অস্থায়ী এক স্টেডিয়াম ব্যাটারদের জন্য রেখে গেল স্থায়ী ক্ষত

ছবি: এএফপি

হেইনরিখ ক্লাসেন নিউইয়র্কের মাঠে তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জয় পেয়েছেন। তবুও নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তাদের আর খেলতে হবে না, তা ভেবেই স্বস্তি দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটারের। এই অনুভূতির বিচারে ক্লাসেন সঙ্গ পাবেন না, এমন কোনো ব্যাটার আছেন নাকি!

২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আট ম্যাচ হয়ে গেল যে স্টেডিয়ামে, সেটির কোনো অস্তিত্ব ছিল না গত বছরই। পাঁচ মাসের ব্যবধানে স্টেডিয়ামটি তৈরি করে ফেলা হলো, বিশ্বকাপের খেলাও সেখানে সারা। এখন ছয় সপ্তাহের মধ্যেই আবার অস্তিত্ব হারাবে আইজেনহাওয়ার পার্কের স্টেডিয়ামটি। থাকবে শুধু স্মৃতিতেই। ব্যাটারদের সুখস্মৃতি অবশ্য দেয়নি 'অতীত' হতে চলা স্টেডিয়ামটি। অস্থায়ী এই স্টেডিয়াম উল্টো তাদের মনে স্থায়ী ক্ষতই হয়তো রেখে গেল।

নিউইয়র্কের পিচ ব্যাটারদের নাভিশ্বাসই যে তুলে ছেড়েছে। ব্যাটিংয়ের জন্য কত কঠিন ছিল, সেটা চোখে দেখলেও পরিসংখ্যানে তাকালে কাঠিন্যের পরিমাণ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বিশ্বকাপের এই ২০ দলের মধ্যে বিশ্বের যেসব মাঠে অন্তত চার ম্যাচ হয়েছে, সেসব মাঠকে হিসাবে নিলে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র নিউইয়র্কেই পনেরোর কম গড়ে রান করেছেন ব্যাটাররা। নাসাউ কাউন্টিতে তাদের গড় ছিল স্রেফ ১৪.৮৯। এর সঙ্গে স্ট্রাইক রেটও যায়নি একশর ওপরে (৮৮.০১)। বিশ্বের অন্য কোনো মাঠেই এভাবে একশর কম স্ট্রাইক রেটে রান ওঠেনি। অর্থাৎ পনেরোর কম গড় ও একশর কম স্ট্রাইক রেট— এই যুগলবন্দী ক্রিকেটবিশ্বে খুঁজতে খুঁজতে পাওয়া যাবে কেবল এক নাসাউ কাউন্টিকেই।

অসম বাউন্সের সঙ্গে লম্বা সময় ধরে মুভমেন্ট— এসব মিলিয়ে নিউইয়র্কের চারটি পিচ হয়ে উঠেছিল ব্যাটারদের আতঙ্কের আরেক নাম। বলের মুভমেন্ট আর স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে মাঝেমধ্যে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিকই ছিল যে, রঙিন পোশাকে যেন টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম সেশন।

রান রেটের অবস্থা ছিল ওয়ানডের মতোই। একদিনের ক্রিকেটেও এখন যেখানে ছয়ের কম রান রেট দেখার হার কমে এসেছে, সেখানে নিউইয়র্কের মাঠে রান উঠেছে ওভারপ্রতি ৫.৭৪। বিশ্বের আর কোনো মাঠেই এরকম ছয়ের কম রান রেটে টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি। 

হরহামেশা তাই বলের চেয়ে কম রানের স্কোরে আটকে গেছে দলগুলো। ১৩৭ রানের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর এসেছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে কানাডার ইনিংসে। যেখানে যেখানে চলতি বিশ্বকাপের ২০ দল খেলেছে কমপক্ষে চারটি ম্যাচ, সেখানে বিশ্বের আর কোনো মাঠেই সর্বোচ্চ স্কোর ১৫০ রানের কম নেই। অবশ্য নিউইয়র্কের পিচে যে টিকে থাকাটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যারা টিকেছেন, তারাও কী স্বস্তিতে ছিলেন! 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে ধীরগতির তিনটি ফিফটির দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, তিনটিই এসেছে নিউইয়র্কে। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৫২ বলের ফিফটিতে লেগেছে সবচেয়ে বেশি বল। এরপর আছেন ৫০ বলে ফিফটি হাঁকানো ডেভিড মিলার। সূর্যকুমার যাদবও পারেননি ৪৯ বলের আগে তার ফিফটি পূর্ণ করতে।

এই যখন অবস্থা, ব্যাটারদের মনোভাব কেমন ছিল, তা অনুমান করে চমক হাসানের সেই গানের লাইনটাকে একটু বদলে তুলে ধরা যায় এভাবে— ছাইড়া দে মা, কাইন্দা বাঁচি, নিউইয়র্কে ব্যাটিং করব না। ক্লাসেন কী আর এমনি বলেছেন, 'আমার মনে হয়, সব ব্যাটারই এখান (নিউইয়র্ক) থেকে বের হওয়ার জন্য আগ্রহী। বোলারদের এখানে থাকতেই ভালো লাগবে।'

বোলারদের তো স্বপ্নের সময়ই কেটেছে নাসাউ কাউন্টিতে। যেখানে দিন দিন বোলারদের জন্য সাহায্যের পরিমাণ কমে আসছে, সেখানে নিউইয়র্কের পিচ দুহাত ভরে দিয়েছে তাদের। সেসব সহায়তা কাজে লাগিয়ে তারা বোলিং করেছেন মাত্র ১৭.২২ গড়ে। বোলারদের এত কম গড়ও যে বিশ্বের আর কোনো ভেন্যুতে নেই, সেটা বলে না দিলেও চলবে নিশ্চয়ই। 

টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিং না দেখা গেলেও কয়েকটি লো-স্কোরিং থ্রিলার অবশ্য হয়েছে নিউইয়র্কে। কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করে জয়ের তালিকার প্রথম দুটি রেকর্ডও নাসাউ কাউন্টিতেই হয়েছে এবারের আসরে।

গত বুধবার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া ম্যাচটিই নিউইয়র্কের মাঠে সর্বশেষ। ওই ম্যাচের পরই শুরু হয়ে গেছে স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলার কার্যক্রম। ছয় সপ্তাহের মধ্যে 'অতীত' হয়ে যাবে নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। অস্থায়ী এই স্টেডিয়াম যদিও স্থায়ীভাবেই নিজের নাম রেকর্ডবুকে রাখার কাজটা করে গেল।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

8h ago