চট্টগ্রামে বাজে আউটফিল্ডে ক্রিকেটারদের ইনজুরি ঝুঁকি 

Zahur Ahmed Chowdhury Stadium
আউটফিল্ডে ঘাস সবুজ ঘাস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ঘাস মরে গেছে, বেরিয়ে এসেছে লাল মাটি। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সবুজের আভা যেন খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু আগের দিন দেখা গেল এমন বেহাল দশা। যাতে ক্রিকেটারদের চোটের শঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাঠকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত পানির সংকটে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাঠ তো বটেই, প্রবল তাপ প্রবাহের দিনে পানির তীব্র সংকটে জেরবার দশা ওই এলাকার বাসিন্দাদেরও।  

স্টেডিয়ামের ঠিক পেছনে বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী কাট্টলি এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে মিঠা পানির সংকট প্রবল। চট্টগ্রাম ওয়াসা পর্যাপ্ত পানির সাপ্লাই দিতে পারছে না, বলছেন স্থানীয়রা। মাঠের সবুজের উপরও তার প্রভাব পড়েছে। 

মাঠ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, আউটফিল্ডের ঘাস সতেজ রাখতে প্রতিদিন ৪ লক্ষ লিটার পানির প্রয়োজন হয় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। কিন্তু এক সপ্তাহেও নাকি এই পরিমাণ পানি পাওয়া যায় না। পানি দিতে না পারায় এবং টানা খরতাপে ঘাস মরে ধূসর হয়ে গেছে। মাঠের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন কিছু ঘাস আছে বটে। তবে তা যেন আরও বিসদৃশ তৈরি করছে।  

এমন বিবর্ণ মাঠেই শুক্রবার থেকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। আউটফিল্ডে ঘাস কম থাকায় ফিল্ডারদের আহত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। অনেক জায়গাতেই ডাইভ দেওয়া হবে একটু কঠিন। মার্চের ১৮ তারিখ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাউন্ডারি বাঁচাতে এই আউটফিল্ডে ছিটকে পড়ে হাঁটুতে চোট পান সৌম্য সরকার। যে চোটে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলা হয়নি তার, এই সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেও নেই তিনি।  অথচ এই মাঠেই বিশ্বকাপ প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে  তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। 

তবে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের বেহাল আউটফিল্ডে পানি সরবরাহ কম থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন কেবল স্টেডিয়ামের জন্যই একটি বিশেষ লাইন করে রেখেছেন তারা। চাওয়া মাত্রই সরবরাহ করা হয় পানি,  'ওখানে আসলে এক্সপ্রেস পানির লাইন করা আছে। এক্সপ্রেস ওয়াটার লাইন দিয়ে উনাদের আমরা পানি দিয়ে থাকি। উনারা যখনই চান, তখনই পানি দেই উনাদেরকে। আমরা নিয়মিত একটা লাইন তো আছেই, নির্দিষ্ট সময়ে পানি যায়। তবে যখন বলে যে আরও পানি লাগবে তখনই আবার দেই।' 

চট্টগ্রামের ওই অঞ্চলে সার্বিকভাবে পানির সংকট যে আছে তা অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি। তবে অন্য জায়গার বরাদ্দ বাতিল করে হলেও মাঠে পানি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি,   'এমনিতে পানির সংকট আছে, গ্রীষ্মের কারণে পানির লেভেল নিচে চলে যাওয়াতে (সমস্যা হচ্ছে)। তারপরও ওটাকে প্রায়োরিটি করে এক্সপ্রেস ওয়াটার লাইন করা আছে। আমরা অন্য জায়গা বাতিল করেও উনাদেরকে পানি দেই, উনাদের পানি আমরা কম দেই না। নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আমার সহকারীকে শুধু উনাদের জন্য নিয়োজিত করা রাখা আছে। '

বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আব্দুল বাতেনও ওয়াসার পুরোপুরি দায় দিচ্ছেন না, 'এখানে আলাদাভাবে ওয়াসার কিছু করার নেই। প্রত্যেকটা স্টেডিয়ামে আলাদা ডিপ টিউবওয়েল থাকে। চট্টগ্রামে আমাদের সেই টিউবওয়েলের পানি লবণাক্ত। এটার কারণেই আসলে সমস্যাটা হচ্ছে। এছাড়া অনেকদিন ধরে বৃষ্টি হয় না। তবে বিষয়টা সমাধানে আমরা কাজ করছি। আশা করছি একটা সমাধান বের হবে।'

চট্টগ্রামের সাগরপাড়ের এই এলাকার পানি নিয়ে আসা হয় অনেক দূরের হালদা নদী থেকে। সেই নদীতেও পানির সংকট চলছে। 

পৃথিবীর কিছু আধুনিক মাঠে পানি পরিশোধন প্লান্ট বসানো আছে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ও আইসিসি সেন্টারেও তেমন প্লান্ট দিয়ে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করা হয়। যা ব্যবহার করা হয় ঘাসে। এরকম প্লান্ট বসালে মিলতে পারে স্থায়ী সমাধান। তবে খরচসাপেক্ষ সেই প্লান্ট বসানোর এখতিয়ার মাঠের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। আপাতত তাই চট্টগ্রামের মাঠে শ্রী বৃদ্ধি বা সবুজ ফেরানোর স্থায়ী সমাধান কতদিনে হতে পারে বলা মুশকিল। 

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

8h ago