গায়ের রঙের কারণে হয়তো জাকেরকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য সালাউদ্দিনের

বিপিএলে চাহিদা মেটানো ব্যাটিং করেও জাকের আলি অনিকের সুযোগ না পাওয়ায় নির্বাচকদের সমালোচনা করেছেন তিনি।
Jaker Ali Anik
৪০ রানের ইনিংসের পথে জাকের আলি অনিক, ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াড দেখে বেশ হতাশ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। স্কোয়াডে ওপেনারদের আধিক্য থাকলেও মিডল অর্ডার ব্যাটার স্রেফ দুজন। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে বিপিএলে চাহিদা মেটানো ব্যাটিং করেও জাকের আলি অনিকের সুযোগ না পাওয়ায় নির্বাচকদের সমালোচনা করেছেন তিনি। এমনকি তাকে দলে না নেওয়ার পেছনে বর্ণবাদী কারণ থাকতে পারে বলে গুরুতর প্রশ্ন রেখেছেন এই কোচ। 

বিপিএলের পর পরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শুরু হবে টি-টোয়েন্টিতে দিয়ে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের স্কোয়াড মঙ্গলবার। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি দলে থেকে একজন ওপেনার বাদ দেওয়া হলেও নতুন করে নেওয়া হয় এনামুল হক বিজয় ও নাঈম শেখকে। তারা দুজনেই ওপেনার। লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত নিয়মিত ওপেন করে থাকেন।

সব মিলিয়ে চার ওপেনারের সঙ্গে মিডল অর্ডারের জন্য আছেন তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জায়গায় জাকেরকে সুযোগ দেওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করেন সালাউদ্দিন।

বুধবার চট্টগ্রামে খুলনা টাইগার্সকে ৭ উইকেটে হারায় কুমিল্লা। খুলনার ১৬৪ রান তারা ২১ বল আগেই পেরিয়ে যায়।  রান তাড়ায় একটা পর্যায়ে শঙ্কায় পড়েছিল কুমিল্লা। ৪৪ রানে ২ ও ৮৪ রানে পড়ে ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে হৃদয়-জাকের ৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ শেষ করে দেন। ম্যাচ সেরা হৃদয় ৪৭ বলে করেন ৯১। পরিস্থিতিতির দাবি মিটিয়ে জালের ৩১ বলে অপরাজিত থাকেন ৪০ রানে। খুলনার বিপক্ষে আরেক ম্যাচে তিনি স্লগ ওভারের চাহিদায় নেমে করেছিলেন ৮ বলে ১৮।

সংবাদ সম্মেলনে এসে এক প্রশ্নের জবাবে নিজ থেকে জাকেরে প্রসঙ্গ টানেন সালাউদ্দিন, সেখানে বর্ণবাদী কারণ উল্লেখ্য করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি, 'জাকেরের কথাটা সবসময় আপনারা হয়ত ভুলে যান কেউ জিজ্ঞেস করেন না। ছেলেটা একটু কালো যে কারণে আমার মনে হয় বোর্ডও তাকে দেখে না ঠিকমত। দেশের জন্য আপনারা সাত নাম্বারে প্লেয়ার খোঁজেন। সে গত কয়েক বছরে খুবই ভালো খেলছে। তার স্ট্রাইকরেট যদি দেখেন সে প্রতিটা দিনই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রানটা করে দিয়ে আসে। সে অনেক সেন্সিবল। আমার মনে হয় এই ছেলেটাকে সুযোগ দেওয়া উচিত।'

'আমার মনে হয় এই পজিশনের জন্য সে বাংলাদেশে ওয়ান অব দ্যা বেস্ট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরে আমার কাছে মনে হয় এই ছেলেটা সে বেস্ট। প্রতিদিন সে আমাদের দলকে বাঁচায়ে নিয়ে আসতেছে। সে যথেষ্ট সেন্সিবল। পেসও ভালো খেলে, স্পিনও ভালো খেলে। চারিদিকে মারতে পারে। তার রেকর্ডও ভালো।'

বিপিএলে এবার ৯ ম্যাচে ৭ ইনিংস ব্যাটিং পেয়ে ১৩৪ স্ট্রাইকরেট আর ৬৭ গড়ে ১৩৪ রান করেন জাকের। গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পেলেও ম্যাচ খেলা হয়নি (আন্তর্জাতিক তিনটা টি-টোয়েন্টি তার এশিয়ান গেমসে), পরে বাদ পড়েন। প্রথম শ্রেণীতে সেবার সর্বোচ্চ রান করেও জাকের ডাক পাননি টেস্ট দলে।

শ্রীলঙ্কা সিরিজের টি-টোয়েন্টি দল দিয়ে বিদায় নিচ্ছে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কমিটি। বিদায়ী এই কমিটির কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সালাউদ্দিন,  'আমি গতকাল বাংলাদেশ দল দেখলাম। পাঁচটা ওপেনার (আসলে চার), মিডল অর্ডারে মনে হয় দুইজন। সবাই মিডল অর্ডারে খেলবে। সঠিক জায়গায় সঠিক প্লেয়ার রাখা মনে হয় জরুরি। আগের ম্যাচেও জাকের জায়গামত রানটা করে দিয়ে আসছে। যেভাবে দল থেকে খেলতে বলা হয় সেভাবে খেলতে পারে। খারাপ সময়ে দলের হয়ে ভালো জুটিতে খেলতে পেরেছে স্ট্রাইকরেট দেখেন ১৩০। এ ধরনের ছেলেকে যদি আমরা সুযোগ না দেই!'

স্কোয়াডে বেশি ওপেনারদের সুযোগ দেওয়ায় দেশে মিডল অর্ডার ব্যাটারের সংকট হচ্ছে বলেও মত সালাউদ্দিনের,  'শ্রীলঙ্কাতে 'এ' টিম পাঠাল (গত বছর),  ৮টা ওপেনার পাঠায়ে দিল। মিডল অর্ডারে কে খেলবে? আমরা মিডল অর্ডারে প্লেয়ার পাই না কারণ কোনো ছেলে মিডল অর্ডারে খেলতে চায় না।'

'ওপেনাররা রান করে ১০০০ রান করে আমরা খেলায়ে দেই। ৬-৭ নাম্বারের প্লেয়াররা হয়ত ৩০০ রান করে। সে ত ১০০০ রান করবে না, সে হয়ত ৩০০ রান করবে। কিন্তু তার ৩০০ রান কিন্তু অনেক মূল্যবান। এই ৩০০ রানের উপর নির্ভর করবে দল হারবে না জিতবে। এ ধরনের ছেলেদের যদি আমরা অনুপ্রেরণা না দেই তাহলে তারা খেলতে চাইবে না। ৬-৭ নাম্বারে কোনো দেশি প্লেয়ার নাই। এদের যদি আমরা না গড়ে তুলি তাহলে আমাদের ওপেনার নিয়েই খেলতে হবে। টি-টোয়েন্টি খেলব পাঁচটা ওপেনার নিয়েই খেলব।'

Comments