১৯ বছর পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্রিকেটীয় কার্যক্রম, নাহিদ-তানজিম দৌড়ে প্রথম
২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শেষবার যখন কোন ক্রিকেটীয় কার্যক্রম হয়, পেসার নাহিদ রানা তখন স্রেফ ৩ বছরের শিশু। ঐতিহাসিক মাঠটিতে তিনি তাই ঢুকলেন প্রথমবার। নাহিদের কথা শুরতেই বলার কারণ বিসিবির ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স অ্যাসেসমেন্টের রানিং প্রতিযোগিতায় এই তরুণ এক গ্রুপে হয়েছেন সেরা। দারুণ ফিটনেস দেখিয়ে তালি পেয়েছেন সবার।
২০০৫ সালের পর মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামই ক্রিকেটের 'হোম'। এরপর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টসহ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আর কখনই ক্রিকেটারদের পেশাদার কোন কাজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের সবারই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে ২০০৫ সালের পর, তাদের সেই মাঠে খেলার কথা নয়। তবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা ছিলো মাহমুদউল্লাহর।
অবশ্যএদিন স্বাভাবিকভাবে ব্যাটে-বলের কোন কার্যক্রম ছিল না এই মাঠে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে ক্রিকেটারদের রানিং রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেইলি। দুই ভাগে ভাগ হয়ে ১৬'শ মিটার দৌড়েছন নাজমুল হোসেন শান্তরা। সবার মধ্যে সেরা হয়েছেন দুই পেসার।
এক গ্রুপে প্রথম হয়েছেন নাহিদ রানা, আরেক গ্রুপে সবার আগে দৌড় শেষ করেন তানজিম হাসান সাকিব। বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার সিনিয়র ৩৮ পেরুনো মাহমুদউল্লাহ স্বাভাবিকভাবে দৌড় শেষ করেছেন সবার শেষে।
আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের ফিটনেস ক্যাম্প করার পরিকল্পনা করে বিসিবি। মূলত চলতি বছর সব সংস্করণে ঠাসা সূচির কথা বিবেচনা করে খেলোয়াড়দের ফিটনেসের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী ৭ মাসে বাংলাদেশ দল খেলবে ৮ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে এবং অন্তত ১৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। অন্তত যেকোনো এক সংস্করণে বিবেচিত হতে পারেন এমন ৩৫ ক্রিকেটার ছিলেন এই সেশনে। নিয়মিত ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলে থাকায় মোস্তাফিজুর রহমান, চোট থেকে ফেরার পথে থাকায় সৌম্য সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় ছিলেন না সাকিব আল হাসান। এছাড়াও তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলামকেও দেখা যায়নি গত সপ্তাহে পেশির টান পাওয়ার কারণে।
ফিটনেশ সেশনে শেষে ট্রেনার ইফতেখার ইসলাম ইফতি গণমাধ্যমে বলেছেন খেলোয়াড়দের সামগ্রিক ফিটনেসের অবস্থা বুঝতে চেয়েছেন তারা, 'এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝলাম খেলোয়াড়দের অবস্থাটা কেমন। এটার মধ্যে পাশ-ফেলের কিছু নেই। ডিপিএল গিয়েছে, বিপিএল গিয়েছে। এরপরে ওদের ফিটনেসের অবস্থা কি সেটা জানার জন্য (এই উদ্যোগ)। এটা জানার পর খেলোয়াড়দের কাকে কি অনুশীলন করাতে হবে এটা খুঁজে বের করব। ওদের জানিয়ে দেব, ওভাবে আমরা প্রয়োগ করব।'
রানিং করার জন্য কেন অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক ব্যবহার করার কারণও ব্যাখ্যা করেন ইফতি, 'অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক বেছে নেওয়া আসলে টাইমিংয়ের একটা বিষয় আছে। আমরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণ করি তাহলে বেশ কিছু টেস্টিং মেথড আছে, আমরা আজ ১৬শ মিটার টাইম ট্রায়াল নিলাম। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে যদি নেই আমরা তাহলে প্রপার টাইমিংটা...কারণ ওইভাবেই ক্যালকুলেট করা হয়। এটা ওদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। সব মিলিয়ে ভালো।'
'আমরা ১৬শ মিটার নিয়েছি তাদের কার্ডিও ভাস্কুলার সিষ্টেম কীভাবে কাজ করে, ওদের ক্যাপাসিটি কেমন। স্পিন্ট টেস্ট নিলাম বুঝতে তারা কত দ্রুত এটা দেখতে। ৪০ মিটার স্প্রিন্ট যেটা ছিলো প্রথম ২০ মিটাকে কে কতটুকু গতিময়। সাধারণত এক-দুই মিটারের জন্য একটা রান আউট হয় বা এক-দুই সেন্টিমিটারের জন্য আমরা একটা চার বাঁচাতে পারি না। স্প্রিন্টিং দেখলাম কীভাবে আরও গতিময় করা যায়। আর ১৬শ মিটারে দেখলাম মাঠে থাকার ক্যাপাসিটিটা কতটুকু।'
খেলোয়াড়দের ফিটনেসে সন্তুষ্ট ট্রেনাররা। তবে আরও উন্নতির জায়গা দেখছেন তারা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রানিং সেশনের পর খেলোয়াড়রা ফিরেছেন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। সেখানে জিম সেশন আছে তাদের।
ক্রিকেটারদের এই বিশেষ সেশনে উপস্থিত ছিলন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার ও সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্রিকেট জীবন শুরু করা নাফীস করেন স্মৃতি রোমন্থন, 'আমাদের খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া, খেলা দেখে শেখা সব এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই। এখনো মনে আছে খুব সম্ভবত ১৯৯৩ বা ১৯৯৪ সালে প্রথম এই মাঠে এসেছিলাম খেলা দেখতে। কাজিনরা যেহেতু খেলতেন, ফারুক ভাই (ফারুক আহমেদ) জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। পাশাপাশি আইকনিক যত খেলোয়াড়রা ছিলেন তাদের দেখে খেলা শুরু। আমার বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা এখানে শুরু। আমার প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটা আন্ডার নাইনটিতে একটা অনুশীলন ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে, সেটা এই মাঠে। জাতীয় দলে আমি এখানে কোন খেলা পাইনি, এটা আমার একটা আক্ষেপ। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণ মানেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এখানে আসলে আপনার ভালো না লেগে ফেরার কোন সুযোগই নাই।'
Comments