বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ ২০২২

জাকিরের কীর্তি ছাড়া বাকি সব পুরনো গল্প

শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১০২ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭২ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ বাঁচাতে শেষ দিনে ৪ উইকেট নিয়ে পড়ে থাকতে হবে। জিততে হলে নিতে হবে ২৪১ রান। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে খুব একটা রোমাঞ্চের অপেক্ষা থাকছে না শেষ দিনে।
Zakir Hasan & Mushfiqur Rahim
জাকির হাসানের সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের উচ্ছ্বাসা। তিনি নিজে যদিও দলের দাবি মেটাতে পারেননি পরে। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনে শেষে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে বড় হারই। অনুমিতভাবেই এদিনও আলগা শট উইকেট ছুঁড়ে দেওয়া, যথেষ্ট নিবেদন নিয়ে খেলতে না পারার দৃশ্য দেখা গেছে। ব্যতিক্রম কেবল জাকির হাসান। তার কীর্তির আলো ছাড়া নাজমুল হোসেন শান্তর কথাও বলা যায়, উদ্বোধনী জুটিতে নিবেদন দেখিয়েছেন তিনি। তবে বাকিদের ব্যর্থতায় আশার কথা বলার আর কোন পরিস্থিতি বহাল নেই।

শনিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১০২ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭২ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচ বাঁচাতে শেষ দিনে ৪ উইকেট নিয়ে পড়ে থাকতে হবে পুরো দিন। জিততে হলে নিতে হবে ২৪১ রান। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে খুব একটা রোমাঞ্চের অপেক্ষা থাকছে না শেষ দিনে।

২২৪ বলে খেলা জাকিকের ১০০ রানের ইনিংসটা থাকল প্রাপ্তি হয়ে। টেস্টে অভিষেকে সেঞ্চুরি করা চতুর্থ বাংলাদেশি ক্রিকেটার তিনি। এক জায়গায় অনন্য। ওপেনার হিসেবে অভিষেকে তার আগে সেঞ্চুরি করতে পারেননি কোন বাংলাদেশি।

৫১৩ রানের লক্ষ্যে নেমে আগের দিন বিনা উইকেটে ৪২ তুলেছিলেন জাকির-শান্ত। এদিন সকালের সেশন তারা কাটান স্বপ্নের মতো। মোহাম্মদ সিরাজ, উমেশ যাদবদের সহজে সামলে দেওয়ার পর রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে হতাশ করতে থাকেন তারা। কোন উইকেট না হারিয়ে গোটা এক সেশন পার করে দেয় বাংলাদেশ।

লাঞ্চ বিরতির সময় বিনা উইকেটে ১১৯ রান দেখাচ্ছিল বেশ উজ্জ্বল। আশাবাদী মানুষদের বুক হচ্ছিল চওড়া। বিরতির পর নেমেই অবশ্য ধৈর্য্যুচুতি। যিনি প্রথম সেশনে ছিলেন ভীষণ ফোকাসড, অফ স্টাম্পের বাইরের বলগুলো যিনি দেখছিলেন পরিষ্কার চোখে। মনঃসংযোগ নড়ে যায় তার লাঞ্চের পরই। উমেশের অনেক বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ক্যাচ দেন। বিরাট কোহলি তা ছেড়ে দিলেও দারুণ রিফ্লেক্সে দুইবারের চেষ্টায় লুফেন রিশভ পান্ত। ১৫৬ বলে ৬৭ করে থামেন শান্ত।

Zakir Hasan
সেঞ্চুরির পথে জাকির হাসান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তিনে নেমে ইয়াসির আলি আরেকবার ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে ৪ রান করা ব্যাটার দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ৪ রান। এবারও বোল্ড। তবে এবার তাকে হালকা টার্ন করা বলে ছেঁটেছেন আকসার প্যাটেল। জাকির ছিলেন অবিচল, টিকিয়ে রাখছিলেন দলের লড়াই।

চারে নেমে লিটন দাস ছিলেন তার ছায়া হয়ে। ভারতীয় ফিল্ডাররা টের না পাওয়ায় উমেশের বলে কট বিহাইন্ড হয়েও শূন্য রানে বেঁচে যান। জীবনটা কাজে লাগে। থিতু হতে অনেকটা সময় নিলেও আড়ষ্টতা থেকে বেরুতে পারেনি।

রিষ্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবকে খেলতেই পারছিলেন না। ডিফেন্সের দুর্বলতায় পরে উড়িয়ে মারার কৌশল। সেটাই ডেকে আনে তার বিপদ। টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারেননি,  ব্রেন ফেড  উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে  দেন সহজ ক্যাচ। তাতে ভাঙে জাকিরের সঙ্গে তার ৪১ রানের জুটি। ৫৯ বলে ১৯ করা লিটনের বিদায়ের পরও ভরসা সেই জাকির।

চা-বিরতির পর দ্রুতই ছুটে যান সেঞ্চুরির দিকে। কুলদীপকে  লং অফ দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারার পর আকসারকে সুইপ করে বাউন্ডারি মেরে দেন লাফ, প্রথম সেঞ্চুরির আনন্দ একটু বেশিই হওয়া স্বাভাবিক। ছুটে এসে তাকে বাহবা দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে গেল দুই বছর ধরে সর্বাধিক রান করেছেন। 'এ' দলের হয়ে ভারত 'এ' দলের বিপক্ষে কদিন আগে সেঞ্চুরি করে ডাক পান টেস্ট। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান তিনি। তবে সেঞ্চুরির পর পরই অশ্বিনকে ফ্লিকের মতো করতে গিয়ে ইতি হয় জাকিরের।

এরপরই যেন মিনি ধস।  সাকিব আল হাসান নেমেই অস্থিরতায় ভুগছিলেন। ঝুঁকি নিয়ে খেলছিলেন বড় শট। আরেক পাশে মুশফিকুর রহিম সময় নিয়ে থিতু হয়েও আগাতে পারেননি। আকসারের হালকা টার্ন করা বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে সামলাতে পারেননি, ভেঙে যায় তার স্টাম্প।

কিপার নুরুল সোহান ক্রিজে এসে টিকেছেন স্রেফ ৩ বল। আকসারের বলে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন। স্টাম্পিংয়ে কাবু হয়ে বিদায় নেন ৩ রান করে।

দিনের শেষ ভাগটা মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে সাকিব পার করে দিলেও তাদের ব্যাটিং আসলে দিচ্ছে না ভরসার ছবি। সাকিব এখনো বেশ নড়বড়ে। মিরাজের পেছনে নেই স্বীকৃত কোন ব্যাটার। বাংলাদেশের অপেক্ষায় তাই বড় হারই।

Comments

The Daily Star  | English
digital security act

Press freedom index: Bangladesh falls 2 spots, only Afghanistan worse in South Asia

The country was ranked 165th among 180 nations, placing it only above Afghanistan among South Asian countries

31m ago