ফিটনেস, পারফম্যান্সের চিন্তায় আটকে আছে বিশ্বকাপ দল

১ মে বিশ্বকাপ স্কোয়াড দেওয়ার শেষ তারিখ হলেও ২৫ মে পর্যন্ত কোন কারণ ছাড়াই ইচ্ছামতন বদল আনা যাবে। আইসিসিতে একটা দল জমা দিলেও তাই এখনি ঘোষণা করার বাধ্যকতা নাই। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ- এই তিন টেস্ট খেলুড়ে দেশ নিচ্ছে এই সুবিধা। যেহেতু সুযোগ আছে জিম্বাবুয়ে সিরিজ পুরোটা দেখা হবে।
Soumya sarkar and Gazi Ashraf Lipu

এমনিতে ম্যাচের পরদিন অনুশীলন রাখার রীতি নেই বাংলাদেশ দলের। জিম্বাবুয়ে সিরিজে একদিন বিরতি দিয়ে একেকটা ম্যাচ। কাজেই অনুশীলনে তেমন সুযোগও নেই। শুক্রবার রাতে ম্যাচ শেষ করে শনিবার স্বাভাবিকভাবে পুরোপুরি বিশ্রাম পেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। প্রথম তিন ম্যাচের স্কোয়াডের কেউ এদিন টিম হোটেলের বাইরেই কেউ বের হননি।

ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প ও পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামের বিশ্রাম ছিলো না। স্কোয়াডের বাইরের সদস্য সৌম্য সরকারকে নিয়ে মাঠে ছুটতে হয়েছে তাদের। সৌম্য প্রথম তিন ম্যাচের স্কোয়াডে না থাকলেও এই মুহূর্তে তিনিই আবার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচকরা বিশ্বকাপ দল ঘোষণা তার ফিট হওয়া নিয়েই অপেক্ষায়। তাকে দলের রাখার তীব্রতাও টের পাওয়া যায় প্রবলভবে।

শনিবার দুপুরে মাঠে আসেন সৌম্য। শুরুতে রানিং করেন বেশ খানিকটা সময় নিয়ে। পরে অ্যাডামসের তদারকিতে মিডিয়াম পেস বোলিং করেন। বিশ্বকাপ দলে অলরাউন্ডার সৌম্যকেই যে চান কোচ-অধিনায়ক।  শেষে নেটে থ্রো ডাউন ও নেট বোলারদের নিয়ে পার করেন লম্বা সময়। সৌম্যর বোলিংয়ের তদারকি করেছেন অ্যাডামস, ব্যাটিংয়ে হেম্প। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটেও নিজেকে ঝালাই করেছেন বাঁহাতি ওপেনার। তার উপর যেন নজর গোটা টিম ম্যানেজমেন্টেরই। 

ঢাকায় শেষ দুই ম্যাচে যে সৌম্য খেলছেন তা এক রকম নিশ্চিত। তেমন আভাসই পরে গণমাধ্যমকে দেন হেম্প,  'এরকমই পরিকল্পনা, সে (সৌম্য) পাঁচ ম্যাচ সিরিজের কোন এক ধাপে খেলবে। এই মুহূর্তে সে পুনর্বাসনে আছে।'

সৌম্যর শারীরিক ফিটনেস এখন বেশ ভালোই। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে চার বাঁচাতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। সেই চোট থেকে মুক্তি মিলেছে, এখন আর কোন ব্যথাও অনুভব করছেন না। তবে ম্যাচ ফিটনেসের বিষয় একদম আলাদা। কতটা তীব্রতা নিতে পারেন তিনি সেটা নির্ভর করছে ম্যাচ খেলার উপর।

প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের একটা দল চূড়ান্ত করা আছেই। সেটাই থাকতে পারে আবার ফিটনেস বা পারফরম্যান্সে এক-দুটি বদল হতেও পারে।' নাম না দিলেও ফিটনেস ইস্যুতে যে সৌম্যের জন্যই অপেক্ষা তা অনেকটা পরিষ্কার।

১ মে বিশ্বকাপ স্কোয়াড দেওয়ার শেষ তারিখ হলেও ২৫ মে পর্যন্ত কোন কারণ ছাড়াই ইচ্ছামতন বদল আনা যাবে। আইসিসিতে একটা দল জমা দিলেও তাই এখনি ঘোষণা করার বাধ্যকতা নাই। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ- এই তিন টেস্ট খেলুড়ে দেশ নিচ্ছে এই সুবিধা। যেহেতু সুযোগ আছে জিম্বাবুয়ে সিরিজ পুরোটা দেখা হবে।

সৌম্য ছাড়াও উদ্বেগের জায়গা আরও আছে। তার একটি লিটন দাসের ফর্ম। এমনিতে লিটনকে নিয়ে ম্যানেজমেন্টের বেশিরভাগেরই কোন সংশয় নেই। তিনিই প্রথম পছন্দের ওপেনার। তবে ওয়ানডের ছন্দহীনতা টি-টোয়েন্টিতেও লিটন বয়ে বেড়াচ্ছেন কিনা তা নিয়ে কেউ কেউ সন্দিহান। ম্যানেজমেন্টের বিশ্বাস লিটন দ্রুতই রানে ফিরবেন। কিন্তু কোন কারণে যদি তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতেই ব্যর্থ হন তবে কি হবে?  বাঁহাতি হলেও তখন পারভেজ হোসেন ইমনের সুযোগ এসে যাবে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে লিটন ভালো বলে আউট হয়েছেন বলে কিছুটা সহমর্মীতা পাচ্ছেন। পরের ম্যাচগুলোতে তিনি রান না পেলে যেটা যে বদলে অন্যদিকে ঘুরে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

উদ্বেগের জায়গা আছে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে নিয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনি যেমন বল করেছেন তাতে একদম খুশি নয় টিম ম্যানেজমেন্ট। জিম্বাবুয়ে করেছে স্রেফ ১২৪ রান, এরমধ্যে ৪ ওভারে ৩৭ দিয়ে দেন রিশাদ। আলগা বল দিয়েছেন অহরহ।

ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনেও তাকে লেগেছিলো বিবর্ণ। আফিফ হোসেনের হাতে একাধিক বাউন্ডারি হজমের পর মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, 'ও উপরে (শর্ট) বল দিলেই মার খাবে।' রিশাদের আগ্রাসী ব্যাটিং সামর্থ্যই বিশ্বকাপ দলে থাকার জন্য যে যথেষ্ট হবে না তা স্পষ্ট।

বিশ্বকাপ স্কোয়াডে চার পেসার, চার স্পিনার রাখার পরিকল্পনা আছে। যারা আছেন ভাবনায় প্রত্যেকেই ফিটনেস ও পারফরম্যান্স হরে রাখলে এই  আটজন বোলারের মধ্যে সাকিব আল হাসানসহ চারজনই ব্যাটিং পারেন। কাজেই বোলিং অপশন বেশি রাখলেও ব্যাটিং দুর্বল হচ্ছে না।  অলরাউন্ডার ছাড়াও তিন ওপেনার এবং আরও চার ব্যাটার মিলিয়ে স্কোয়াডে সাতটি ব্যাটিং অপশন থাকছে। তবে মূল ব্যাটাররা যদি সেরা ছন্দ না দেখান তবে বিশ্বকাপের আগে অস্বস্তি থেকে যাবে নির্বাচকদের।

Comments