লেভানদোভস্কির জোড়া গোলে টিকে রইল বার্সেলোনার আশা

গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যেতে না চাইলে জিততেই হতো বার্সেলোনাকে। ড্র করলে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য দলগুলোর ফলাফলের উপর। এমন বাঁচা মরার ম্যাচে জিততে পারেনি বার্সেলোনা। দুই দফা পিছিয়ে থেকে লেভানদোভস্কির জোড়া গোলে কোনোমতে ড্র করে নকআউট পর্বের আশা টিকিয়ে রেখেছে কাতালানরা।

বুধবার রাতে ক্যাম্প ন্যুতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের 'সি' গ্রুপের ম্যাচে ইন্টার মিলানের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে বার্সেলোনা। লেভানদোভস্কির জোড়া গোল ছাড়াও গোল পেয়েছেন উসমান দেম্বেলে। ইন্টার মিলানের হয়ে একটি করে গোল দিয়েছেন নিকোলো বারেল্লা, লাউতারো মার্তিনেজ ও রবিন গোসেন্স।

তবে প্রতি মুহূর্তেই যেন রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে ম্যাচে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ ফুটবল উপহার দেয় দলদুটি। প্রথমার্ধে পিছিয়ে থাকা ইন্টার সমতায় ফেরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। এরপর দুইবার এগিয়ে গেলেও ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি দলটি। শেষ গোলটি ম্যাচের যোগ করা সময়ে হজম করে নেরারুজ্জিরা।

আশা ধরে রাখতে পারলেও কাজটা এখন বেশ কঠিনই বার্সেলোনার জন্য। শেষ দুটি ম্যাচে তো জিততে হবেই, তাকিয়ে থাকতে হবে এই গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর দিকে। শেষ দুই ম্যাচের একটিতে জয় পেলেই হেড টু হেডে এগয়ে থেকে নকআউট পর্বে নাম লেখাবে ইন্টার।

অন্যদিকে, এরমধ্যেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়েছে বায়ার্নের। ভিক্তোরিয়া প্লাজেনকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা। তাই পরের ম্যাচে নিজেদের সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রামেও রাখতে পারে দলটি। সেক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে ইন্টার, যা দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে বার্সেলোনার।

বরাবরের মতো মাঝ মাঠের দখল ছিল বার্সেলোনারই। ৬২ শতাংশ সময় বল দখলে ছিল তাদের। আক্রমণেও এগিয়ে ছিল দলটি। ২৫টি শট নেয় স্বাগতিকরা, যার ১১টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ১১টি শট নিয়ে ৮টি লক্ষ্যে রাখে ইন্টার।

এদিন প্রথমার্ধের ৪০তম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। রাফিনহার কাছ থেকে বল পেয়ে গোলমুখে দারুণ এক কাটব্যাক করেন সের্জি রোবার্তো। গোল মুখে এগিয়ে ফাঁকায় বল পেয়ে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান দেম্বেলে।

৫০তম মিনিটে সমতায় ফেরে ইন্টার। আলেসান্দ্রো বাস্তোনির ক্রস দারুণ দক্ষতায় বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে বুদ্ধিদীপ্ত এক শটে বল জালে পাঠান বারেল্লা। এর ১৩ মিনিট পর ইন্টারকে এগিয়ে দেন লাউতারো। হাঁকান কালহানোগলুর ক্রস বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন এ আর্জেন্টাইনও। প্রথম পোস্ট ঘেঁষে নেওয়া তার শট বারে লেগে লক্ষ্যভেদ হলে স্তব্ধ হয়ে যায় ন্যু ক্যাম্প।

৮২তম মিনিটে ম্যাচে ফেরে বার্সেলোনা। বালদের ক্রস থেকে লেভার হেড এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে ফের পায়ে আসে তার। আলগা বলে তার নেওয়া শট এক খেলোয়াড়ে পায়ে লেগে দিক বদলে জালে প্রবেশ করে।

নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট আগে ন্যু ক্যাম্প ফের স্তব্ধ করে দেন গোসেন্স। লাউতারো মার্তিনেজের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক শটে বল জালে পাঠান এ জার্মান ডিফেন্ডার। ম্যাচের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ফের বার্সেলোনাকে সমতায় ফেরান লেভা। এরিক গার্সিয়ার নেওয়া ক্রসে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠান তিনি।

তবে ম্যাচে গোল হতে পারতো আরও অনেকগুলোই। নবম মিনিটে রাফিনহার ক্রস থেকে লেভানদোভস্কির হেড একেবারে গোললাইন থেকে ফেরান হেনরিক এমখিতারায়ান। এর আট মিনিট পর অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় বার্সা। হাঁকান কালহানগলুর ক্রস থেকে এডেন জেকোর স্লাইড শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে।

২৫তম মিনিটে দুটি দূরপাল্লার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন দুই গোলরক্ষক। ইন্টারের হয়ে শট নিয়েছেন এমখিতারায়ান, আর পাল্টা আক্রমণে বার্সার হয়ে দেম্বেলে। দুই মিনিট পর কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল ইন্টারের। তবে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে সে সুযোগ নষ্ট করেন ডেঞ্জাল ডামফ্রিস।

৩০তম মিনিটে ইন্টার গোলরক্ষক ওনানার ভুলে গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিল বার্সা। মার্কোস আলোনসোর শট দূরপাল্লার শট ঠিকভাবে ধরতে পারেননি গোলরক্ষক। আলগা বলে স্লাইড শটে চেষ্টা চালিয়েছিলেন লেভা। তবে গোলরক্ষকের গায়ে লেগে বেরিয়ে যায়।

৩৬তম মিনিটে লেভানদোভস্কির কাটব্যাক থেকে রাফিনহার সাইড ভলি এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর গোল পেতে পেতেও পায়নি বার্সা। দেম্বেলের ক্রস থেকে এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন পেদ্রি। শটও নিয়েছিলেন। তবে গোলরক্ষকের সামনে জটলা পাকিয়ে গেলে শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণে নেন ওনানা।

৪৩তম মিনিটে রাফিনহার আরও একটি শট বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৫২তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি পেয়েছিলেন লেভা। দেম্বেলের ক্রসে পেদ্রির ব্যাক হেডে ফাঁকায় বল পেয়ে যান এ পোলিশ ফরোয়ার্ড। কিন্তু তার নেওয়া ভলি লক্ষ্যেই থাকেনি। তিন মিনিট পর জেকোর শট দারুণ এক ট্যাকলে ব্লক করে গাভি।

৫৭তম মিনিটে দুর্দান্ত এক সেভে বার্সাকে রক্ষা করেন টের স্টেগেন। কর্নার থেকে পায়া বলে লাউতারো হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান এ গোলরক্ষক। তিন মিনিট পর আরও একটি দারুণ ব্লকে বার্সাকে ম্যাচে রাখেন গাভি।

৭০তম মিনিটে লেভানদোভস্কি বল জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল মিলেনি। পরের মিনিটে লেভানদোভস্কির অসাধারণ এক শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ওনানা। ৭৭তম মিনিটে দেম্বেলের ক্রসে ভালো সুযোগ ছিল লেভার। কিন্তু লক্ষ্যেই শট নিতে পারেননি তিনি।

ম্যাচের শেষ দিকে অন্তত দুটি গোল হজম করতে পারতো বার্সা। তবে দুইবারই দুর্দান্ত সেভ করেন গোলরক্ষক টের স্টেগেন। প্রথমে ক্রিস্তিয়ান এসলানির শট, পরে গোসেন্সের শট ঠেকান এ গোলরক্ষক। দুইবারই তাকে একা পেয়ে গিয়েছেন তারা।

চার ম্যাচ শেষে একটি জয় ও একটি ড্রয়ে বার্সেলোনার সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে দুটি জয় ও একটি ড্রয়ে ইন্টারের পয়েন্ট ৭। চার ম্যাচে চারটিতেই জিতে নকআউট পর্বে পা রাখা বায়ার্নের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। চারটি ম্যাচ হারায় প্লাজেন কোনো পয়েন্ট পায়নি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

5h ago