তাদের শেষ বিশ্বকাপ

দানি আলভেস: ৩৯ বছরেও যিনি অপরিহার্য!

কাতারে ফুটবলের মহাযজ্ঞ শুরু হতে বাকি নেই দুই সপ্তাহও। মরুর বুকে কারা করবে বাজিমাত, সেই বিতর্ক এখন সবখানে। উন্মাদনায় মাতলেও ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অনেক আবেগের হতে চলেছে ২০২২ বিশ্বকাপ। কারণ আসর শেষে অনেক তারকাই সমাপ্তি টানবেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাদের দীর্ঘ যাত্রার। দানিয়েল আলভেস দা সিলভার ভক্তদেরও হতে হবে অশ্রুসজল, বয়সের লাগামটা যে হাতে নেই এই জীবন্ত কিংবদন্তির!

ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ খেলোয়াড় বলা হয়ে থাকে ৩৯ বছর বয়সী আলভেসকে। ২১ বছরের ক্যারিয়ারে জিতেছেন রেকর্ড ৪৫টি ট্রফি। এমন কীর্তি নেই হালের সেরা লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, নেইমার জুনিয়র, রবার্ট লেভানদোভস্কিদেরও। আলভেসের না থাকার তালিকায় নেই কেবল একটি বিশ্বকাপ। সর্বোচ্চ মর্যাদার সোনালি ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখতে হলে এবারই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে তাকে, ব্রাজিলকে জিততে হবে শিরোপা।

ব্রাজিলের দ্বিতীয় স্তর লিগের দল ইসি বাহিয়ার বয়সভিত্তিক দলে যাত্রা শুরু আলভেসের। অনূর্ধ্ব ২০ দলে আলো ছড়িয়ে ২০০১ সালে সুযোগ পান মূল দলে। পরের বছর তাকে ধারে দলে টানে লা লিগার ক্লাব সেভিয়া। আলভেসের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে লোনের মেয়াদ শেষে তাকে কিনে নেয় তারা। সেভিয়ায় থাকাকালীনই ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। সেবছরের ১০ অক্টোবর ইকুয়েডরের বিপক্ষে খেলেন সেলেসাওদের হয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচ।

বল কাড়ায় তো পটু ছিলেনই সঙ্গে গতি ও উইং দিয়ে কার্যকর আক্রমণ গড়ার সক্ষমতার কারণে ব্রাজিল দলে জায়গাটা পাকা করে ফেলেন দ্রুতই। জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার পরের বছরই ট্রফি ধরা দেয় আলভেসের হাতে। ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকা জিতে নেয় সেলেসাওরা। ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোল করে দলের ৩-০ গোলের জয়ে অবদান রাখেন আলভেস।

পাঁচ বছর সেভিয়াতে কাটানোর পর ২০০৮ সালে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার দরজা খুলে যায় আলভেসের জন্য। এরপর পুরোটাই তার সাফল্যের গল্প। আট বছরের ক্যারিয়ারে ব্লগ্রানাদের হয়ে জিতেন ২৩টি ট্রফি। কাতালান ক্লাবে যোগ দেওয়াটা সৌভাগ্য বয়ে আনে আলভেসের জন্য। আবারও তার হাতে ধরা দেয় ট্রফি, ২০০৯ কনফেডারেশন্স কাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। ফাইনালে গোল না পেলেও আলভেসের একমাত্র গোলেই সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

দারুণ প্রতিভাবান এই রাইটব্যাক প্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলেন ২০১০ সালে। প্রথম আসর বর্ণিল হয়নি তার, কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। পরের বছরের কোপা আমেরিকাতেও স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বেঞ্চে বসেই দলের পরাজয় দেখতে হয়েছিল আলভেসকে।

তবে দানি আলভেস শিরোপাহীন অবস্থায় দিন কাটাবেন তা কি করে হয়! ২০১৩ সালে আবারও তার হাত স্পর্শ করে ট্রফি, সেবারও মঞ্চ ছিল কনফেডারেশন্স কাপ। ২০১৪ বিশ্বকাপ ভুলে যেতেই চাইবেন আলভেস। শিরোপার খুব কাছে গিয়েও সেমিতে জার্মান দানবে কুপোকাত হয় ব্রাজিল। ৭-১ গোলের সেই হারের যন্ত্রণা আজও পোড়ায় তাদের। সেই ম্যাচ ও কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠেই নামার সু্যোগ পাননি আলভেস।

এরপর প্রায় এক বছর ব্রাজিল দলে দেখা মিলেনি তার। দলে ফিরে আবারও হতাশা সঙ্গী হয় তার। ২০১৫ কোপা আমেরিকায় শেষ আটে থামে সেলেসাওরা, ২০১৬ এর আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই নিশ্চিত হয় বিদায়। আলভেসের ২০১৮ বিশ্বকাপ ভেস্তে যায় ইনজুরিতে। ফের দলে ফিরেন ২০১৯ সালে, এসেই পেয়ে যান অধিনায়কত্ব। সেবছর আবারও কোপা আমেরিকার শিরোপা উঁচিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে না পারার দুঃখ হয়তো কিছুটা ভুলতে পেরেছিলেন আলভেস।

২০১৯ এর শেষদিকে আবারও বাদ পড়েন দল থেকে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে ইনজুরি, শেষ পর্যন্ত দলে ফিরেন ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে। সর্বশেষ ২০২২ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে জায়গা পেয়ে চমকে দেন সকলকে। ৩৯ বছর বয়সে এই কীর্তি গড়ে বনে গেছেন বিশ্বমঞ্চে সেলেসাওদের হয়ে সুযোগ পাওয়া সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ফুটবলার।   

এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের হয়ে ১২৫টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন আলভেস। আগামী বিশ্বকাপে (২০২৬) তার বয়স দাঁড়াবে ৪৩। তাই এবারই সুবর্ণ সুযোগ হার না মানা এই ডিফেন্ডারের সামনে। তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাফিনহা, রিচার্লিসনের মতো অনুজরা জ্বলে উঠলে পূর্ণতা পেতেও পারে ব্রাজিলের 'মিশন হেক্সা'।

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago