প্রথম ওয়ানডে

মালানের দারুণ সেঞ্চুরিতে হতাশায় পুড়ল বাংলাদেশ

Dawid Malan
সেঞ্চুরির পথে মালানের শট। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আগে ব্যাটিং বেছে নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া কেউই পেলেন না বলার মতো রান। উইকেটে বোলারদের অনেক রসদ থাকায় অল্প পুঁজি নিয়েও আশা ছিল। তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের ঝলকে সেই আশা বড়ও হয়েছিল একটা সময়। তবে চাপে থাকা দলকে উদ্ধার করে দারুণ সেঞ্চুরিতে কাজ সারলেন ডাভিড মালান। তামিম ইকবালের দল পুড়ল হতাশায়।

বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। শান্তর ফিফটিতে বাংলাদেশের ২০৯ রানের পুঁজি ৮ বল আগে পেরিয়ে যায় সফরকারীরা। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল জস বাটলারের দল।

পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে শুরুতে সময় নেওয়া মালান পরে আগ্রাসী হয়ে অপরাজিত থাকেন ১১৪ রানে। ১৪৫ বল খেলে তিনি মারেন ৮ চার ও ৪ ছক্কা। ওয়ানডেতে তার এটি টানা দ্বিতীয় শতক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কিম্বার্লিতে সবশেষ ম্যাচও সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছিলেন তিনি।

ওয়ানডে ম্যাচে ২১০ রানের লক্ষ্যটা সহজই বলা চলে। কিন্তু বোলারদের জন্য অনেক রসদ থাকা মিরপুরের উইকেটে তা আসলে তত সহজ না, সেটা শুরুতেই বুঝিয়ে দেন সাকিব। তার প্রথম বলেই উঠেছিল ক্যাচ। তাতে সাফল্য না এলেও ওই ওভারেই প্রথম হাসি বাংলাদেশের। আগ্রাসী জেসন রয় সাকিবকে এগিয়ে এসে ওড়াতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। মিড অন থেকে ছুটে নিরাপদে তা হাতে জমান অধিনায়ক তামিম। দুজনের মধ্যে বিরোধের চলমান বিতর্ক ছাপিয়ে মাঠে উদযাপন করেন শীর্ষ দুই তারকা।

তিনে নামা মালান উইকেটের পরিস্থিতির সঙ্গে বেশ কিছুটা অবগত ছিলেন। বিপিএলের অভিজ্ঞতা থাকায় এসব উইকেটে কীভাবে খেলতে হয় সেই তরিকা ভালোই জানা তার। ফিল সল্টকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৪৩ বলে ৩১ রান।

Bangladesh cricket team
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ওপেনার সল্ট থিতু হওয়ার সুযোগ পাননি। তাইজুলের বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ধরেন ড্রেসিংরুমের পথ। জেমস ভিন্স মিডল অর্ডারে দিতে পারেননি ভরসা। তাইজুলের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন তিনি।

অধিনায়ক বাটলারের উপর দায়িত্ব ছিল বেশি। দ্রুত থিতু হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। স্পিন সামলেন নিচ্ছিলেন ভালোভাবে। তাসকিনকে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরিয়ে স্লিপে ফিল্ডার রেখে ফাঁদ পাতেন তামিম। এতেই কাজ হয়ে যায়। তাসকিনের বাড়তি বাউন্সের বল কাট করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি বাটলার। স্লিপে দাঁড়ানো শান্ত নেন সহজ ক্যাচ।

৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ডের হয়ে মালানের সঙ্গে হাল ধরেন অভিষিক্ত উইল জ্যাকস। বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতা থাকা দুই ব্যাটারের জুটি জমে উঠছিল। রানের চাকা সচল রেখে থিতু হয়ে যান জ্যাকস। বিপদ যখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে তখনই উইকেট পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

মিরাজের বলে স্লগ সুইপে ওড়াতে গিয়ে পুরো ব্যাটে সংযোগ করতে পারেননি জ্যাকস। ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচে বিদায় নেন ৩১ বলে ২৬ রান করে। এতে ভাঙে পঞ্চম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি।

