কুয়েতের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হৃদয় ভাঙলো বাংলাদেশের
শুরুতেই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলেন আগের দুই ম্যাচের নায়ক শেখ মোরসালিন। বিরতির পর রাকিব হোসেনের শট লাগল বারে। শক্তিশালী কুয়েতকে কয়েকবার কাঁপিয়েও গোল পাওয়া হলো না বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ে রক্ষণ আগলে প্রতিপক্ষকেও গোল করতে দেয়নি হ্যাভিয়ের কাবরেরার দল। চোয়ালবদ্ধ লড়াই শেষে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙলো অতিরিক্ত সময়ে।
শনিবার বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে কুয়েতের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময় গোলশূন্য থাকার পর অতিরিক্ত সময়ের নবম মিনিটে কুয়েতের হয়ে একমাত্র গোল করেন আব্দুল্লাহ আল বায়ুশি।
১৪ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে শেষ চারে উঠলেও আর এগুনো হলো না লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। র্যাঙ্কিংয়ে ৫০ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে অবশ্য প্রায় সমান তালে লড়ায় প্রশংসা পাবেন জামাল ভূঁইয়ারা।
পুরো ম্যাচে আক্রমণ অনেক বেশি করেছে কুয়েত। তবে কখনই মনে হয়নি ম্যাচে পিছিয়ে আছেন জামালরা। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ধারহীন করে দেওয়া, মাঝমাঠে কুয়েতকে জায়গা না দিয়ে সুযোগ তৈরি করে কাঁপন ধরানো ফুটবলে নজর কেড়েছে কাবরেরার শিষ্যরা।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই দারুণ সুযোগ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে পাস বাড়ান রাকিব। কুয়েতের ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করতে না পারলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান মোরসালিন। তার সামনে ছিলেন কেবল গোলকিপার। কিন্তু মোরসালিন হেলায় হারিয়ে ফেলেন অমন সুযোগ, দুর্বল শট মারেন কিপারের হাতে।
সপ্তম মিনিটে গোল পেয়েই যাচ্ছিল কুয়েত। কর্নারের পর কয়েকজন ঘুরে পেয়ে যান আল রশিদ। তার ক্রসে বক্সের জটলার ভেতর থেকে সালমান মোহাম্মদের হেড গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন ইসা ফয়সাল।
বাংলাদেশের আক্রমণ সামলে কুয়েত সুযোগ তৈরি করলেও বাংলাদেশের রক্ষণ ছিল সতর্ক। বিশেষ করে বিশ্বনাথ ঘোষ আর তারিক কাজি ছিলেন দেয়ালের মতো। পুরো ম্যাচ জুড়েই দলের সেরা পারফর্মার ছিলেন এই দুজন। কুয়েত অনেকখানি এগিয়ে থকা দল থাকলেও বাংলাদেশ তাই লড়তে থাকে সমান তালে। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষকে জায়গা না দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যান রাকিবরা। ২৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রাকিবের নেওয়া শট যায় গোলরক্ষকের হাতে।
পরের মিনিটে গোল পেতে পারত কুয়েত। বক্সের বাইরে থেকে উড়ে আসা বল লাফিয়ে রক্ষা করেন আনিসুর রহমান জিকো। ৩১ মিনিটে আবার মোরসালিন-রাকিব বিপদজনক হয়ে দেখা দিয়েছিলেন কুয়েতের রক্ষণে। বা দিকে বল মোরসালিনের ক্রস ঠিকমতো ধরতে পারেননি রাকিব।
৪০ মিনিটে আচমকা এক আক্রমণে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন আল রাশিদি। তার বা পায়ের শট বা দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে বাংলাদেশকে বাঁচান জিকো।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়েও উত্তেজনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। তবে বা দিকে তৈরি হওয়া আক্রমণ থেকে রাকিবের ক্রস সামলে নেয় কুয়েতি রক্ষণ।
বিরতির পর কুয়েত চাপ তৈরি করে খেলতে থাকলেও ৫৪ মিনিটে বড় সুযোগ পায় বাংলাদেশই। প্রতি আক্রমণ থেকে মাঝ মাঠে বল পেয়ে দূরপাল্লার শট মারেন কুয়েতের জালের দিকে। অল্পের জন্য তা যায় বারের উপর দিয়ে।
৬১ মিনিটে আবারও মোরসালিন-রাকিব জুটির ক্ষিপ্রতা গোল পাওয়ার পরিস্থিতি এসেছিল। মাঝমাঠে জামালের কাছ থেকে পাস পেয়ে মোরসালিন বল নিয়ে ছুটে ডান পাশে পাস দিয়েছিলেন রাকিবকে। রাকিবের আড়াআড়ি শট জালে প্রায় জড়িয়েই যাচ্ছিল, বারে লেগে তা প্রতিহত হয়ে ফেরত যায়।
পরের মিনিট তিনেক আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় কুয়েত। জিকোর দৃঢ়তায় বিপদ হয়নি যদিও।
৬৮ মিনিটে জামালকে তুলে নিয়ে ফয়সল আহমেদ ফাহিমকে নামান কাবরেরা। তাতে জামালের জায়গায় নিচে নেমে আসেন মোরসালিন। স্ট্রাইকার পজিশনে যান ফাহিম।
৭২ মিনিটে মোরসালিন উঠে গিয়ে সুযোগ তৈরি করলেও শেষটায় আর হয়নি। খানিক পর বাংলাদেশ দলের ফিজিও ডেভিড ম্যাগানকে ডেকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। পরে ম্যানেজার হাসাল আল মামুনও পান হলুদ কার্ড।
প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণের ভিড়ে ৮৮ মিনিটে আসে আরেক সুযোগ। দুরন্ত গতিতে ছুটে ফাহিম ডান প্রান্ত থেকে বক্সে বল দেন তিনি, তাতে মাথা লাগাতে পারেননি রাকিব। শেষের কয়েক মিনিট দাঁতে দাঁত চেপে কুয়েতকে রুখে খেলা অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশ।
অতিরিক্ত সময়েও একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। অতিরিক্ত সময়ের নবম মিনিটে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় আল রাশিদিকে হতাশ করেন বাংলাদেশের কিপার জিকো। তবে গোল পেতে দেরি হয়নি কুয়েতের।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে আব্দুল্লাহ আল বায়ুশি বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙে দেওয়া গোল করে ফেলেন। বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে ডান পায়ের শটে জাল খুঁজে নেন তিনি।
গোল শোধে তেমন সুযোগ মিলছিল না, ১১২ মিনিটে বদলি নামা রহমত মিয়ার শট আটকাতে সমস্যা হয়নি কুয়েতের গোলরক্ষকের। ১১৮ মিনিটে গোল শোধ অবশ্য হয়েই যাচ্ছিল। বিশ্বনাথের বাড়ানো লম্বা শট ধরে রাকিব গোলে শট নিলেও কুয়েতি গোলরক্ষক পা দিয়ে বল ঠেকিয়ে দেন। শেষ মুহুর্তেও প্রতিপক্ষের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়ে হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে।
Comments