বৈভবকে নিয়ে যে শঙ্কার কথা বলে চ্যাপেলের সতর্কবার্তা

ভারতীয় ক্রিকেটে প্রতিভা অফুরন্ত, প্রতি যুগেই বিস্ময়কর সব প্রতিভার জন্ম হতে দেখে গেছে। অতি অল্প বয়সে দুনিয়া কাঁপানো আলোড়নের তালিকায় নতুন সংযোজন বৈভব সূর্যবংশী। বয়স মাত্র ১৪ পেরিয়েছে। কিশোর বয়সেই আইপিএলের মতন মঞ্চে সুযোগ পেয়ে ৩৫ বলে রেকর্ডময় সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। আইপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম, সবচেয়ে কম বয়েসী হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তিনি। বিপুল সম্ভাবনা থাকায় বৈভবকে নিয়ে যেমন আছে পুলকিত হওয়ার মতন উপকরণ, আছে কিছু ভয়ও। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ও কোচ গ্রেগ চ্যাপেল সেই শঙ্কার দিকে আঙুল তুলে তাকে যত্ন করে সুরক্ষার আহবান জানিয়েছেন।
কিশোর বয়সে আলোড়ন তুলে ভারতীয় ক্রিকেটে এসেছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের মতন ক্রিকেটার, যদি পরে হয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের একজন মহাতারকা। ব্যাটিংয়ের বেশিরভাগ রেকর্ড নিজের করে ভারতে ক্রিকেটকেই অন্য উচ্চতায় নিয়েছেন তিনি।
শচীনের সঙ্গেই আরও প্রতিভা নিয়ে ক্রিকেটে এসেছিলেন বিনোদ কাম্বলি। বন্ধু শচীন গ্রেট হলেও কাম্বলি হয়েছেন হারিয়ে যাওয়া আক্ষেপের নাম। সাম্প্রতিক সময়ে এমন উদাহরণ আসবে পৃথ্বী শ'র নাম। কিশোর বয়সে মুন্সিয়ানা দেখিয়ে তাক লাগিয়েছিলেন তিনিও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও পা রেখেছিলেন অল্প বয়সে। শুরুটাও হয় ঝলক দেখিয়ে। পৃথ্বী এখন হারিয়ে যাওয়া নাম। এমনকি এবার আইপিএলেও দল পাননি তিনি।
বৈভব যেন শচীনের পথে হাঁটতে পারেন, কাম্বলি-পৃথ্বীদের মতন না হন এই নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআইকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন চ্যাপেল।
চ্যাপেল ইএসপিএনক্রিকইনফোতে তার কলামে লিখেছেন, ''শচীন টেন্ডুলকার কেবল প্রতিভার জোরে নয়, একটি শক্তিশালী সহায়ক ব্যবস্থার কারণে কিশোর বয়স থেকে বিকশিত হয়ে সফল হয়েছিলেন -তাকে সুরক্ষা করেছিলেন কোচ, তার পরিবার। অন্যদিকে, বিনোদ কাম্বলি, সম্ভবত আরও বেশি ঝলমলে প্রতিভা নিয়েও খ্যাতি এবং নিয়মানুবর্তিতাকে ভারসাম্য করতে পারেননি। তার পতন তার উত্থানের মতোই নাটকীয় ছিল। পৃথ্বী শ আরেক বিস্ময়কর প্রতিভা যিনি পতিত হয়েছেন তবে এখনও শীর্ষে ফিরে আসার পথ খুঁজে পেতে পারেন।'
কাম্বলি এবং টেন্ডুলকার এক সঙ্গে তাদের ক্রিকেট জীবন শুরু করেছিলেন, যেখানে টেন্ডুলকার খেলার সর্বকালের সেরাদের একজন হয়েছেন, সেখানে বাঁহাতি কাম্বলি এক বিস্মৃত তারকায় পরিণত। মাস্টার ব্লাস্টার তার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে (টেস্ট, ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি) মোট ৩৪,৩৫৭ রান করে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন করে পাতা যুক্ত করেছেন। তিনি টেস্টে সর্বোচ্চ ১৫,৯২১ রান এবং ওডিআইতে সর্বোচ্চ ১৮,৪২৬ রান করেছেন।
অন্যদিকে তুমুল প্রতিভা সত্ত্বেও কাম্বলি মাত্র ১৭টি টেস্ট এবং ১০৪টি ওডিআই খেলতে পেরেছিলেন। অভিষেকের পর তার দ্রুত উত্থান হয়। টেস্টে পরপর দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হয়েছিলেন কাম্বলি। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২২৪ এবং দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২২৭ রান করেছিলেন। তবে, ধারাবাহিকতার অভাব ভারতীয় দলের সঙ্গে তার যাত্রা সংক্ষিপ্ত করে দেয়। মাঠের বাইরের বিষয়গুলি সামলাতে ব্যর্থ হন এবং মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন, যা গত এক দশকে তার অসংখ্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়। গত বছর ডিসেম্বরে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
পৃথ্বীও মুম্বাইয়ে খুব অল্প বয়সে শিশু প্রতিভা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর তার ক্যারিয়ারে একই রকম পতন দেখেছেন। তিনি ২০১৮ সালে ভারতকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন, তবে বর্তমানে পৃথ্বী সিনিয়র দলের বিবেচনায় কোথাও নেই।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পৃথ্বীর অধীনে খেলা খেলোয়াড়রা - শুভমান গিল এবং অর্শদীপ সিং - ইতিমধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বে সুপারস্টার তকমা অর্জন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা পৃথ্বীকে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হিসেবে ধরা হয়েছিল। তবে, শৃঙ্খলাহীনতা, ফিটনেস নিয়ে ঢিলেমি এবং মাঠের বাইরের বিতর্ক তার ক্যারিয়ারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে, এমনকি এই বছর আইপিএল-এর মেগা নিলামেও তিনি কোনো দল পাননি, যেখানে ১৪ বছর বয়সী বৈভব বড় মঞ্চে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন।
প্রবীণ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার চ্যাপেল তরুণ প্রতিভাকে সঠিক পথে লালন-পালন করার গুরুত্বের কথা বলেছেন বৈভবের প্রসঙ্গে। বিসিসিআই, পরিবার এমনকি গণমাধ্যমের ভূমিকাও দেখছেন তিনি, 'ক্রিকেট ইকোসিস্টেম - বিসিসিআই, ফ্র্যাঞ্চাইজি, মেন্টর এবং মিডিয়ার - তাকে রক্ষা করা কর্তব্য। প্রতিভাকে সুরক্ষা করতে হবে। একে শুধু বাজারের আইটেম না বানিয়ে লালন-পালন করা উচিত।'
Comments