সর্বনিম্ন স্কোরে শ্রীলঙ্কাকে আটকে প্রোটিয়াদের জয়

নিজেদের মূল শক্তির জায়গা বোলিং। কিন্তু প্রতিপক্ষের কাজ কঠিন করতে বোলারদের জন্য তো অন্তত লড়াই করার পুঁজি চাই। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তাতো হয়নি, উল্টো টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন পুঁজি গড়ে শ্রীলঙ্কা। আর সে পুঁজি নিয়ে বোলাররা কিছুটা লড়াই করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। জয় দিয়েই আসর শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সোমবার নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.১ ওভার ব্যাটিং করে মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। জবাবে ২২ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে এইডেন মার্করামের দল।
গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল দলদুটি। সে ম্যাচে ওভারপ্রতি এসেছে সাড়ে সাতের বেশি রান। সেখানে টি-টোয়েন্টি সংস্করণেই এবার দুই দল খেলেছে এমন ম্যাচ, যেখানে রানরেট থেকেছে ছয়ের কম। শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৭৭ রানে অলআউট করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
মন্থর উইকেটে অতিরিক্ত বাউন্স কাজে লাগিয়ে দারুণভাবে বোলিং করেছেন প্রোটিয়া বোলাররা। মার্কো ইয়ানসেন বাদে সবাই উইকেট পেলেও আগুন ঝরানো বোলিং করেছেন আনরিখ নরকিয়া। মাত্র ৭ রানের খরচায় পেয়েছেন ৪টি উইকেট। যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। ছোট পুঁজি নিয়েও অবশ্য দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ের রসদ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ৬ উইকেটের হারেই শুরু করতে হল বিশ্বকাপ যাত্রা।
সাদামাটা লক্ষ্য হেসেখেলেই পেরিয়ে যাবে ভেবেছিলেন হয়তো প্রোটিয়া সমর্থকরা। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই নুয়ান থুশারার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে রিজা হেন্ড্রিকস ফিরে যান ৪ রানে। আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি ককও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেননি। ওয়ান ডাউনে নামা এইডেন মার্করাম ১২ রানে আউট হয়ে গেলে ২৩ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দাসুন শানাকার বলে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর চারে নামেন ট্রিস্টান স্টাবস। তৃতীয় উইকেটের দেখা পেয়ে যেত শ্রীলঙ্কা ওই ২৩ রানেই। শূন্য রানেই উঠা স্টাবসের ক্যাচ ফসকে যায় উইকেটরক্ষক কুসল মেন্ডিসের হাত থেকে। তৃতীয় উইকেট শেষমেশ যখন পায় লঙ্কানরা, ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে যায় ৫১ রানে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এসে ২৭ বলে ২০ রান করা ডি কককে ফিরতে ক্যাচে শিকার বানিয়ে ভাঙেন ২৮ রানের জুটি।
আইপিএলে রানের ঝড় তোলা স্টাবস খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে থাকেন। তার ২৮ বলে ১৩ রানের অস্বস্তিময় ইনিংস থামে হাসারাঙ্গার বলেই। ১৩তম ওভারে স্টাবস আউট হয়ে যান কাভারে ক্যাচ তুলে। হেনরিখ ক্লাসেন এসেও শুরুতে রান পেতে ভুগেছেন। কিন্তু হাসারাঙ্গাকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে দক্ষিণ আফ্রিকার অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনেন তিনি। ২২ বলে একটি করে ছক্কা ও চার মেরে তিনি দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ২২ বল বাকি থাকতে।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে নিউইয়র্কের মাঠে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা শ্রীলঙ্কান ওপেনাররা নিরাপদে সূচনা করেন। মার্কো ইয়ানসেনের ২ রানের ওভারে দুর্দান্ত শুরু করা প্রোটিয়ারা চেপে বসে লঙ্কানদের উপর। চতুর্থ ওভারে ওটনিল বার্টম্যানকে প্রথম বলেই মারতে যান পাথুম নিসাঙ্কা, টপ এজে ৩ রানে আউট হন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে আর উইকেট না হারালেও ২৪ রানের বেশি আনতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
তবে নরকিয়া এসে দ্বিতীয় শিকার করেন অষ্টম ওভারেই। স্কোয়ার লেগের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে কামিন্দু মেন্ডিস ফিরে যান ১১ রান করেই। এরপর হাসারাঙ্গা চলে আসেন দ্বিতীয় উইকেট পড়তেই। এই ব্যাটার দ্বিতীয় বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে বড় শট খেলতে যান। কেশব মাহরাজের বলে স্টাম্পিং হয়ে বিদায় নেন শূন্য রানেই। সাদিরা সামারাবিক্রমাও রানের খাতা খোলার আগেই মাহরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান।
এতক্ষণ ক্রিজে হাঁসফাঁস করা ওপেনার মেন্ডিসও পরের ওভারে বিদায় নেন। নরকিয়ার বলে পুল করতে গিয়ে স্কোয়ার লেগের হাতে ধরা পড়লে তার ৩০ বলে ১৯ রানের ভোগান্তির ইনিংস শেষ হয়। দারুণ ছন্দে থাকা নরকিয়াকে টানা ওভার করাতে থাকেন এইডেন মার্করাম। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে চারিথ আসালাঙ্কার উইকেটও তুলে নেন এই গতিশীল পেসার। ৬ রানে আসালাঙ্কাও সেই স্কোয়ার লেগেই ক্যাচ দেন।
৪৫ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা প্রথম ছক্কার দেখা পায় এরপর ১৩তম ওভারে। সেই ছক্কা মারা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ শুরুটা আত্মবিশ্বাসের সাথে করলেও বেশিক্ষণ টিকেননি। ১৬ রান করে নরকিয়ার বাউন্সারে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন ফাইন লেগে। তার ফেরার আগে স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন দাসুন শানাকা। ৭০ রানেই ৮ উইকেট খুইয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কাকে লেজের ব্যাটাররা শেষমেশ ৭৭ রানে নিয়ে যেতে পারেন।
Comments