১৯৩০: প্রথম শিরোপা উরুগুয়ের
আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। এরপর শুরু হচ্ছে ফুটবল তথা ক্রীড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা বিশ্বকাপ। গোটা বিশ্বের মানুষ যে আসরে বুঁদ হয়ে থাকে টিভি পর্দায়। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে মরুর বুক কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের মহাযজ্ঞ। এবারের আসরে অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে একটু বেশিই নজরে থাকবে ফুটবল ভক্তদের। কারণ এবারই হতে পারে ফুটবলের দুই মহাতারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার শেষ সুযোগ। এরমধ্যেই ভক্তরা মেতে উঠেছেন তাদের প্রিয় দল কিংবা খেলোয়াড়দের সম্ভাবনা নিয়ে। মেতে উঠেছেন প্রিয় দলের অতীত সাফল্য নিয়ে। দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদেরও আমরা নিয়ে যাচ্ছি অতীতে। আজ প্রকাশ করা হচ্ছে প্রথম পর্ব।
১৯৩০ বিশ্বকাপ:
নানা প্রতিকূলতার পর ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপের আসর আয়োজন করতে পারে ফিফা। অলিম্পিক ফেডারেশনের তীব্র বাঁধা, এমনকি ফুটবলের জনক দেশ ইংল্যান্ডের বিরোধিতার পরও এক প্রকার জেদ করেই এ আসরের আয়োজন করেন তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে। আর সফলভাবে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার আয়োজনও করেন। শুরু হয় এক নতুন দিগন্ত।
অবশ্য বাঁধাও ছিল অনেক। ইউরোপের দলগুলো আগ্রহ দেখায়নি। মাত্র চারটি দল অংশ নেয় ইউরোপ থেকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ওই একবারই ইউরোপের চেয়ে ল্যাতিন দলের উপস্থিতি ছিল বেশি।
সেই বছরটি ছিল আবার উরুগুয়ের স্বাধীনতার শততম বার্ষিকী। বিশ্বকাপ আয়োজন করেই উদযাপন করতে চায় তারা। তাদের সমর্থন দেয় ল্যাতিন আমেরিকার সবগুলো দলই। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে হবে বিধায় ইউরোপের দলগুলো রাজী হতে চায়নি। শেষে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর যাবতীয় খরচ উরুগুয়ে বহন করতে সম্মত হলে ভোটাভুটিতে শেষ পর্যন্ত প্রথম আসরের স্বাগতিক হওয়ার মর্যাদা পায় উরুগুয়েই। রাজধানী মন্তিভিদিওর তিনটি ভেন্যুতে আয়োজিত হয় সে বিশ্বকাপ।
প্রথম আসরে অংশ নেয় মোট ১৩টি দেশ। ইউরোপ থেকে অংশ নেয় ৪টি দেশ। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়া। ল্যাটিন আমেরিকার ছিলো ৭টি দল। পেরু, প্যারাগুয়ে, চিলি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া ও স্বাগতিক উরুগুয়ে। বাকি দুটি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো। ১৮ দিনব্যাপী এ আসর ১৩ জুলাই শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ জুলাই। ১৩টি দলকে চার ভাগে বিভক্ত করে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আসর।
ফিফা সভাপতি জুলেরিমে নিজের দেশ ফ্রান্স এবং মেক্সিকোর মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপের যাত্রা। ৪-১ গোলের জয় দিয়ে শুরু করে ফরাসীরা। আর প্রথম হারের ধাক্কা এখনও কাটেনি মেক্সিকোর। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ২৭টি ম্যাচে হারের রেকর্ডটি যে তাদেরই। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি উপভোগ করেছিলেন ৪,৪৪৪ জন দর্শক।
গ্রুপ-পর্বের বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুগোস্লাভিয়া। ওই সময়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চারটি দলই ছিল সেমিফাইনালিস্ট। তাদেরকে আলাদা গ্রুপে রেখেই ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচে ৬-১ গোলে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে একই ফল অর্থাৎ ৬-১ গোলে যুগোস্লাভিয়াকে বিধ্বস্ত করে উরুগুয়ে।
৩০ জুলাই মন্তিভিদিওর সেন্তেনারিও স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ফাইনালটি। ৬৮,৩৪৬ জন দর্শক উপভোগ করেছিলেন ফাইনাল ম্যাচটি। ঘরের মাঠে ১২ মিনিটেই লিড নিয়েছিল উরুগুয়ে। কিন্তু ৩৭ মিনিটের মধ্যে ১-২ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পর খেই হারিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনা; ওই অর্ধে তিনটি গোল আদায় করে ৪-২ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে শিরোপা উৎসবে মাতে উরুগুয়ে। ফাইনাল ম্যাচের রেফারি ছিলেন বেলজিয়ামের জন লাঞ্জিনাস।
প্রথম বিশ্বকাপে কোন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ না থাকলেও গ্রুপ পর্বের ফলাফল বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তৃতীয় স্থান দেওয়া হয়। এ বিশ্বকাপে তিনটি হ্যাটট্রিকসহ মোট গোল হয় ৭০টি। বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেটানভ। আর সর্বাধিক ৮টি গোল করেন আর্জেন্টিনার গুইলের্মো স্তাবিল।
এক নজরে ১৯৩০ বিশ্বকাপ:
স্বাগতিক: উরুগুয়ে
চ্যাম্পিয়ন: উরুগুয়ে
রানার্স-আপ: আর্জেন্টিনা
অংশগ্রহণকারী: ১৩টি (উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, চিলি, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, রোমানিয়া, যুগোস্লাভিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো)
মোট ভেন্যু: ৩টি
মোট রেফারি: ১৫ জন
মোট ম্যাচ: ১৮টি
গোল্ডেন বল: হোসে নাসাজ্জি (উরুগুয়ে)
গোল্ডেন বুট: গুইলের্মো স্তাবিল (আর্জেন্টিনা)
গোল্ডেন গ্লাভস: এনরিক ব্যালেস্তেরোস (উরুগুয়ে)
Comments