বল হাতে কী করতে চান, ভুলেই গিয়েছিলেন অ্যান্ডারসন

দীর্ঘ ২১ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষদিন। ৪১ পেরোনো অ্যান্ডারসনকে আবেগ না ছুঁয়ে পারেনি তাই।
ছবি: এএফপি

ব্যাটারের সঙ্গে ওয়ান-অন-ওয়ান লড়াই— জেমস অ্যান্ডারসন ক্রিকেট মাঠে এটিই সবচেয়ে বেশি মিস করবেন। ব্যাটারকে কীভাবে আউট করা যায়, বোলিং মার্কে দাঁড়িয়ে সে চিন্তাই ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসারের মাথায় সব সময় ঘুরঘুর করেছে এতদিন। কিন্তু বিদায়বেলায় তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন, বল হাতে ঠিক কী করতে চান!

দীর্ঘ ২১ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষদিন। ৪১ পেরোনো অ্যান্ডারসনকে আবেগ না ছুঁয়ে পারেনি তাই। ২০০৩ সালে সাদা পোশাকে যেখানে যাত্রা শুরু করেছিলেন, শনিবার সেই লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডেরই আবহ তাকে আরও আবেগাক্রান্ত করে তুলেছিল।

সিরিজের প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ইনিংস জয়ের পর ঝুলিতে ৭০৪ উইকেট নিয়ে অবসরে যাওয়া অ্যান্ডারসন শোনান শেষদিনের অনুভূতি, 'প্রথম দিনে আমার মেয়েদের বেল বাজানো দেখে, আজকে দুই দলের দাঁড়িয়ে থেকে (গার্ড অব অনার দেওয়া)… বেশ আবেগের ছিল। যখন প্রথম বলটা করেছি, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আসলে বল হাতে কী করতে চেয়েছিলাম। এটা অবিশ্বাস্য ছিল।'

শেষটা করতে পারতেন উইকেট নিয়েই। সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন, গুডাকেশ মোটি লোপ্পা একটি ফিরতি ক্যাচ তোলায়। কিন্তু এদিন কীভাবে যেন অ্যান্ডারসন সেটি লুফে নিতেই গড়বড় বাঁধিয়ে ফেলেন! শেষ ইনিংসে তাই ৩ উইকেটেই আটকে থাকতে হয় তাকে। সহজ ক্যাচ মিসে করা যায়নি উইকেট শিকারের মাধ্যমে তার ক্যারিয়ারের শেষ দৃশ্যের মঞ্চায়ন।

টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি পেসারের অবসর উপলক্ষে ব্রডকাস্টিং চ্যানেল স্কাই স্পোর্টস রেখেছিল বিশেষ কিছু আয়োজন। এর মধ্যে ব্যতিক্রমী একটি ব্যাপার ছিল ড্রেসিং রুমেই অ্যান্ডারসনের সাক্ষাৎকার নেওয়া। ম্যাচ শেষের কিছুক্ষণ পর ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইনকে তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে, আমি এখনও হতাশ যে, ক্যাচটা মিস করে ফেলেছি! এই সপ্তাহটা চমৎকার ছিল। যা অর্জন করতে পেরেছি, সেটির জন্য গর্বিত। দুই দল মিলে গার্ড অব অনার দিল, এই সকালটা বেশ আবেগের ছিল এবং দর্শকদের প্রতিক্রিয়া স্পেশাল ছিল। ২০ বছর খেলে যাওয়াটা অবিশ্বাস্য একটি প্রচেষ্টা ছিল। বিশেষ করে, একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে। তো আমি খুশি যে এত দূর আসতে পেরেছি।'

যেসব জিনিস তিনি খুঁজে ফিরবেন ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে, সেগুলোর আরেকটি হচ্ছে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয়ের মধুর স্বাদ। ১৮৮ টেস্ট ম্যাচ খেলা সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া তারকা বলেন, 'আমার মনে হয়, জিতে এই যে অনুভূতিটা হচ্ছে আমাদের, এটাই সবচেয়ে বেশি মিস করব। এর চেয়ে ভালো অনুভূতি হতে পারে না।'

একজন ফাস্ট বোলার হয়েও দিনের পর দিন খেলে যাওয়া। তার বাকি সব অর্জনের বাইরে সেটিই এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড বটে! কীভাবে পেরেছেন? টেস্ট ক্রিকেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি অ্যান্ডারসন জানান, উপভোগই ছিল মন্ত্র, 'এটা কষ্টদায়ক। কিন্তু আমি কখনও দায়িত্ব থেকে সরে যাইনি। আমি দিনে ২০-২৫ ওভার বোলিং করে পায়ে ব্যথা নিয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়াটাও উপভোগই করেছি।'

Comments