অন্তত আটটি বিপিএল ম্যাচ সন্দেহের আওতায়

BPL fixing

চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ইতিমধ্যেই একাধিক বিতর্কে জর্জরিত, যার মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি দমন ইউনিট (এসিইউ) অজ্ঞাত পরিচয় সূত্রের খবর এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আটটি ম্যাচ স্পট-ফিক্সিং এবং ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের সন্দেহে চিহ্নিত করেছে।

এসিইউ অন্তত ১০ জন খেলোয়াড় ও চার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে মনিটর করছে। ১০ জন ক্রিকেটারের মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, দুইজন বয়সভিত্তিক পর্যায়ের বাংলাদেশি খেলোয়াড় এবং দুইজন বিদেশী ক্রিকেটার। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে, দুর্বার রাজশাহী এবং ঢাকা ক্যাপিটালসের সবচেয়ে বেশি ১২টি রেড ফ্ল্যাগ (সন্দেহজন কর্মকান্ড)। সিলেট স্ট্রাইকার্সের ছয়টি এবং চট্টগ্রাম কিংসের রয়েছে দুটি।

এদিকে, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃক দেখা নথি অনুযায়ী, প্রশ্নবিদ্ধ ম্যাচগুলো হল: ফরচুন বরিশাল বনাম রাজশাহী (৬ জানুয়ারি), রংপুর রাইডার্স বনাম ঢাকা (৭ জানুয়ারি), ঢাকা বনাম সিলেট (১০ জানুয়ারি), রাজশাহী বনাম ঢাকা (১২ জানুয়ারি), চট্টগ্রাম বনাম সিলেট (১৩ জানুয়ারি), বরিশাল বনাম খুলনা টাইগার্স (২২ জানুয়ারি), চট্টগ্রাম বনাম সিলেট (২২ জানুয়ারি) এবং রাজশাহী বনাম রংপুর (২৩ জানুয়ারি)।

এই ম্যাচগুলোতে, বোলারদের পরপর তিনটি ওয়াইড বল করা, বড় নো-বল, সন্দেহজনক খেলোয়াড় নির্বাচন এবং বড় রান তাড়া করার সময় মাঝের ওভারগুলোতে ধীর ব্যাটিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। নথিগুলি আরও পরামর্শ দেয় যে এসিইউ যে বিষয়গুলি বিবেচনা করছে তার মধ্যে রয়েছে ম্যাচ ম্যানিপুলেশন, প্রভাবিত বেটিং মার্কেট এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, জড়িত খেলোয়াড়দের নাম। যদিও সাতটি ফ্রাঞ্চাইজির জন্য নিযুক্ত সাত এসিইউ কর্মকর্তার দৈনিক ভাতা, থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করেছে সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাজিগুলো। এতে করে তাদের কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিসিবি কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,  'বিসিবি'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা [নিজামুদ্দিন চৌধুরী] এবং [বিসিবি] সভাপতি [ফারুক আহমেদ] উভয়েরই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল যে যখন এসিইউ কর্মকর্তারা দলের সাথে থাকেন, তখন তাদের খরচ যদি সেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি বহন করে তবে তারা কীভাবে সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে। তারা অবশ্যই পক্ষপাতদুষ্ট হবে।'

'যখন আমি তাদের বিষয়টি বললাম, সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উভয়েই বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু পরে কিছুই পরিবর্তন হয়নি, আমি জানি না। কিন্তু এটি (এসিইউ কর্মকর্তাদের খরচ ফ্র্যাঞ্চাজিদের বহন) স্পষ্টতই একটি অযৌক্তিক ব্যাপার।'

এসিইউর ইন্টিগ্রিটি কর্মকর্তারা সরাসরি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে, এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে এসিইউর অজ্ঞাত পরিচয় সূত্রের খবর এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের উপর নির্ভরতা ইঙ্গিত দেয় যে অনেক বিষয় ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখা হতে পারে।

এই বিপিএলে আরও কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনা দেখা গেছে। দ্য ডেইলি স্টার অন্তত দুইজন ক্রিকেটারকে অফিসিয়াল টিম তালিকার বাইরে চিহ্নিত করেছে - রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে একজন করে - যাদের খেলোয়াড়দের ডাগআউটে দেখা গেছে।

বিসিবির এসিইউ প্রধান, মেজর (অব.) রায়হান আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন তাদের কারও জন্যই কোনও পিএমওএ [প্লেয়ার্স ম্যাচ অফিশিয়ালস এরিয়া] জারি করা হয়নি। প্রমাণ দেখানোর পর তিনি বলেন, তারা এটি দেখবেন।

পিএমওএ-তে ড্রেসিং রুম, ডাগআউট, নেট, ডাইনিং এরিয়া, মেডিকেল রুম এবং খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ এবং ম্যাচ কর্মকর্তারা ব্যবহৃত অপারেশনাল রুম অন্তর্ভুক্ত।

পিএমওএ ছাড়া ডাগআউটে থাকা কেবল নিরাপত্তা প্রোটোকল লঙ্ঘনই করে না বরং স্পট-ফিক্সিং এবং ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের প্রচেষ্টাসহ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সন্দেহজনক কার্যক্রম সম্পর্কেও সন্দেহ সৃষ্টি করে।

রায়হান বলেন, 'যদি তারা ম্যাচের সময় সর্বদা ডাগআউটে থাকে, তবে এটি আমার জন্য উদ্বেগের বিষয়। তিনি কোনও অন্যায় উপায়ে পাস নিয়ে থাকতে পারেন,।'

তিনি স্বীকার করেন যে তারা এই বছরের প্রতিযোগিতায় কয়েকটি কথিত সন্দেহজনক ম্যাচ নিয়ে কাজ করছেন, 'এটি আন্তর্জাতিক এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খুব সাধারণ। যখন কোনও টুর্নামেন্ট হয়, তখন আমরা অনেক জায়গা থেকে টিপস (তথ্য) পাই। আইসিসির ইন্টেলিজেন্স হাব, আমাদের এসিইউ নেটওয়ার্ক এবং মিডিয়ারও তাদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাই এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া।'

এসিইউতে পর্যাপ্ত স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকার বিষয়েও দুঃখ প্রকাশ করেন রায়হান, 'দুবাই আইএলটি২০-তে, প্রতিটি ম্যাচের জন্য একজন আইসিসি এসিইউ কর্মকর্তা রয়েছেন। এখানে আমি ৪৬টি ম্যাচই কভার করছি। ইন্টিগ্রিটি কর্মকর্তারা এখানে স্থায়ীভাবে কাজ করছেন না। তারা এখানে আসে, কিছু সময় কাজ করে এবং তারপর চলে যায়।'

২০১২ সালে শুরুর পর থেকে, বিপিএল প্রায়ই বিতর্কে জড়িয়েছে, স্পট-ফিক্সিং এবং ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রাক্তন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ২০১৩ সালে বিপিএলে ম্যাচ এবং স্পট-ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে বিপিএল দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল তাকে আট বছরের জন্য (তিন বছর স্থগিত) নিষিদ্ধ করে।

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

2h ago