এক প্রান্তে অবিচল থাকা মালান ফিফটি স্পর্শ করতে লাগান ৯২ বল। ফিফটির পর নিজেকে মেলে ধরতে থাকেন তিনি। অফ স্পিনার মিরাজকে ওড়ান চার-ছক্কায়। মঈন আলির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে জমে ওঠে তার জুটি। মঈন অস্থিরতায় না ভুগলে এই জুটি বড় হতে পারত আরও। মিরাজ তার স্পেলের শেষ ওভারে অ্যারাউন্ড দ্য উইকেটে ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড করে দেন মঈনকে।

৩২ বলে ১৪ করে আউট হন বাঁহাতি মঈন। ৫৬ বলে থামে দুজনের ৩৮ রানের জুটি। ইংল্যান্ডের দিকে হেলে পড়া ম্যাচে ফের জেগে ওঠে বাংলাদেশের আশা। ক্রিস ওকস মালানকে মাত্র ২০ রানের জুটিতে সঙ্গ দেন। তাইজুলের আচমকা লাফানো বলে ব্যাটে লেগে ক্যাচ উঠে যায় তার। এরপর বাংলাদেশের জেতার মাঝে বাধা ছিলেন কেবল মালান।

কিন্তু সেই বাধা আর দূর করতে পারল না স্বাগতিকরা। অষ্টম উইকেটে আদিল রশিদকে নিয়ে ৫৯ বলে ৫১ রান তুলে কাজ সেরে ফেলেন তিনি। ৫০ করতে তিনি যেখানে লাগিয়েছিলেন ৯২ বল, বাকি ৬৪ রান আনেন স্রেফ ৫৩ বলে।

দুপুরে টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে ভালো শুরু পান তামিম। তবে আরেক পাশে লিটন দাস ছিলেন গুটিয়ে। জোফরা আর্চারের কিছু আলগা বল কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান আনছিলেন তামিম। প্রথম ৮ বল কোনো রান না নেওয়া লিটন রানের খাতা খোলার পরই ক্রিস ওকসের বলে পুল করে মেরেছিলেন ছক্কা। কিন্তু ওকসই তার হন্তারক। হালকা ভেতরে ঢোকা বল লাইন মিস পায়ে লাগান। এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেও লাভ হয়নি তার।

তামিম থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। তার উপর ছিল বড় ভরসা। কিন্তু মার্ক উড বল হাতে নিয়েই ভড়কে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। উডের বাড়তি গতি সামাল দিতে না পেরে স্টাম্প খোয়ান ৩২ বলে ২৩ রান করে।

তিনে নেমে দ্রুতই থিতু হয়ে যান শান্ত। বাউন্ডারি বের করে নিয়মিত। তার সঙ্গে মিলে জুটি পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে ৬২ বলে ৪৪ রানের জুটির পর থামতে হয় মুশফিককে। ৩৪ বলে ১৭ করা বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার রশিদের লেগ স্পিন  স্লগ সুইপের চেষ্টায় ওঠান সহজ ক্যাচ। সাকিব আল হাসান এসে টিকতে পারেননি। মঈনের অফ স্পিনে সুইপ করতে গিয়ে খোয়ান স্টাম্প।

১০৬ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। তারা যোগ করেন ৫৩ রান। তবে লেগে যায় ৮০ বল। বিশেষ করে, শান্ত হয়ে পড়েন খোলসে বন্দি। ৬৭ বলে হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর রশিদের গুগলি পুল করায় চেষ্টায় থামেন তিনি। শর্ট মিডউইকেটে তার ক্যাচ নেন জেসন রয়।

আর ১৬ রান যোগ করেই বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন। মিরাজও পারেননি। এতে ভেস্তে শক্ত অবস্থায় যাওয়ার পরিকল্পনা। শেষ দিকে তাইজুলকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জুটিতে দলকে দুইশ পার করান তাসকিন। তখনই টের পাওয়া যাচ্ছিল, থেকে গেছে অন্তত ২০ রানের ঘাটতি। ম্যাচ শেষে হয়তো সেই আক্ষেপই বড় হলো তামিমদের।

Comments

The Daily Star  | English

Freedom fighter’s definition: Confusion, debate over ordinance

Liberation War adviser clarifies that Sheikh Mujib, Tajuddin, others in Mujibnagar govt are freedom fighters

13h ago