র‌্যাঙ্কিং বাড়ছে, এবার আরও বড় লাফ দেওয়ার সময় বাফুফের

বাংলাদেশ নারী ফুটবলের আকাশে এখন সোনালি ভোরের আলো। সাফল্যের উজ্জ্বল রঙে রাঙা এই সকাল এসেছে বহু প্রতীক্ষা, অগণিত পরিশ্রম আর অদম্য স্বপ্নযাত্রার ফসল হয়ে। কোচ পিটার বাটলারের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও খেলোয়াড়দের নিবেদিতপ্রাণ লড়াইয়ে ফুটবল এখন শুধু মাঠের প্রতিযোগিতা নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক রোমাঞ্চকর গল্প, যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে নতুন করে প্রাণ দিচ্ছে। সবশেষ ফিফা নারী ফুটবল র‌্যাঙ্কিংয়ে লাফিয়ে ওঠা ২৪ ধাপ যেন এই অগ্রযাত্রার মহাকাব্যের নতুন অধ্যায়।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা নিজেই বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে 'সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জনকারীদের' কাতারে। প্রথমবারের মতো ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়ার এই ঐতিহাসিক অর্জনের পর দলটি ১২৮তম স্থান থেকে উঠে এসেছে ১০৪-এ। যদিও এটি দলের সর্বোচ্চ অর্জন নয়, ২০১৩ সালে তারা ছিল ১০০তম স্থানে। তবুও সর্বশেষ আপডেটে তারা অর্জন করেছে সর্বাধিক রেটিং পয়েন্ট (+৮০.৫১), যা এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

আরও আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, এই উন্নতি কেবল স্কোরবোর্ডে সীমাবদ্ধ নয়। বয়সভিত্তিক দল থেকে শুরু করে সিনিয়র জাতীয় দল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে খেলার মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতা, যেখানে ফুটবল কেবল ফলাফলের জন্য নয়, দর্শকদের জন্যও এক প্রবল বিনোদন হয়ে উঠেছে। আত্মবিশ্বাসী, আক্রমণাত্মক ও দৃষ্টিনন্দন খেলার ধারা এনে দিয়েছে এক নতুন রূপ।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন, তখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কবে দেশের নারী ফুটবলের দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ উপস্থাপন করবে? গত মাসে বাংলাদেশ বাছাইপর্বের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নিখুঁত রেকর্ড নিয়ে, আয়োজক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে, এবং বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে। এমন আধিপত্যপূর্ণ প্রদর্শনী জাতীয় গর্বের জন্ম দিলেও, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এই অর্জনকে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নে রূপ দেওয়া।

সম্প্রতি ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেছেন, 'এই সাফল্য আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।' তিনি তিনটি মূল অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করেন: শীর্ষ আন্তর্জাতিক লিগগুলোতে খেলোয়াড়দের সুযোগ তৈরি, আরও বেশি স্পনসরশিপ ও ব্র্যান্ডিং আনা, এবং সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত সুনির্দিষ্ট নারী ফুটবল লিগ ও নারীদের জন্য নিবেদিত ফুটবল কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি স্বীকার করেছেন যে মানসম্মত নারী ফুটবল লিগ আয়োজন করতে না পারাটা বাফুফের ব্যর্থতা, যা খেলোয়াড়রা বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছেন।

এখন সবার দৃষ্টি এই প্রতিশ্রুতিগুলো কত দ্রুত বাস্তবে রূপ নেয়, সেদিকে। যখন খেলোয়াড়রা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, তখন পিছিয়ে থাকার কোনো অজুহাত নেই। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।

নারী লিগের ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোকেও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে বাফুফের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। যদি বিনোদনমূল্য ও দৃশ্যমানতা স্পনসরদের আগ্রহের মাপকাঠি হয়, তবে আমাদের ফুটবলাররা ইতোমধ্যেই তার প্রমাণ দিয়ে দিয়েছেন।

প্রতিটি নতুন সাফল্যের সঙ্গে দেশের পুরুষ ও নারী ফুটবলের বৈষম্য ন্যায্যতা হারাচ্ছে। সমান সমর্থন এখন আর বিলাসিতা নয়; এটি ভবিষ্যতের পথচলার অপরিহার্য শর্ত।

Comments