ফুটবল-পাগল বগুড়ার সেই রায়হান বুলু আর নেই
শিশুদের ফুটবলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেওয়া বগুড়ার স্বেচ্ছাসেবী ফুটবল প্রশিক্ষক রায়হান বুলু মারা গেছেন। তিনি গত এক মাস ধরে লিভার ও কিডনি সমস্যার পাশাপাশি আলসার ও অ্যাজমাসহ নানা অসুখে ভুগছিলেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ৫১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রায়হান। আজ মঙ্গলবার সকালে গাবতলী উপজেলার কদমতলী হাইস্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে কদমতলী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানান তার আত্মীয়-স্বজন।
অসুস্থ থাকাকালে রায়হানের দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী পাশে ছিলেন। তারা নানাভাবে চিকিৎসার চেষ্টা করলেও প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে পারেননি। রায়হানের ভাইয়ের ছেলে আব্দুল মোমিন জানান, দুই সপ্তাহ ধরে শয্যাশায়ী থাকার পর গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।
কদমতলী গ্রামের রায়হান স্থানীয় ফুটবল ও সংস্কৃতি অঙ্গনে খুব পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর গাবতলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেন। শিশুদের জার্সি, ফুটবল ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার টাকা তিনি নিজেই বহন করতেন। এজন্য ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী তাকে ত্যাগ করেছিলেন বলে জানান এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজন। কারণ, তিনি তার সমস্ত উপার্জন শিশুদের খেলার পেছনে খরচ করতেন।
শুরুতে রায়হান পেশায় ছিলেন দিনমজুর। পরে নৈশপ্রহরী এবং শেষ জীবনে কদমতলী হাইস্কুলের দ্বাররক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সারা জীবন ধরে তিনি যে অর্থ আয় করেন, তার সবটাই শিশুদের ফুটবল প্রশিক্ষণের পেছনে ব্যয় করেন। তাকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারে ২০১৯ সালে 'একজন ফুটবলপ্রেমী দিনমজুর' শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজারের বার্তা-সম্পাদক ও লেখক নিয়ন মতিউল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রায়হান ভাই বাচ্চাদের ফুটবলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। বাচ্চারা যাতে নেশায় আকৃষ্ট না হয় সেজন্য এটা ছিল তার স্বঘোষিত উদ্যোগ। এলাকার সংস্কৃতি অঙ্গনেও তার পরিচিতি ছিল।'
তিনি যোগ করেন, 'এলাকায় যেকোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রায়হান ভাই সবার আগে আসতেন। শ্রম দিতেন, নাচতেন ,গাইতেন সবই করতেন। অথচ প্রায় বিনা চিকিৎসায় অল্প বয়সে তাকে বিদায় নিতে হলো।'
Comments