নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্পতে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। একদিনে ১৬ উইকেট হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো তারা।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের ফয়সালা হয়েছে তৃতীয় দিনেই। যে পিচে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল, সেই একই পিচে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ভীষণ হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পর ফলো-অনে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা থামে ১৪৩ রানে।

দুঃস্বপ্নের মতো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ৩১০ রানে পরাস্ত হয়েছিল তারা। সেই রেকর্ড ২২ বছর ধরে টিকে আছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা পেল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ। তাদের আগের কীর্তিটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে ইনিংস ও ২৫৪ রানের ব্যবধানে জিতেছিল তারা।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের স্রেফ তিন ব্যাটার পৌঁছেছিলেন দুই অঙ্কে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সংখ্যা একটি বাড়লেও নাজমুল হোসেন শান্তর দলের সংগ্রহ উল্টো আরও কমে যায়। প্রতিরোধ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো ঝাঁজই দেখাতে পারেননি স্বাগতিক ব্যাটাররা।

আগের দিনের ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে এদিন নেমে ১৫৯ করে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এরপর ফলোঅনে পড়ে ফের ব্যাটিংয়ে নেমে চা বিরতির আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এমন বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন ছিল একাধিক ব্যাটারের বড় ইনিংস খেলার। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি।

তৃতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই মুশফিকুর রহিমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন সেনুরান মুথুসামি। সুইপ করতে গিয়ে ঘটে বিপদ। মুশফিক দ্রুত আউট হওয়ার পর মেহেদী হাসান মিরাজ উইকেট বিলিয়ে দেন কেশব মহারাজকে। তার আউট ছিল বিস্ময় জাগানিয়া। দলের বিপদের মাঝে বিস্ময় জাগিয়ে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি।

অধিনায়ক শান্তর ব্যাটে ছিল প্রতিকূল পরিবেশে লড়াইয়ের আভাস। কিন্তু লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। মুথুসামির টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বলে লেগ স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। প্রথম ইনিংসে নিবেদন দেখানো তাইজুল ইসলাম এবার আর ধৈর্য দেখাননি। মহারাজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাগিসো রাবাদার তালুবন্দি হন তিনি।

৯৪ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি পায় নবম উইকেটে। অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন মহারাজের শিকার হলে ভেঙে যায় হাসান মাহমুদের সঙ্গে তার ৩৭ রানের জুটি।

৫ উইকেট পাওয়ার লড়াইয়ে ছিলেন দুই স্পিনার মুথুসামি ও মহারাজ। সেখানে জয়ী হন মহারাজ। নাহিদ রানাকে ফিরিয়ে তিনি পূরণ করেন ৫ উইকেট। সঙ্গে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। দশে নেমে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান। ৩০ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১ চার ও ৪ ছক্কা।

মহারাজ ৫ উইকেট নেন ৫৯ রানে। মুথুসামি ৪ উইকেট শিকার করেন ৪৫ রানে। অন্য উইকেটটি যায় ডেন প্যাটারসনের ঝুলিতে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের সবকটি যায় সফরকারী স্পিনারদের ঝুলিতে।

ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন টনি ডি জর্জি। তিনি এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র ইনিংসে ১৭৭ রান করেছিলেন। সিরিজসেরার পুরস্কার জেতেন দুই টেস্টে ১৪ উইকেট পাওয়া পেসার রাবাদা।

পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তির পর এই নিয়ে টানা দুটি টেস্ট সিরিজে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এবার দেশের মাটিতে অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উড়ে গেল তারা।

Comments

The Daily Star  | English
Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

"The chief adviser said he wants to hold the election between December and June"

1h ago