সাদমান-মুমিনুল-মুশফিক-লিটনের ব্যাটে বাংলাদেশের দিন

ছবি: এএফপি

আড়াই বছর পর টেস্ট খেলতে নামা সাদমান ইসলাম দারুণ ব্যাটিংয়ে জাগালেন সম্ভাবনা। কিন্তু মাত্র ৭ রানের আক্ষেপে ফেরাটা সেঞ্চুরিতে রাঙাতে পারলেন না তিনি। তার পাশাপাশি ফিফটি করলেন মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। তাদের নৈপুণ্যে সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দেখাল দাপট।

রাওয়ালপিন্ডিতে শুক্রবারের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩১৬ রান। যদিও স্বাগতিকদের চেয়ে এখনও ১৩২ রানে পিছিয়ে আছে তারা। আগের দিনের বিনা উইকেটে ২৭ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল দলটি।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মুশফিক অপরাজিত আছেন ১২২ বলে ৭ চারে ৫৫ রানে। আক্রমণাত্মক ঢঙে থাকা লিটন ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫৮ বলে ৫২ রানে খেলছেন। তাদের অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটির রান ৯৮। ওপেনার সাদমান থামেন ৯৩ রানে। ১৮৩ বল মোকাবিলায় ১২ চার আসে ব্যাট থেকে। চারে নামা মুমিনুল করেন ৭৬ বলে ৫ রানে ৫০ রান।

দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকালে দারুণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন সাদমান ও জাকির হাসান। কিন্তু তাদের উদ্বোধনী জুটি লম্বা হয়নি। এদিনের পঞ্চম ওভারে নাসিম শাহের বলে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ান প্রথম স্লিপের দিকে ঝাঁপিয়ে নেন দুর্দান্ত ক্যাচ। ফলে থামতে হয় জাকিরকে। ভাঙে ৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি।

৫৮ বলে ১ চারে জাকিরের সংগ্রহ ১২ রান। ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ডেকে আনেন বিপদ। বাজে শটে ইতি ঘটে তার ইনিংসের।

বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টিকতে পারেননি। অ্যারাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করেন খুররম শাহজাদ। ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বল গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। শান্ত আউট হন ৪২ বলে ২ চারে ১৬ রানে।

লম্বা সময় পর সাদা পোশাকে মাঠে নামা সাদমান খেলছিলেন দৃঢ়তার সঙ্গে। আত্মবিশ্বাসী ঢঙে থাকা মুমিনুলের সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। দারুণ দক্ষতায় পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ সামাল দিয়ে রান বাড়াতে থাকেন দুজন। আলগা হয়ে পড়ে চাপ।

তিন ঘণ্টা দীর্ঘ প্রথম সেশনের শেষ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন সাদমান। নাসিমের শর্ট বল পুল করে চার মেরে পৌঁছে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিতে। সেজন্য তাকে মোকাবিলা করতে হয় ১২৩ বল। আর বাংলাদেশ মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ২ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে। এই সেশনে ৩৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তারা যোগ করে ১০৭ রান।

সাদমানের পর ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করেন মুমিনুল। তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৭৫ বলে। তবে পরের বলেই বিদায় নিতে হয় তাকে। সাদমানের মতো একই কায়দায় খুররমের একই রকম ডেলিভারিতে থামেন তিনি। শেষ হয় ৯৪ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।

এরপর মুশফিক ক্রিজে গিয়ে সঙ্গী হন সাদমানের। চা বিরতির ঠিক আগে তাদের জমে ওঠা জুটি থামে ৫২ রানে। সেই সঙ্গে সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন সাদমান। ড্রাইভ করার চেষ্টায় মোহাম্মদ আলীর ডেলিভারির লাইনে যেতে ব্যর্থ হন তিনি। ব্যাট ও প্যাড এড়িয়ে বল লাগে স্টাম্পে।

এর আগে রিভিউ নিয়ে ৫৭ রানে একবার বেঁচে গিয়েছিলেন সাদমান। আগা সালমানের বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। পরে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, ইমপ্যাক্ট মিডল স্টাম্পে থাকলেও বল মিস করত লেগ স্টাম্প।

দ্বিতীয় সেশনে ১৮ ওভারে ২ উইকেট খুইয়ে ৬৫ রান তোলে বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয় সেশনের শুরুর দিকে সাকিব আল হাসান ধরেন সাজঘরের পথ। প্রথমবারের মতো আক্রমণে যাওয়া অনিয়মিত স্পিনার সাইম আইয়ুবের নির্বিষ বলে ক্যাচ দেন তিনি। কাজে লেগে যায় পাকিস্তানের অধিনায়ক শান মাসুদের বাজি।

সাকিব থামেন ১৬ বলে ২ চারে ১৫ রানে। তার আউটে দলীয় ২১৮ রানে পতন হয় বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেটের। তবে এই ধাক্কা দ্রুত সামলে নেন মুশফিক ও লিটন। নতুন বল নিয়ে তাদেরকে সেভাবে ভোগাতে পারেনি পাকিস্তানের বোলাররা। বরং লিটনের নেতৃত্বে শেষবেলায় পাল্টা আক্রমণ চালায় সফরকারীরা।

অভিজ্ঞ মুশফিক ফিফটিতে যান ১০৪ বলে। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি। ক্রিজে গিয়ে দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নেওয়া উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মাত্র ৫২ বলে। নাসিমের করা ইনিংসের ৮৯তম ওভারে রীতিমতো ঝড় ওঠান তিনি। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ এনে ওই ওভারেই পূরণ করেন ফিফটি।

সেই ছক্কায় বলও হারিয়ে ফেলেন সাদা পোশাকে ১৭তম ফিফটি করা লিটন। তার পুল শটে বল চলে যায় স্টেডিয়ামেরই বাইরে! তিনি জ্বলে ওঠায় তৃতীয় সেশনে পাকিস্তানের বোলারদের নাজেহাল হতে হয়। সাকিব ফিরলেও ২৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ১১৭ রান।

Comments

The Daily Star  | English
Government notification banning Awami League

Govt issues gazette notification banning AL activities

A Public Security Division joint secretary confirmed the matter

1h ago