স্টেডিয়ামে সহিংসতায় একে অপরকে দায় দিচ্ছে চিলি ও আর্জেন্টিনা

দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল আবারও কলঙ্কিত হলো ভয়াবহ সহিংসতায়। কোপা সুদামেরিকানার শেষ ষোলোর ম্যাচে আর্জেন্টিনার ইন্ডিপেনদিয়েন্তে ও চিলির ইউনিভার্সিদাদ দে চিলির সমর্থকদের সংঘর্ষ রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ছুরি, লাঠি, বোতল এমনকি স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করা এই সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

বুয়েনস আয়ার্সে বুধবার রাতের ম্যাচ চলাকালে বিরতির সময় চিলির সমর্থকেরা পাথর, লাঠি, বোতল ও স্টান গ্রেনেড ছুড়ে মারেন স্থানীয় সমর্থকদের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেডিয়ামে। জবাবে ইন্ডিপেনদিয়েন্তে সমর্থকেরা প্রতিপক্ষের গ্যালারিতে ঢুকে দর্শকদের বেধড়ক মারধর করে, অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আতঙ্কে অনেকে গ্যালারির ওপর থেকে ঝাঁপ দেন, তবে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ৪৮ মিনিটে ১-১ সমতায় স্থগিত করে দেওয়া হয়।

চিলির কনসাল জেনারেল আন্দ্রেয়া কনচা হেরেরা জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯৮ জন সমর্থক আটক রয়েছেন। চিলি সরকার জানায়, তাদের ১৯ জন নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন, এর মধ্যে একজন ছুরিকাহত। আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম জানিয়েছে, তিনজনের গুরুতর মাথার আঘাত লেগেছে। প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক এ ঘটনাকে তার দেশবাসীর ওপর 'অগ্রহণযোগ্য লিঞ্চিং' বলে অভিহিত করে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। আহতদের পাশে দাঁড়াতে ও তদন্ত তদারকি করতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বুয়েনস আয়ার্সে পাঠিয়েছেন।

ইন্ডিপেনদিয়েন্তের সভাপতি নেস্টর গ্রিন্দেত্তি অভিযোগ করেন, চিলির সমর্থকেরা টয়লেট খুলে গ্যালারিতে ছুঁড়ে মেরেছে। স্থানীয় সমর্থক ফাকুন্দো মানেন্তে বলেন, 'তারা সবকিছু ছুড়ছিল—পাথর, চেয়ার, প্রস্রাব, এমনকি মলও।' দুই দলের খেলোয়াড় ও দর্শকরা অভিযোগ করেন, পুলিশ দেরিতে হস্তক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে চিলির ফুটবল সংস্থা (এএনএফপি) ইন্ডিপেনদিয়েন্তেকে 'নিষ্ক্রিয় থাকার' অভিযোগ তোলে। তবে আর্জেন্টাইন ক্লাব দাবি করেছে, তারা সব নিয়ম মেনেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল।

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো একে 'বর্বরোচিত' বলে আখ্যা দেন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান। কনমেবলও জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেবে। শাস্তি হিসেবে ক্লাবগুলোর জরিমানা থেকে শুরু করে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কারের মতো শাস্তিও হতে পারে।

অবশ্য দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল বহুবার সমর্থক সহিংসতায় কলঙ্কিত হয়েছে। গত ২০ বছরে এমন সংঘর্ষে শত শত প্রাণহানি ঘটেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে সান্তিয়াগোতে কলো কলো ও ব্রাজিলের ফোরতালেজার ম্যাচের আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই সমর্থক নিহত হয়েছিলেন।

চিলির ইউনিভার্সিদাদ সভাপতি মাইকেল ক্লার্ক এ ঘটনার পর মন্তব্য করেছেন, 'এটা অলৌকিক যে কেউ মারা যায়নি।' মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়রাও সহিংসতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। চিলির আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় ফেলিপে লয়োলা লিখেছেন, 'এ ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।'

Comments

The Daily Star  | English

‘We knew nothing about any open letter’

Journalist Bibhuranjan’s son says after identifying his body

4h ago