শেষ উইকেট না পড়া পর্যন্ত বোলিংয়ের আকুতি জানিয়েছিলেন শামার
আগের দিন বল করতে পারেননি, এদিনও পারবেন বলে মনে হয়নি। কিন্তু পায়ের আঙুলের তীব্র ব্যথাকে তুচ্ছ করে শামার জোসেফ যা করলেন তা উপমা দিয়ে বোঝানো দুষ্কর। একটানা ১২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাইয়ে দিলেন স্মরণীয় জয়। ম্যাচের পর ২৪ বছর বয়সী পেসার বললেন, শেষ উইকেটের পতন না হওয়ার পর্যন্ত বল করতে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।
রোববার ব্রিসবেনে চতুর্থ দিনে শামার যখন আক্রমণে যান, তখন অজিদের ইনিংসের ২৮ ওভার শেষ। শুরুটা হয়নি ভালো, প্রথম ওভারেই হজম করেন দুটি চার। তবে দমে যাননি তিনি। পরের ওভারেই টানা দুই ডেলিভারিতে সাজঘরে পাঠান ক্যামেরন গ্রিন ও ট্রাভিস হেডকে। শারীরিক যন্ত্রণা ছাপিয়ে গতির ঝড় তোলার পাশাপাশি বাড়তি বাউন্সে নাজেহাল করেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। একে একে শামারের শিকার হন মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি, মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। সবশেষে জশ হ্যাজেলউডকে বোল্ড করে অজিদের অলআউট করে দেন ভোঁ দৌড়। ৮ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সমতা টানে ক্যারিবিয়ানরা।
এতে শেষ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘ অপেক্ষা। ১৯৯৭ সালের পর প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতল তারা, সব মিলিয়ে ২০০৩ সালের পর প্রথম। এই দুর্দান্ত ফলের পেছনে মূল কারিগর ম্যাচ ও সিরিজসেরার পুরস্কার জেতা শামার। গত কয়েক সপ্তাহে তার জীবনে এসেছে নাটকীয় পালাবদল। দেড় বছর আগেও তিনি ছিলেন সাধারণ একজন নৈশ প্রহরী।
তৃতীয় দিন স্টার্কের ইয়র্কার ছোবল দিয়েছিল শামারের পায়ের আঙুলের অগ্রভাগে। ভীষণ ব্যথায় তিনি রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন ফিজিও ও সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে। তাই এদিন তার মাঠে নামা নিয়ে ছিল জোরালো সংশয়। তবে সতীর্থদের অনুপ্রেরণায় শামার ছিলেন আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর। দলকে জেতানোর পর বলেন, 'কেবল ইতিবাচক থাকতে চেয়েছিলাম। এটুকুই। আমার সতীর্থরা বলেছিল, "মাঠে যাও আর এটা করে ফেলো— উইকেট নাও।" এটা কেবল আমাদের সবার ইতিবাচক থাকার ব্যাপার ছিল। আমি তেমন ক্লান্ত নই কারণ দলের জন্য আমি এটা করতে চেয়েছিলাম। আমি আমার অধিনায়ককে (ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট) বলেছিলাম যে শেষ উইকেট না পড়া পর্যন্ত আমি বল করে যেতে চাই।'
বিশাল প্রাপ্তিতে আঙুলের ব্যথা ভুলে গেছেন তিনি, 'আমার পায়ের আঙুলের কী অবস্থা সেটা কোনো ব্যাপার না। আমি ঠিক আছি। আমি তার (ব্র্যাথওয়েট) জন্যই এটা করেছি এবং খুশি যে তাকে গর্বিত করতে পেরেছি।'
অ্যাডিলেডে আগের টেস্টে অভিষেক হয়েছিল শামারের। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জেতাতে পারেননি। সেই দুঃখ ভুলে পরম আনন্দে ভাসছেন শামার। সিরিজ জেতার খুশি অনুভব হচ্ছে তার, 'আমার মনে হয়েছে, আমরা সিরিজ জিতে নিয়েছি। ফলটা ১-১ হলেও মনে হচ্ছে যে আমরা গোটা সিরিজ জিতেছি। আমার সতীর্থদের জন্য দারুণ লাগছে। তারা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ী এবং আমি আনন্দিত যে তাদেরকে গর্বিত করতে পেরেছি এবং সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা টানতে পেরেছি।'
Comments