ইরানকে ৬ গোলে বিধ্বস্ত করে বিশ্বকাপ শুরু করল ইংল্যান্ড

ফুটবল ঐতিহ্য আর শক্তিতে দুই দলের ফারাক যে কত বিশাল তা মাঠে নেমে যেন বোঝাতে শুরু করলেন ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা। ইরানের সীমানায় আক্রমণের স্রোত বইয়ে প্রথমার্ধেই তিন গোল আদায় করেন তারা। বিরতির পরও জারি থাকল আগ্রাসী ধারা, এলো আরও তিন গোল। দ্বিতীয়ার্ধে হালকা ঝলক ছাড়া পুরোটা সময় কোণঠাসাই হয়ে রইল ইরান। তাদেরকে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল গ্যারেথ সাউথগেটের দল।
সোমবার কাতারের আল রাইয়ান মাঠে বিশ্বকাপের 'বি' গ্রুপের ম্যাচে ইরানকে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে দুই গোল করেন বুকায়ো সাকা। একটি করে গোল আসে জুড বেলিংহাম, রাহিম স্টার্লিং, মার্কাস রাশফোর্ড ও জ্যাক গ্রিলিশের পা থেকে। ইরানের হয়ে দুটি গোলই শোধ দেন মেহদি তারেমি।
শুরুতেই বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আক্রমণ করতে থাকে ইংল্যান্ড। অষ্টম মিনিটে কাইরান ট্রিপিয়ারের বাড়ানো বল ধরে ডি বক্সে ক্রস করেছিলেন হ্যারি কেইন। কিন্তু রহিম স্টার্লি ছুটে এসে তাতে মাথা লাগাতে পারেননি। এরপর ইরানের গোলরক্ষক নাকে চোট পেলে মিনিট দশেক মতো খেলা বন্ধ থাকে। পরে তিনি স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন।
নতুন করে শুরুর পর ছন্দ পেতে কিছুটা সময় লাগে ইংল্যান্ডের। ২৭ মিনিটে ডান দিকে ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে সাকা মারেন দুর্বল শট। ইংল্যান্ডের চাপ সয়ে দু'একবার আক্রমণে উঠছিল ইরানও। তবে ভীতি ছড়াতে পারছিল না তারা।

২৯ মিনিটে আসে প্রথম সুযোগ। ট্রিপিয়ারের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে সাকা ক্রস করেছিলেন বক্সে। মেসন মাউন্ট বল ধরে যে শট মারেন তা অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। দুই মিনিট পর দারুণ সুযোগ হাতছাড়া হয় ইংল্যান্ডের। কর্নার থেকে পাওয়া বলে লাফিয়ে বেশ ভালো হেড করেছিলেন হ্যারি মাগুইর। কিন্তু তা বারে লেগে প্রতিহত হয়। গোল পেতে অবশ্য দেরি হয়নি। ৩৫ মিনিটেই আসে কাঙ্খিত মুহূর্ত।
মাঝ মাঠ থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণ থেকে বা পান্তে বল পেয়ে ক্রস বাড়ান লুক শো। লাফিয়ে উঠে দারুণ ক্ষিপ্রতায় তা জালে জড়ান জুড বেলিংহাম। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই তরুণ ইংল্যান্ডের জার্সিতে করলেন প্রথম গোল, সেই গোল আবার এলো বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে।

৪৩ মিনিটে আসে আরেক গোল। এবার গোলদাতা শুরু থেকে সপ্রতিভ উপস্থিতিতে নজর কাড়া সাকা। কর্নার থেকে বল পেয়ে মাগুইর হেডে বল নামিয়ে দেন সাকার পায়ে। জোরালো শটে জালের ঠিকানা খোঁজে নেন আর্সেনাল ফরোয়ার্ড।
খানিক পরই আবার উল্লাস। ৪৫ মিনিটে গোলকিপার জেরার্ড পিকফোর্ডের বাড়ানো শট থেকে বল পেয়ে বেলিংহাম পাস দেন কেইনকে। কেইনের বাড়ানো বল ফাঁকায় পেয়ে চমৎকার ফিনিশিং দেন রাহিম স্টার্লিং। বিরতির আগেই তিন গোলে এগিয়ে যায় ত্রি লায়ন্সরা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের ১০ মিনিটে একটা সুযোগ পেয়েছিল ইরান। প্রতি আক্রমণ থেকে বল নিয়ে ছুটে যান আহমদ নুরাল্লাহি। তার কাছ থেকে পাস নিয়ে মিলাদ মোহাম্মাদী দেন আলিরেজা জাহানবাখশকে, তার শট বাইরে যায় বারের অনেক উপর দিয়ে।
বিরতির পর ৫৩ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে বল দিয়ে বক্সে ঢুকিয়ে গিয়েছিলেন বেলিংহাম। কিন্তু বারের কাছে তিনি হারিয়ে ফেলেন তালগোল। ৫৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে কেইনের সঙ্গে বোঝা পড়ে করে বল নিয়ে ছুটে স্টার্লিং প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের বাধায় পড়ে হারান সুযোগ।
৬২ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করেন সাকা। স্টার্লিংয়ের কাছ থেকে বলের যোগান পেয়ে বক্সে ঢুকে দুজনকে কাটিয়ে তার নেওয়া প্লেসিং শট বুঝেই উঠতে পারেননি ইরানি গোলরক্ষক।
মিনিট দুয়েক পর এক গোল শোধ দিয়ে দেয় ইরান। ডান প্রান্তে সাদেঘ মহারামি কাছ থেকে বল পেয়ে আলী ঘোলিজাদেহ তা বাড়িয়ে দেন বক্সে। সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকার তারেমি মুহুর্তেই বল জড়িয়ে দেন জালে।
এই গোলের রেশ থাকতেই সাকার বদলি নেমে মার্কাস রাশফোর্ড আবার আনন্দে ভাসেন ইংল্যান্ডকে। এই গোলেরও সূত্রপাত করে দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক কেইন। মহারামির কাছ থেকে বল কেড়ে তিনি বাড়ান রাশফোর্ডের দিকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে বা পায়ের শটে ইরানের গোলরক্ষকে সহজেই পরাস্ত করে খোঁজে নেন জাল।
৭৭ মিনিটে তারেমি প্রতি আক্রমণ থেকে আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার তিনি মারেন বারের উপর দিয়ে।
৯০ মিনিটে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন জ্যাক গ্রিলিশ। এবার গোল এলো দুই বদলির নৈপুণ্যে। গ্রাহাম উইলসন ডান দিকে তীব্র গতিতে বল নিয়ে ছুটে যান ইরানের সীমানায়। বক্সের কাছে গিয়ে পাস বাড়ান গ্রিলিশের দিকে। নিখুঁত প্লেসিং শটে স্কোরশিটে নাম উঠান ম্যানচেস্টার সিটি তারকা।
যোগ করা সময়ের ৮ম মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন ইরানের সরদার আজমুন। তার জোরালো শট আঙুল লাগিয়ে উপরে দেন পিকফোর্ড। বারে লেগে তা যায় বাইরে। কর্নার থেকে পরে জটলার মধ্যে ইংলিশ ডিফেন্সের ভুলে একটা পেনাল্টি পেয়ে যায় ইরান। সেখান থেকে দ্বিতীয় গোল তারেমি। তার দুই গোল হয়ে থাকে ইরানের সান্ত্বনা।
Comments