কাসেমিরোর লক্ষ্যভেদে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউটে ব্রাজিল

প্রয়োজনের মুহূর্তে দলের উদ্ধারকর্তা হয়ে এলেন কাসেমিরো। তার বুলেট গতির শট গড়ে দিল লড়াইয়ের পার্থক্য।
ছবি: এএফপি

গোলের দুয়ারে কড়া নাড়ছিল রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল তাদের প্রচেষ্টা। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র জালে বল পাঠালেও অফসাইডে তা বাতিল হলে হতাশা বাড়ছিল। প্রয়োজনের মুহূর্তে দলের উদ্ধারকর্তা হয়ে এলেন কাসেমিরো। তার বুলেট গতির শট গড়ে দিল লড়াইয়ের পার্থক্য। সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের নকআউটে পা রাখল শিরোপাপ্রত্যাশী সেলেসাওরা।

সোমবার রাতে ৯৭৪ স্টেডিয়ামে আসরের 'জি' গ্রুপের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল। শেষদিকে জয়সূচক গোলটি আসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার কাসেমিরোর পা থেকে। শিরোপাধারী ফ্রান্সের পর এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোতে উঠল তিতের শিষ্যরা। দুই ম্যাচে তাদের অর্জন পূর্ণ ৬ পয়েন্ট।

ম্যাচের অধিকাংশ সময় বল পায়ে রাখা ব্রাজিল আক্রমণেও এগিয়ে ছিল। যদিও চোটগ্রস্ত নেইমারকে ছাড়া কিছুটা এলোমেলো ছিল দলটি। রঙ হারিয়েছিল তাদের খেলা। গোলমুখে তাদের নেওয়া ১৩টি শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, সুইসরা গোলমুখে ছয়টি শট নিলেও কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। ফলে গোলরক্ষক অ্যালিসনকে অলস সময় পার করতে হয় গোলপোস্টের নিচে। এই পরিসংখ্যানে ফুটে ওঠে রক্ষণে সেলেসাওদের শক্তি।

ম্যাচের ১৩তম মিনিটে প্রথমবারের মতো ভীতি জাগানিয়া রূপে পাওয়া যায় ব্রাজিলকে। ফ্রেদের দারুণ রক্ষণচেরা পাসে বল পেয়ে যান ফাঁকায় থাকা স্ট্রাইকার রিচার্লিসন। তিনি ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ভিনিসিয়ুসকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিপদ ঘটার আগেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার নিকো এলভেদি বাধ সাধেন আক্রমণে।

এরপর থেকে শুরু হয় সেলেসাওদের আধিপত্য দেখানো। পরের মিনিটে গোলমুখে শট নেওয়ার পজিশনে থাকলেও গড়বড় করেন রিচার্লিসন। বল ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ব্যর্থ হন তিনি। ১৯তম মিনিটে লুকাস পাকেতার ক্রসে খুব কাছ থেকে পা ছোঁয়াতে পারেননি রিচার্লিসন।

২৭তম মিনিটে হতাশ করেন ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস। নইলে তখনই দেখা মিলত গোলের। ডান প্রান্ত থেকে রাফিনহার ক্রসে ফাঁকায় বল পেলেও কোণাকুণি শটে জোর দিতে পারেননি ভিনিসিয়ুস। দারুণ দক্ষতায় বল রুখে জাল অক্ষত রাখেন ইয়ান সোমার। চার মিনিট পর এদার মিলিতাওয়ের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে রাফিনহার দূরপাল্লার শটও লুফে নেন সুইস গোলরক্ষক।

৩৯তম মিনিটে ব্রাজিলকে রক্ষণ সামলাতে হয়। রিকার্দো রদ্রিগেজের ক্রস ব্রাজিলের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে পান রুবেন ভার্গাস। সামনে থাকা মার্কুইনহোসকে ফাঁকি দিলেও তিনি শট নেওয়ার আগে দারুণ ট্যাকলে বল কেড়ে নেন থিয়াগো সিলভা।

