আইরিশদের গুঁড়িয়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সর্বোচ্চ জয়। এদিন উইকেটের ব্যবধানেও নিজেদের সর্বোচ্চ জয় পেল টাইগাররা। প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে পেল ১০ উইকেটের জয়।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ভোরে হয়ে গেল এক পলশা মুষলধারে বৃষ্টি। ম্যাচ শুরুর আগে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হলো আরও কয়েক দফা। দিনভর ছিল মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি খেলা। যা পেসারদের জন্য আদর্শ কন্ডিশন। আর এমন কন্ডিশনে ছড়ি ঘোরালেন তিন টাইগার পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন। গড়লেন নতুন ইতিহাস। দেশের ক্রিকেটে প্রথমবার পেসাররা পেলেন ১০ উইকেট। এরপর বাকি কাজ সহজেই সারলেন দুই ওপেনার। বাংলাদেশ পেল আরও একটি দুর্দান্ত জয়।

বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ব্যাট করতে নেমে ২৮.১ ওভারে মাত্র ১০১ রানে গুটিয়ে যায় আইরিশরা। জবাবে ২২১ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে টাইগাররা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল বাংলাদেশ।

এর আগে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সর্বোচ্চ জয়। এদিন উইকেটের ব্যবধানেও নিজেদের সর্বোচ্চ জয় পেল টাইগাররা। প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে পেল ১০ উইকেটের জয়। অন্যদিকে, এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ উইকেটে হারের স্বাদ পেল আইরিশরা।

তবে আগের দুই ম্যাচের মতো এদিনও টস জিতে নিয়েছিল আয়ারল্যান্ডই। কিন্তু বেছে নেয় ব্যাটিং। আগের দুই ম্যাচে প্রায় একই কন্ডিশনে আগে বোলিং করে তেমন সুবিধা করে উঠতে না পারাতেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটাও কাজে লাগেনি। টাইগার পেসারদের আগ্রাসনে দাঁড়াতেই পারেননি তেমন কেউই। পঞ্চম উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লরকান টাকার ও জর্জ ডকরেল। এছাড়া বাকি সবাই ছিলেন আসা যাওয়ার মাঝে।

প্রথম চারটা ওভার অবশ্য দেখে শুনেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার স্টিফেন ডোহানি ও পল স্টার্লিং। চতুর্থ ওভারে আসে প্রথম বাউন্ডারি। সবমিলিয়ে ৪ ওভারে তখন রান মাত্র ৮। পঞ্চম ওভারের বলেই হাসান মাহমুদকে বাউন্ডারি মারেন ডোহেনি। তবে এক বল পরেই হাসানের পাল্টা আঘাত। সেই ডোহেনিকে ফিরিয়ে ভাঙেন ওপেনিং জুটি। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে।

এরপর ইনিংসের নবম ওভারে এ তরুণ দেন জোড়া ধাক্কা। পল স্টার্লিং ও হ্যারি ট্যাক্টর দুই ব্যাটারকেই ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। হাসানের তিন উইকেট শিকারের পর মঞ্চে আসেন তাসকিন। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নিকে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করেন। ফলে ২৬ রানেই চার উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।

এরপর উইকেটরক্ষক-ব্যাটার টাকারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ক্যাম্ফার। ৪২ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। তাতে মিলছিল লড়াইয়ের আভাস। তবে বড় ক্ষতি করার আগেই এ জুটি ভাঙেন ইবাদত। টাকারকে ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। তার ঠিক পরের বলে জর্জ ডকরেলকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি করেন এ পেসার। কিন্তু পরের ওভারে ফিরে তার হ্যাটট্রিক বলে মিড উইকেটে ঠেলে তিন রান নেন ক্যাম্ফার।

এর পরের বল হাতে আবার জোড়া ধাক্কা দেন তাসকিন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে নাসুম আহমেদের ক্যাচে পরিণত করার পর মার্ক অ্যাডাইরকে বোল্ড করে দেন তিনি। ক্যাম্ফার অবশ্য এক প্রান্ত আগলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে তাসকিনের ক্যাচে পরিণত করে ফেরান হাসান। পরের ওভারে ফিরে গ্রাহাম হিউমকে ফিরিয়ে নিজের ফাইফার পূরণ করেন এ তরুণ। গ্রাহাম হিউম এসে খানিকটা সঙ্গ দেন ক্যাম্ফারকে।

১৭ রানের জুটির পর একা লড়তে থাকা ক্যাম্ফারই দেন বিদায় নেন আগে। হাসানের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে টপ এজড হয়ে ফাইন লেগে তাসকিনের হাতে জমা পড়েন তিনি। এরপর হিউমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের ফাইফার পূরণ করেন হাসান। প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫ উইকেট পাওয়ার স্বাদ নেন এই ডানহাতি পেসার। এছাড়া তাসকিন ৩টি ও ইবাদত ২টি উইকেট নেন।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে জয় তুলে নিতে কোনো বেগই পেয়ে হয়নি টাইগারদের। শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করে দুই ওপেনারের ব্যাটে পৌঁছে যান লক্ষ্যে। লক্ষ্য ছোট হলেও নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে স্বাভাবিক ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার। তবে দেখার বিষয় ছিলে কে তুলে নিতে পারেন ফিফটি। শেষ পর্যন্ত পেরেছেন লিটন। ৫০ রানে থাকেন অপরাজিত। ৩৮ বলে ১০টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৪১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন হার না মানা ৪১ রান।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago