ডর্টমুন্ডকে গুঁড়িয়ে সেমিতে এক পা বার্সেলোনার

লিওনেল মেসির স্বর্ণযুগের পর এমন কিছু আর দেখা যায়নি। এমনকি দর্শকদের ঢেউ তুলে উল্লাস করাও ছিল বেশ চমকপ্রদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগ আজ অসাধারণ ছিল বার্সেলোনার জন্য। চমৎকার, বিধ্বংসী। যদিও ইদুনা পার্কের ম্যাচ এখনও বাকি। তারপরও সেমি-ফাইনালের টিকিট প্রায় কেটে ফেলেছে বার্সেলোনা।
মন্তুজুইকে বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলের ব্যবধানে জয় পেয়েছে হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। দলের হয়ে জোড়া গোল করেছেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। একটি করে গোল পেয়েছেন রাফিনিয়া ও লামিন ইয়ামাল।
কাতালানদের এই জয়ে কিংবদন্তী মেসির রেকর্ড ছুঁয়েছেন রাফিনিয়া। ক্লাবটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখন সবচেয়ে গোলে অবদান এখন এই ব্রাজিলিয়ানেরও। ২০১১-১২ মৌসুমে ১৪টি গোল এবং ৫টি অ্যাসিস্টসহ মোট ১৯টি গোল অবদান রেখেছিলেন। চলতি মৌসুমে ১২টি গোল ও ৭টি অ্যাসিস্টে রাফিনিয়ার অবদানও ১৯টি গোলে। তবে মেসিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অন্তত একটি সুযোগ থাকছে তার সামনে। সেমিতে উঠলে তো আরও দুটি।
মাঠে শুরু থেকেই বার্সেলোনা দেখিয়েছে অসাধারণ দক্ষতা। মন্তুজুইকের গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ, এবং সমর্থকেরা তাদের দলকে তাতিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে। আর খেলোয়াড়রাও তাদের নিরাশ করেনি। প্রতিপক্ষকে একদম চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছেন। এতে বার্সেলোনা নিশ্চিত করেছে বড় শিরোপার দাবিদারদের কাতারে জায়গা।
সবমিলিয়ে বার্সা তাদের সমর্থকদের এমন একটি রাত উপহার দিয়েছেন, যা ছিল তাদের অনেক দিনের স্বপ্ন। অধিকাংশ সময় পজিশন ধরে রেখে খেলার পাশাপাশি প্রতি আক্রমণে ছিল দারুণ গতি ও শক্তি। ফ্লিকের দল যেন পুরো মাঠেই আধিপত্য বিস্তার করেছে। এমনকি আনসু ফাতিও পেয়েছেন কিছুটা সময় মাঠে থাকার!
দানি ওলমোকে না পেলেও তার ঘাটতি ফ্লিক দূর করেছিলেন ফারমিন লোপেজকে নামিয়ে। খেলেছেনও অসাধারণ — শুধু গোলটা পাওয়া হয়নি, কারণ তার একমাত্র প্রচেষ্টা লেগেছিল পোস্টে। রক্ষণে কঠোরতা, ক্লোজ লাইন, হাই প্রেসিং, বল রিকভার, অ্যাটাকিং থার্ডে ছিল বারুদের মতো আক্রমণ — আর রক্ষণে ছিল চমৎকার দলীয় সংহতি।
ম্যাচে প্রথম কয়েকটি সুযোগ থেকে গোল না পেলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে রাখে বার্সেলোনা। ২৫তম মিনিটে আসে কাঙ্ক্ষিত গোল। যদিও গোলটি হতে পারতো কুবারসির নামে। একটি সেটপিস থেকে ইনিগো মার্তিনেজের হেড থেকে পা লাগিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন কুবারসি। রাফিনিয়ার একেবারে গোল লাইন থেকে পা ছুঁইয়ে কেবল গোলটি নিজের করে নেন।
আধিপত্য ধরে রাখলেও প্রথমার্ধে এই একটি গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় বার্সা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দলটি নামে নতুন উদ্যমে। প্রথম সুযোগেই গোল পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। লামিন ইয়ামালের পাসে রাফিনিয়ার হেডার, আর সেটাই লেভানদোভস্কির মাথায় লেগে ঢুকে যায় জালে।
এরপর ফারমিনের শট লাগে পোস্টে, আবারো সুযোগ আসে তার কাছেই। বার্সা তখন ডর্টমুন্ডকে পুরোপুরি কোণঠাসা করে রাখে। ৬৬তম মিনিটে ফারমিন নিজেদের হাফ থেকে দুর্দান্ত রানে পাস দেন ইয়ামালকে, যিনি আবার ফিরিয়ে দেন — আর ফারমিনের কাটব্যাক থেকে লেভানদোভস্কি আবারো গোল করেন নিখুঁতভাবে।
এরপর বিধ্বংসী প্রতি আক্রমণে প্রতিপক্ষকে চূড়ান্তভাবে বিধ্বস্ত করে বার্সা। ৭৭তম মিনিটে প্রতিপক্ষ সীমানায় ঢুকে রাফিনিয়ার পাস, ইয়ামাল সেখানে বল পেয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার পান চমৎকার ফিনিশে গোল করে। এরপর পুরো দল দেখায় তাদের রক্ষণকাজ। গোললাইন থেকেও বল ঠেকিয়ে বড় লিড ধরে রেখে মাঠ ছাড়ে বার্সা।
তবে দারুণ কিছু সুযোগ ছিল ডর্টমুন্ডেরও। ম্যাচের শেষদিকে তো দুটি শট প্রায় গোললাইন থেকে ঠেকান বার্সা ডিফেন্ডাররা। গিরাসি প্রথমার্ধে পেয়েছিলেন সহজ সুযোগ — কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে শট নিতে গিয়ে মিস করেন। গিটেন্সের একটি শট ঠেকিয়ে দেন সেজনি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে গিরাসি মিস করেন আরও একটি।
Comments