এমন এক বিজয় যা একটি বিভক্ত জাতিকে একতাবদ্ধ করতে পারে

একটি উত্তাল সময় পার করে একটি দেশ যখন নানাভাগে বিভক্ত, একটি জাতি যখন সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা নতুন করে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই এলো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সাফল্য। বাংলাদেশের জন্য এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

দুই বছর আগেও দক্ষিণ এশিয়ান স্তরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিল সাবিনা খাতুনের দল। তবে তখনকার মতো দেশের সর্বস্তরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারেনি এবারের শিরোপা জয়টি। কারণ এবার বাংলাদেশ ছিল ফেভারিটদের অন্যতম এবং তাদের ফলাফলও খুব বেশি বিস্ময় জাগানিয়া নয়। এই উচ্ছ্বাসের ঘাটতি সম্ভবত জাতি হিসেবে আমাদের বর্তমান অবস্থার কারণেও হতে পারে: আমাদের হৃদয় যেমন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ, তেমনি আমাদের হৃদয় অনিশ্চয়তার শঙ্কায় জড়সড়। তবে ঠিক এ কারণেই এবারের জয় আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

এই বিজয় আমাদের অন্তত এই শিক্ষা দিতে পারে যে, একটি জাতি হিসেবে আমাদেরকে কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং ঐক্যের মাধ্যমেই গৌরব অর্জন করা যায়। কারণ মেয়েদের এই দলটি টানা দুবার দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বিজয় কেতন ওড়ানোর পাশাপাশি তারা চরম সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতাকে জয় করেছে। এমনকি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও জয়ী হয়েছে।

আপনি যদি কখনো এই ব্যস্ত ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থল মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) প্রাঙ্গণে পা রাখেন, তাহলে আপনি হয়তো ভেবে অবাক হবেন যে, কীভাবে ভারতের মতো অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে পারে বাফুফের জরাজীর্ণ আবাস্থলে বসবাসকারী মেয়েদের এই দলটি?

উত্তর খুঁজে নিতে পারেন মেয়েদের জীবন থেকেই। এখনও মেয়েদের খেলাধুলার ক্ষেত্রে সামাজিক রীতি-নীতি কুসংস্কারে পূর্ণ এবং তাদেরকে বাবা-মায়েরা অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চান। এসব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে শৈশব থেকেই লড়াই করে জয়ের দৃঢ় মানসিকতা তৈরি হয়েছে তাদের।

আমাদের মেয়েদের ফুটবল দলকে বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি গোষ্ঠী বলা যায়। কারণ এই দেশের সব প্রান্ত থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের সমন্বয় ঘটেছে এখানে। তাদের বিস্তৃতি সমুদ্র উপকূলীয় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে গারো পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত, উত্তরের মলিন সমতল ভূমি থেকে দক্ষিণ-পূর্বের পাহাড়ি ভূখণ্ড পর্যন্ত। তারা যেমন ভিন্ন ভিন্ন জাতিগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তেমনি তাদের ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রও আলাদা আলাদা। কিন্তু সবাই একই ছাদের নিচে বসবাস করে ফুটবলের মাধ্যমে জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন, অতীতের কষ্ট ও প্রতিকূলতা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

মেয়েদের মধ্যে অনেকে এমন সম্প্রদায় থেকে এসেছেন, যারা আজও জাতিগত নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতো একই রীতি-নীতির অনুসারী নন তারা। অনেক খেলোয়াড়ই দেখেছেন, তাদের আত্মীয়-স্বজনরা শোষকদের ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন এবং তাদের জমি ও সম্পত্তি জবরদখল চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই মেয়েরা সেসব যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়গুলোকে তাদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তিতে পরিণত করেছেন এবং দেশকে গর্বিত করেছেন। তারা দেশবাসীর কাছ থেকে একযোগে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই মেয়েদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সমাজের সকল ক্ষেত্রে সাম্য ও অন্তর্ভুক্তির চর্চা শুরু করা, যা বাংলাদেশের 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা'র আদর্শ হয়ে উঠেছে।

Comments

The Daily Star  | English
CAAB pilot licence irregularities Bangladesh

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

9h ago