সাকিবদের বিদায় করে ফাইনালে তামিম-মুশফিকের বরিশাল

২০২২ সালের পর আবারও বিপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি কুমিল্লা ও বরিশাল
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দলীয় ৭৭ রানে সাত উইকেট হারিয়ে যখন একশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রংপুর রাইডার্স, তখন এক প্রান্তে ঝড় তুলে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি এনে দেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি। সেই পুঁজি নিয়ে বোলিংয়েও শুরুটা ভালো করে তারা। এরপর দারুণ প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহিম। ভালো সঙ্গ পান কাইল মেয়ার্স ও ডেভিড মিলারের। তাতে রংপুরকে দর্শক বানিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে ফরচুন বরিশাল। 

বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে ফরচুন বরিশাল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৯ রান করে রংপুর। জবাবে ৯ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে বরিশাল।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠল ফরচুন বরিশাল। এর আগে ২০২২ সালে ফাইনালে উঠেছিল দলটি। সেবারও ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচে মাত্র ১ রানে জিতেছিল কুমিল্লা। একই মাঠে এবার সেই প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার মাঠে নামবে বরিশাল।

এর আগে গ্রুপে পর্বের দুই লড়াইয়ে একটি করে জয় পেয়েছিল বরিশাল ও রংপুর। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল দলটি। মিরপুরে সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতেছিল জিতেছিল বরিশাল। এরপর চট্টগ্রামে হয় ফিরতি লেগের ম্যাচ। সেই ম্যাচে দারুণ লড়াই হয় দুই দলের মধ্যে। ১ উইকেটে জয় পায় রংপুর। তবে নকআউট পর্বে এসে আবার জয় পেল বরিশাল।

তবে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো করতে পারেনি বরিশাল। দলীয় ২১ রানেই ভাঙে ওপেনিং জুটি। লংঅফে মোহাম্মদ নবিকে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৮ বলে ১০ রান করে অধিনায়ক। এরপর স্কোরবোর্ডে এক রান যোগ হতে আউট হন ওপেনিংয়ে নামা মেহেদী হাসান মিরাজও। আবু হায়দারের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে ১৪ বলে ৮ রান করেন এই অলরাউন্ডার।

দলীয় ২২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর সৌম্য সরকারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। ৪৭ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক চাপ সামলে নেন এ দুই ব্যাটার। সৌম্যকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নবি। তাকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন এও আফগান অলরাউন্ডার। ১৮ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ রান করেন সৌম্য।

এরপর কাইল মেয়ার্সের সঙ্গে ৫০ রানের আরও একটি দারুণ জুটি গড়েন মুশফিক। যেখানে মাত্র ১৫ বলে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এই ক্যারিবিয়ান। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজান ইনিংস। মেয়ার্সকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন ফজলহক ফারুকি। তবে এর আগেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় দলটি। অবিচ্ছিন্ন ৩৩ রানের জুটি গড়ে বাকি কাজ ডেভিড মিলারকে নিয়ে শেষ করেন মুশফিক।

শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ৩৮ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় এই রান করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মিলারের ইনিংসটি যেন সৌম্যর ইনিংসের পুনরাবৃত্তি। ১৮ বলে ১১ রান করেছেন তিনিও। তিনিও ২টি চার ও ১টি ছক্কা মেরেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন এই প্রোটিয়া তারকা।

তবে এবারের আসরে ওপেনিং জুটি নিয়ে বেশ ভুগেছে রংপুর। এদিন রনি তালুকদারের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন শেখ মেহেদী হাসান। তবে সুবিধা করে উঠতে পারেননি। সাইফউদ্দিনের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ফিরেছেন ব্যক্তিগত ২ রানে। হতাশ করেন সাকিব আল হাসানও। সে ওভারের শেষ বলে তাকে ফেরান সাইফউদ্দিন। শেখ মেহেদীর মতো তিনিও ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে।

ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ব্যক্তিগত ৮ রানে কাইল মেয়ার্সের শিকার হন রনি তালুকদারও। ফলে পাওয়ার প্লেতেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। এরপর নিকোলাস পুরানকে নিয়ে হাল ধরেন জেমস নিশাম। ৩০ রানের জুটিও গড়েন। যেখানে মাত্র ৩ রান করেন পুরান। এরপর লংঅফে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই ক্যারিবিয়ান। পরের বলে নিশামও আউট হলে বড় চাপে পড়ে যায় রংপুর। জেমস ফুলারের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে। ২২ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ২৮ রান করেন নিশাম।

এরপর মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। স্কোরবোর্ডে ২৮ রান যোগ করার পর তিন বলের ব্যবধানে ফিরে যান এ দুই ব্যাটার। এ দুই ব্যাটারকেই ছাঁটাই করেন ফুলার। নবিকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করার পর সোহানকে বোল্ড করে দেন এই পেসার। তখন মনে হয়েছিল একশ রান করাও কঠিন হয়ে যাবে দলটির।

তবে এরপর আবু হায়দার রনিকে নিয়ে শামিমের দুর্দান্ত এক জুটিতে একশ তো পার করেছেনই, চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় রংপুর। মাত্র ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন থেকে স্কোরবোর্ডে ৭২ রান যোগ করেন তারা। যেখানে মাত্র ২২ বলে ৫৮ রান করেন শামিম। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে সমান ৫টি করে চার ও ছক্কায় হার না মানা ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। ৯ বলে কার্যকরী ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন আবু হায়দার।

বরিশালের পক্ষে চার ওভার বল করে ২৫ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন ফুলার। চার ওভার বল করে ২৭ রানের বিনিময়ে সাইফউদ্দিন নেন ২টি উইকেট।

Comments