৪৪তম মিনিটে রাফিনহার কর্নারে হেড করেন সিলভা। বলে ছিল লক্ষ্যেই। সেটা বিপদমুক্ত করেন এলভেদি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ভার্গাসের কর্নারে মাথা ছোঁয়ান ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। বল চলে যায় দূরের পোস্টে। সেখানে সুইজারল্যান্ডের কেউ হেড করার আগে ডিফেন্ডার অ্যালেক্স সান্দ্রো বল বিপদমুক্ত করেন।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৫৩তম মিনিটে আক্রমণে ওঠে সুইসরা। সিলভান উইডমারের ক্রসে স্লাইড করেও পা লাগাতে পারেননি ফ্যাবিয়ান রেইডার। কিছুক্ষণ পর জিব্রিল সোয়ের শট ব্লক করেন সান্দ্রো। চার মিনিট পর ফ্রেদের কাছ থেকে বল পেয়ে যান ভিনিসিয়ুস। তিনি ছোট ডি-বক্সে ফেলেন দারুণ ক্রস। কিন্তু সার্বিয়ার বিপক্ষে আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা রিচার্লিসন বলে টোকা দিতে পারেননি।

সাত মিনিট পর জালে বল পাঠায় ব্রাজিল। কাসেমিরোর পাসে বাম প্রান্ত দিয়ে অনেকটা দৌড়ে ঠাণ্ডা মাথায় নজরকাড়া ফিনিশ করেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু বিধি বাম। আক্রমণে ওঠার সময় রিচার্লিসন অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি বাতিল করেন গোলটি।

এরপর কমে আসে খেলার গতি। সেটা বাড়াতে তিতে রাফিনহার বদলে আন্তোনি ও রিচার্লিসনের বদলে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে মাঠে নামান ৭৩তম মিনিটে। তারপরও সুইজারল্যান্ডের রক্ষণে গিয়ে দফায় দফায় খেই হারাচ্ছিল ব্রাজিল। ড্রই যখন ম্যাচের ফল হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল, তখনই সব আলো কেড়ে নেন কাসেমিরো। তার জোরালো হাফ-ভলি সোমারকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছায় দূরের পোস্টে। উল্লাসে মাতে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফলতম দলটি।

কাসেমিরোর গোলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন দুই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগো। বাম প্রান্ত থেকে পায়ের কারিকুরিতে ভিনিসিয়ুস খুঁজে নেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি নামা রদ্রিগোকে। তার ফ্লিক থেকে বল পেয়ে নিশানা ভেদ করেন রিয়ালের সাবেক তারকা কাসেমিরো।

গোল পেয়ে জেগে ওঠে ব্রাজিল শিবির। ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। কিন্তু পরের গোল আর আসেনি। ৮৭তম মিনিটে জেসুসের পাসে রদ্রিগোর শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান সোমার। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ভিনিসিয়ুস ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে। জেগে ওঠে সম্ভাবনা। কিন্তু তিনি বাজে টাচ নিলে বল বিপদমুক্ত করেন আকাঞ্জি।

পরের মিনিটে ছন্দময় ফুটবলে দারুণ একটি গোল পেতে পারত তিতের দল। সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো পাসে ফ্লিক করে ভিনিসিয়ুস খুঁজে নেন রদ্রিগোকে। তার শট জালের দিকেই যাচ্ছিল। তবে মাঝপথে শরীর দিয়ে বল ঠেকিয়ে নিশ্চিত গোল হজম করা থেকে সুইজারল্যান্ডকে ফের বাঁচান আকাঞ্জি। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মাতোয়ারা হয় ব্রাজিল।

গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের শেষ ম্যাচ ক্যামেরুনের বিপক্ষে। আগামী শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত একটায় মুখোমুখি হবে দুই দল। ক্যামেরুন দুই ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে সবার নিচে অবস্থান সার্বিয়ার। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে সুইজারল্যান্ড। ফলে তিন দলের সামনেই আছে দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ।

Comments

The Daily Star  | English

3 children run over by train in Mohakhali

Three children, aged 12-13, were killed after getting run over by a train in Mohakhali's Amtoli area this morning

30m ago
X