ইংল্যান্ড-ভারত মহাকাব্যিক টেস্ট সিরিজের চমকপ্রদ যত পরিসংখ্যান

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের জন্য যা ছিল চরম উত্তেজনা ও স্নায়ুচাপের, নিরপেক্ষ দর্শকদের জন্য তা ছিল অনন্য মহাকাব্যিক অভিজ্ঞতা। ২৫ দিনজুড়ে চলা অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের পর ইংল্যান্ড ও ভারতের পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে অমিমাংসিত থেকেছে। তবে উত্থান-পতন থেকে শুরু করে উপভোগের বিবেচনায় এটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ক্রিকেট ইতিহাসে।
ইংল্যান্ডের মাটিতে গোটা সিরিজে নানা রকম রেকর্ড তৈরি হয়েছে নানা দিক থেকে। কিন্তু গতকাল সোমবার ওভালে পঞ্চম ও শেষ টেস্টের পরও জয়ী নির্ধারিত হয়নি। তাই স্বাগতিক অধিনায়ক বেন স্টোকস ও সফরকারী অধিনায়ক শুবমান গিলকে ভাগাভাগি করতে হয়েছে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি।
৬: টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসাবে ভারতের সবচেয়ে ছোট জয়
সিরিজের শেষদিনে ওভালে ভারতের ছিল মাত্র ৩৪ রান ডিফেন্ড করার চ্যালেঞ্জ, তুলে নেওয়ার দরকার ছিল চারটি উইকেট। এমন সমীকরণ থাকায় তাদের জয় একপ্রকার অসম্ভবই মনে হচ্ছিল।
তবে মাত্র ৫৬ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ২৮ রান খরচ করে গিলের দল। ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটার হিসেবে গাস অ্যাটকিনসনকে বিদায় করে তারা তুলে নেয় স্মরণীয় জয়। রানের হিসাবে এটি তাদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
এর আগে ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে মুম্বাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩ রানের জয় ছিল ভারতের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়ের কীর্তি। সেবার তারা স্রেফ ১০৬ রান ডিফেন্ড করে অজিদের অলআউট করে দিয়েছিল ৯৩ রানে।
টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রায় ২৬০০ ম্যাচে এর চেয়ে কম ব্যবধানে জয় দেখা গেছে মাত্র সাতটি।
৭১৮৭: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে সম্মিলিত সর্বোচ্চ রান
দুর্দান্ত ব্যাটিং আর স্কোরিং রেটের সমন্বয়ে পাঁচ ম্যাচের কোনো টেস্ট সিরিজে সম্মিলিত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড ও ভারত। দুই দল মিলিয়ে এর চেয়ে বেশি রান হয়েছিল কেবল ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজে। ইংলিশরা ও অজিরা মিলে ছয় টেস্টে করেছিল ৭২২১ রান।
এবার ৭১৮৭ রানের মধ্যে ভারতের ব্যাটাররা সংগ্রহ করে ৩৮০৭ রান। এটি পাঁচ ম্যাচের সিরিজে কোনো নির্দিষ্ট দলের পক্ষে সর্বোচ্চ।
গিল (৭৫৪ রান), লোকেশ রাহুল (৫৩২ রান) ও রবীন্দ্র জাদেজা (৫১৬ রান) ব্যাট হাতে দেখান অসাধারণ পারফরম্যান্স। টেস্টের ইতিহাসে এক সিরিজে কোনো দলের তিনজন ব্যাটারের অন্তত ৫০০ রান করার ষষ্ঠ নজির এটি।
৩: পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে প্রথম ইনিংসে দুই দলের ব্যবধান ৩০ রানের কম
টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা মাত্র পাঁচটি— যেখানে পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে দুই দলের প্রথম ইনিংসের ব্যবধান ছিল ৩০ রানের মধ্যে। সবশেষ নজিরটি ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যকার সদ্যসমাপ্ত সিরিজের।
চমক জাগিয়ে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দুই দলই প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ রানে অলআউট হয়। টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র নবমবারের মতো কোনো ম্যাচে দুই দলের প্রথম ইনিংসের স্কোর সমান হওয়ার ঘটনা এটি।
৪৫: এই সিরিজে বোল্ড আউটের সংখ্যা
পুরো সিরিজে স্টাম্প ভাঙা যেন ছিল খুবই সহজ ব্যাপার। তাই অ্যাটকিনসনকে বোল্ড করার মাধ্যমে মোহাম্মদ সিরাজের ভারতকে সমতায় ফেরানো ছিল একেবারে উপযুক্ত সমাপ্তি।
এই সিরিজে মোট ৪৫টি বোল্ড আউট হয়— যা ১৯৮৪ সালের পর কোনো টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ এবং ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কোনো সিরিজে ১৯৭৬ সালের পর সর্বোচ্চ।
মাত্র তিনটি টেস্ট খেললেও ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহ ১০টি উইকেট শিকার করেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারের স্টাম্প ভেঙে।
২৫: পাঁচ টেস্টের সিরিজে পুরো ২৫ দিন খেলা মাঠে গড়ানো
ওভাল টেস্টের চতুর্থ দিনে কিছুটা খারাপ আবহাওয়ার কারণে আগেভাগে খেলা শেষ হলেও পুরো সিরিজে নির্ধারিত প্রতিটি দিনই খেলা হয়। এই ২৫ দিনের মধ্যে আবার ১৮ দিনই সিরাজকে বোলিংয়ে দেখা যায়।
সবশেষ কোনো পাঁচ টেস্টের সিরিজে সবগুলো ম্যাচ পঞ্চম দিনে গড়িয়েছিল ২০১৭-১৮ মৌসুমের অ্যাশেজে। যদিও অস্ট্রেলিয়ার কাছে সেবার ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইংল্যান্ড।
চলতি শতকে এই নিয়ে মাত্র চতুর্থবারের মতো পাঁচ ম্যাচের কোনো টেস্ট সিরিজে সবগুলো ম্যাচই পঞ্চম দিনে গেল। বাকি দুটি ছিল ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এবং ২০০৪-০৫ মৌসুমে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে।
Comments