-বিরক্ত আয়োজকদের উপর। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল টুর্নামেন্টের আগে গণমাধ্যমে বলেছেন, রাজস্বের ভাগ না দিলে পরের বার থেকে তারা আর বিপিএলে থাকবেন না। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকেও পাওয়া গেছে একই দাবি।
তবে তাতে কান দেওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করেনি বিসিবি। বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলে এসেছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে রাজস্ব ভাগ করার বাস্তবতাই বাংলাদেশে নেই।
এবার টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পন্সর ঠিক হয়েছে শেষ সময়ে এসে। নির্দিষ্ট একটা টাইটেল স্পন্সর লম্বা সময় না থাকায় টুর্নামেন্টের ব্র্যান্ডও দাঁড়াচ্ছে না। টিভি সত্ত্ব থেকে আয়ের দিক থেকে পাকিস্তান সুপার লিগ-পিএসএলের অনেক নিচে বিপিএল। অথচ বিপিএল শুরু হয় পিএসএলেরও আগে। মল্লিক অবশ্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের অজুহাত দিয়েছেন এবার, 'সারা বিশ্বেই একটা অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলছে। আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বাদ দিলে (কেউ ভালো নেই)।'
আইপিএলের সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি হয় অবিশ্বাস্য মূল্যে। যার ধারেকাছে কেউ নেই। তবে পেশাদারিত্বে বিপিএলকে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে পিএসএল। গত বছর বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াইশো কোটিতে টেলিভিশন সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি করেছে তারা। বিপিএল এখান থেকে অনেকটাই দূরে।
বছরের নির্দিষ্ট সময় বিপিএল শুরুর দিন তারিখ আগে থেকে ঠিক না থাকায় ভুগতে হয় অংশ নেওয়া দলগুলোকে। বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রাপ্তি হয়ে দাঁড়ায় কঠিন। বিশ্বজুড়ে একই সময়ে অনেকগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর চলতে থাকায় কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে আয়োজকদের।
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দল পরিচালনা করায় তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি হচ্ছে বেশ মজবুত। এমন প্রস্তাব বিপিএলেও ছিলো। তবে মল্লিক জানান, তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে চান না বলে এতে রাজী হননি এতে, বিপিএল চালাতে চান দেশিয় ঘরানায়, 'তারা অনেকবারই আমাদের অ্যাপ্রোচ করেছিল। বোর্ডের সিদ্ধান্ত এরকমই যে আমাদের টুর্নামেন্টটাকে আমাদের দেশীয় স্টাইলেই চালাতে চাই। আমরা এরকম কোনো কিছু করতে চাই না যে টুর্নামেন্টের রাইটসটা আমাদের হাতে থাকবে না। অন্য কারও কাছে রাইটসটা চলে যাবে।'
এছাড়া বেটিং সাইটের সারোগেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নৈতিক কারণে নেন না বলেও বিপিএলের আয় নিয়ে ভুগতে হয় বলে জানান এই বিসিবি পরিচালক।
মাঠের খেলা
শুক্রবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-দুর্দান্ত ঢাকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বিপিএল। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলবে সিলেট স্ট্রাইকার্স-চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। টুর্নামেন্টে সাত দলের মধ্যে আরও আছে ফরচুন বরিশাল, রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইগার্স।
মাঠের বাইরে অনেক ইস্যু আলোচনার জায়গা কেড়ে নিলেও টুর্নামেন্ট শুরু হলে মাঠে নজর চলে আসবে নিশ্চিত। তবে প্রস্তুতি ঘাটতিতে আদর্শ সমন্বয় দলগুলো কত দ্রুত খুঁজে নিতে পারে সেসব দেখার বিষয়। মাঠের খেলাকে প্রভাবিত করতে পারে উইকেটও। বিপিএলে বরাবরই আলোচিত হয়ে আসছে মিরপুরের বাইশগজ। যেহেতু বেশিরভাগ ম্যাচই হয় মিরপুরে। এখানকার উইকেটের মন্থরতা টি-টোয়েন্টির জন্য নয় আদর্শ। এখানে বড় রানের দেখা পাওয়া হয় কঠিন। যদিও গত আসরে তুলনামূলক ভালো উইকেট ছিলো মিরপুরে।
এবারও ভালো উইকেট পেতে আয়োজকদের তৎপরতা দেখা গেছে। যাতে বড় রান হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে কিউরেটরদের। তবে ভালো উইকেটের ক্ষেত্রে আবহাওয়াও একটা বড় প্রভাব রাখতে পারে। শৈত্য প্রবাহে কুয়াশায় ঢাকা দিন থাকলে বড় রানের আশা করা হবে বাড়াবাড়ি। সেই শঙ্কা বৃহস্পতিবার জানান ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, 'দেখেন উইকেট ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে আবহাওয়া একটা ফ্যাক্ট। আজ যেমন রোদ আছে এমন থাকলে ভাল হবে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হলে মিরপুরে রান করা কঠিন।'
এবার নতুন যা
এবার বিপিএলে কিছু জায়গায় ইতিবাচক উন্নতি দেখার আভাস মিলেছে। গত বছর ডিসিশন রিভিউ সিষ্টেম (ডিআরএস) শুরু থেকে ছিলো না। এবার শুরু থেকে পুরো আসরে আছে ডিআরএস। সম্প্রচারে নতুনত্ব আনতে স্পাইডার ক্যামেরা ও ব্যাগি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে প্রথমবার। ধারাভাষ্যের মান বাড়াতে রমিজ রাজা, রাসেল আর্নল্ডদের মতন প্রতিষ্ঠিত নামদের আনা হয়েছে। প্রথমবারে মতন বিপিএলের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন মৌলিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যা হালনাগাদও করা হবে।
ম্যাচ শুরুর সময়
বিপিএলের উদ্বোধনী দিনে খেলা শুরু হবে আড়াইটায়, দ্বিতীয় ম্যাচ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। এর বাইরে অন্য সব শুক্রবার দুপুর ২টা ও সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে খেলা। শুক্রবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে দুপুর দেড়টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাখা হয়েছে ম্যাচ।
Comments