চারবারের বিশ্বসেরা জার্মানিকে হারিয়ে এবার চমকে দিল জাপান

Japan

জার্মানির আগ্রাসী ফুটবলের জবাবে কোণঠাসা থেকে মাঝে মাঝেই ছন্দময় ফুটবলের ঝলকে লড়ছিল জাপান। এক গোলে পিছিয়ে বিরতির পর নেমে পুরো শরীরী ভাষা বদলে যায় তাদের। শেষ দিকে ৮ মিনিটের ব্যবধানে দারুণ দুই মুহূর্ত উপহার দিয়ে আদায় করে নেয় দুই গোল। আগের দিন সৌদি আরবের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হারের অঘটনের সুর ধরে জার্মানিকে এদিন ভড়কে দেয় তারা। তাতে এবারের বিশ্বকাপ দেখল আরেকটি অঘটন।

বুধবার আল রাইয়ান স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের 'ই' গ্রুপের ম্যাচ  জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে জাপান। ৩৩ মিনিটে  ইলকেয় গুন্দোগানের পেনাল্টিতে এগিয়ে গিয়েছিল জার্মানি। বিরতির পর জাপানের হয়ে ইতিহাস গড়া দুই গোল করেন রিৎসু দোয়ান ও টাকুমা আসানো।

কয়েকটি পরিসংখ্যান দিলে এই ঘটনার অর্থ আরও ব্যাখ্যা করা যায়। আগে গোল খেয়ে এই প্রথম বিশ্বকাপে কোন ম্যাচ জিতল জাপান। মাত্র ২৬.২ শতাংশ বল দখলে নিয়ে কোন ম্যাচ জেতারও রেকর্ড গড়ল জাপানিরা। 

আগে গোল দিয়েও ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের কোন ম্যাচ হারল জার্মানি। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আগে গোল দিয়েও অস্ট্রিয়ার কাছে ম্যাচ ৩-২ গোলে হেরেছিল তারা। এই ম্যাচের আগে টানা ২১ ম্যাচ অপরাজিত ছিল জার্মানি।

Japan

খেলার শুরুতেই জার্মানির সঙ্গে তাল মিলিয়েছিল জাপান। ৮ম মিনিটে আক্রমণে উঠে বল জালেও জড়িয়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু অফ সাইডের ফাঁদে তা বাতিল হয়।

নিজেদের সামলে খেলায় নিয়ন্ত্রণ নেয় জার্মানি। ১৭ মিনিটে কর্নার থেকে দারুণ হেড করেছিলেন অ্যান্থনিও রুডিগার। তার মারা হেড অল্পের জন্য যায় বার ঘেঁষে।

৩১ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় সাবেক চ্যাম্পিয়নরা । জশুয়া কিমিচের কাছ থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকেছিলেন ডাভিড রাউম। আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে জাপানি গোলরক্ষক  শুইচি গোন্ডা করে বসেন ফাউল। পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে নেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা গুন্দোগান।

গোল খেয়েও দমে না গিয়ে প্রতি আক্রমণ চালাচ্ছিল জাপান। তবে এশিয়ার দেশটি জার্মানির ডিফেন্সে গিয়ে বারবার খেই হারাতে থাকে।

Japan Fan

বিরতির আগে ব্যবধান বাড়াতে তুমুল চাপ তৈরি করে জার্মানি। ৪২ মিনিটে মুলার-মুসিয়ালা-কিমিচ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ায় তৈরি করা আক্রমণ নষ্ট করেন হেলায়। ৪৫ মিনিটে  কিমিচের পাস থেকে বল নিয়ে জামাল মুসিয়ালা পেয়েছিলেন দারুণ সুযোগ। কিন্তু তার মারা শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। তার আগের মিনিটে সার্জ নাব্রি নষ্ট করেন আরেক সুযোগ।

বিরতির পর ৫১ মিনিটে আরেক সুযোগ হাতছাড়া হয় জার্মানির।  রাউম মুসিয়ালাকে বল বানিয়ে দিয়েছিলেন বক্সে। কিন্তু মুসিয়ালা ফের বারের উপর দিয়ে মেরে হারান সুযোগ।

৬০ মিনিটে বক্সের সীমানা থেকে গুন্দোগানের  মারা শট বারে লেগে প্রতিহত হয়ে বাইরে গেলে গোল বঞ্চিত হয় জার্মানি।  পরের মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে গোল পেতে পারত জাপানও। বল নিয়ে ছুটে কাওরু মিতোমা বা দিকে বাড়িয়েছিলেন টাকুমা আসানোর দিকে। তার মারা শট অল্পের জন্য যায় বাইরে।

৭০ মিনিটে জাপানের গোলরক্ষক শুইচি দেখান দুর্দান্ত নৈপুণ্য। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একাধিকবার দলকে গোলের হাত থেকে বাঁচান তিনি। কিমিচ ডিফেন্সের উপর দিয়ে বল দেন নেব্রির কাছে। তার প্রথম চেষ্টা ঠেকানোর পর নেব্রি ফের বল নিয়ে জালে জড়াতে যান। এবারও তাকে হতাশ করেন শুইচি।

৭৩ মিনিটে কিপিং জাদু দেখান ম্যানুয়াল নয়্যার। জুনিয়া ইটো মারা শট দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় বা দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি।

কিন্তু দুই মিনিট পর আর পেরে উঠেননি জার্মান কাপ্তান। কাওরু মিতোমা ছুটে গিয়ে বল বাড়ান তাকুমি মিনামিনোর দিকে। তার নেওয়া শট সরিয়ে দেন নয়্যার। ফিরতি বল পেয়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো বদলি রিৎসু দোয়ান জড়িয়ে দেন জালে। সমতায় ফেরার উল্লাসে মাতে জাপান।

৮৩ মিনিটে আসে জাপানের  অবিস্মরণীয় মুহুর্ত। ডিফেন্ডার  কো ইতাকুরা দুর্দান্ত এক লঙ পাস বাড়ান আসানোর দিকে। জাপানির ফরোয়ার্ড দারুণ দক্ষতায় বল নামিয়ে তীব্র গতিতে ঢুকে পড়েন জার্মান ডিফেন্সে। ডান দিক থেকে নেওয়া তার চোখ ধাঁধানো কোনাকুনি শট জড়িয়ে যায় জালে। অনেকটা যেন বিশ্ব জয়ের আনন্দে মাতে এশিয়ান দলটি।

গোল শোধে মরিয়া জার্মানি চালাতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। কিন্তু গোলমুখ আর খুলছিল না। যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে সেট পিস থেকে পাওয়া সুযোগ প্রতিহত হয় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের বাধায়। হতাশায় নুয়ে পড়েন নয়্যাররা। উৎসবে ফেটে পড়ে জাপান শিবির। এমন আনন্দের রাত নিশ্চিতভাবেই তাদের জীবনে খুব একটা আসেনি। 

Comments

The Daily Star  | English

Not going anywhere till the job is done: Adviser Wahiduddin Mahmud

When asked about the chief adviser's resignation the adviser said, 'But he did not say he was leaving'

1h ago