দল নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতার সেই সংস্কৃতিই বহাল

Tamim Iqbal & Gazi Ashraf Hossain Lipu

তামিম ইকবাল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। প্রায় ১৬ মাস পর  হুট করেই এই অভিজ্ঞ ওপেনারকে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তাকে দলে নিতে এক পায়ে খাড়া নির্বাচক কমিটি, শুধু তামিমের হ্যাঁ বলা বাকি। এতে দল নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা, দ্বিধাগ্রস্ততার দীর্ঘ ও অপ্রত্যাশিত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাই দেখা যাচ্ছে।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে আচমকা অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। তার অবসর ঘিরে এরপর চলতে থাকে চূড়ান্ত নাটকীয়তা। বোর্ডের নীতি নির্ধারক বদলালেও নাটক ও ইস্যু জিইয়ে রাখার বাংলাদেশের ক্রিকেটের সংস্কৃতির চক্র বদল হয়নি।

সেবার অবসর ঘোষণার একদিন পরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন তামিম। পীঠের চোট কাটিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলতে দেখা যায় তাকে। ওই সিরিজে দুই ম্যাচ মাঠে একটাই ইনিংসে ব্যাট করেন তিনি। আরেক ম্যাচ ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে।

এরপর তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি করে তুমুল আলোচনা, নানান ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে পরে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকেননি তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণ ছাড়লেও তামিমের টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা তখন থেকে এখনো ঝুলন্ত। মাঝে মধ্যেই তাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা উঠে, তাতে একই কথার পুনরাবৃত্তি হয়েছে বহুবার। এই ব্যাপারে আগের বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন অনেকবারই কথা বলেছেন, তবে স্পষ্ট হয়নি কিছুই। বর্তমান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। নিজের ফেরার সম্ভাবনা ধোঁয়াশায় রেখে দেন তামিম নিজেও। একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি এড়িয়ে গিয়ে উত্তর দিয়েছেন।

বুধবার আবার এই ইস্যু এসেছে আলোচনায়। সিলেটে গিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু  দুই দফা সভা করেন তামিমের সঙ্গে। সেখানে তিনি তামিমকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার আহবান জানান।

এই অনুরোধ বিবেচনা করে সময় চেয়েছেন তামিম। লিপু পরে গণমাধ্যমে জানান,  'আমাদের যেমন আমাদের ওপর বোর্ড আছে। বোর্ডের তরফ থেকে আমরা এসেছি। এখানে কোনো অসুবিধা নাই। পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে, একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় এ সমস্ত ইস্যুতে ফেরত আসার ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব অনেক সময়, কিংবা তার প্রিয় কোচ অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার একটা ব্যাপার থাকে। সেক্ষেত্রে একটু সময় নেওয়ার তো ব্যাপার এসেই যায়। আমাদের যেহেতু ১২ তারিখে দল ঘোষণা করতে হবে, তার আগেই আমাদেরকে দলটা দিতে হবে বোর্ডের কাছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সময় আছে, তাকে সময় নিতে দেই, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তিনি একটা টুর্নামেন্ট খেলছেন, আমাদের প্রাথমিক আলোচনা আমরা সেরে নিয়েছি।'

প্রশ্ন হলো তামিমকে যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেওয়া হবেই তাহলে তাকে কেন সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে দলে নেওয়ার চেষ্টা হয়নি, কিংবা তার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে কেন তিনি ছিলেন না। ১৬ মাস ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার পরিকল্পনা থাকলে অন্তত আগে একটা সিরিজ খেলা কি জরুরি ছিলো না? তিনি যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেন তাহলে কি তিনি ২০২৭ বিশ্বকাপের পরিকল্পনাতেও থাকবেন কিনা।

তামিমের অনুপস্থিতিতে টপ অর্ডারে এসেছে নতুন আদল। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তিনে খেলেন। ওপেনিংয়ে গত কয়েক সিরিজে সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিমকে খেলতে দেখা গেছে। এছাড়া চোট কাটিয়ে দলে ফিরে লিটন দাসও খেলেছেন গত সিরিজে। সৌম্য রান পেলেও বাকি দুজনের ব্যাট অধারাবাহিক। সেখানে একটা ঘাটতি দেখতে পারেন নির্বাচকরা। সেই ঘাটতির কথা যদিও তারা গত কিছু সিরিজে বলেননি।

গত দুটি ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে কোন পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছে। সেই পরিকল্পনায় কি তামিম ছিলেন? নির্বাচকদের কথাতে তার কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচক বারবার বলতে চেয়েছেন, 'তামিমকে খেলতে দেখতে কে না চায়?' তাহলে কি দল নির্বাচনের পরিকল্পনা, ক্রিকেটীয় যুক্তি থেকেও প্রাধান্য পাচ্ছে ক্রিকেটারের জনপ্রিয়তা? নাকি বর্তমান যারা ওপেনার আছেন তাদের উপর আস্থা নেই বলেই অভিজ্ঞ তামিমে ফিরে যাওয়া? এখন নির্বাচকরাই যদি ভোগেন পরিকল্পনাহীনতায়, তাহলে ক্রিকেটাররা কীভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে নিজেদের এগিয়ে নেবেন?

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

4h ago