সোনালী প্রজন্মের বেলজিয়ামকে বিদায় করে নকআউট পর্বে ক্রোয়েশিয়া

থিবো কর্তুয়া (বায়ে) ও কেভিন ডি ব্রুইনার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যায় কি ঘটে গেছে। ছবি: টুইটার

পরের পর্বে যেতে ড্র করলেই চলত ক্রোয়েশিয়ার, জিততেই হতো বেলজিয়ামের। তবে আগ্রাসী ফুটবল খেলে শুরু থেকে জেতার চেষ্টা করেছে ক্রোয়েশিয়া, হাতছাড়া করেছে গোলের অনেক সুযোগ। মরিয়া বেলজিয়ামও চালিয়েছে একের পর এক আক্রমণ। শেষ দিকে বদলি নামা রোমেলো লুকাকো অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় একাই হাতছাড়া করেন চারটি  সহজ সুযোগ। ম্যাচ ড্র হওয়ায় ক্রোয়েশিয়ার হাসি তাই চওড়া, ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল বেলজিয়ামকে নিতে হচ্ছে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়।

বৃহস্পতিবার কাতারের আল রাইয়ান স্টেডিয়ামে 'এফ' গ্রুপের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছে বেলজিয়াম-ক্রোয়েশিয়া। অন্য ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেওয়ায় মরক্কো হয়েছে এই গ্রুপের সেরা। দুই নম্বরে থেকে তাই নকআউট রাউন্ড নিশ্চিত করেছে গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া।

গত বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া বেলজিয়াম এবার পার হতে পারল না গ্রুপ পর্বের বাধা। কেভিন ডি ব্রুইনা, এডেন হ্যাজার্ড, থিবো কর্তুয়া, লুকাকো। এই নামগুলো হয় শেষবারের মতো দেখল বিশ্বকাপ ফুটবল। বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের এই প্রতিনিধিরা মাঠ ছাড়লেন হতাশায় মাথা নুইয়ে। এর আগে ১৯৯৮ সালে একবারই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ইউরোপের দেশটি। 

 

খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই আক্রমণে যায় ক্রোয়েশিয়া। শুরুতেই বুঝিয়ে দেয় ড্র নয়, জিততেই নেমেছে তারা। পাল্টা আক্রমণে যেতে সময় নেয়নি বেলজিয়ামও।

১১ মিনিটে বেলজিয়ামের আসে বলার মতো সুযোগ। ডান প্রান্ত থেকে ক্রস পেয়ে ইয়্যানিক কারাস্কো নিয়েছিলেন শট। তার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন ক্রোয়েট কিপার ডোমিনিক লিভাকোভিচ।

১৩ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে বল টেনে প্রতি আক্রমণে এসে ড্রিস মের্টেন্সকে দারুণ বল বানিয়ে দিয়েছিলেন ডি ব্রুইনা। মের্টেন্স এমন সুযোগ বাজে শটে হেলায় হারান।

১৫ মিনিটে লুকা মদ্রিচের সেট পিস ধরে বক্সে জটলা তৈরি হয়। সেখানে কারাস্কা ফাউল করে বসেন ক্রামারিচকে। পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ভিএআরে সেই পেনাল্টি বাতিল হয় তার আগে হওয়া অফসাইডের কারণে।

পরের কয়েক মিনিট দুই দলই চেষ্টা চালায় আক্রমণের। মাঝমাঠ থেকে খেলা তৈরি হলেও আক্রমণভাগে এসে তা খেই হারাতে থাকে বারবার।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের একদম শেষ  মুহূর্তে  গোল পেতে পারত ক্রোয়েশিয়া। বোর্না সোসার ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন  ইয়ান ভের্তঘেন। কিন্তু বল চলে আসে জোসিপ জুরানোভিচের সামনে। তার নেওয়া ভলি যায় বাইরে দিয়ে।

বিরতির পর নেমে প্রথম আক্রমণে যায় বেলজিয়াম। ৪৯  মিনিটে ডি ব্রুইনার ক্রস থেকে বদলি নামা লুকাকু যে হেড নেন তা ধরতে সমস্যা হয়নি গোলরক্ষকের।

পরের মিনিটে গোল এসেই যাচ্ছিল ক্রোয়েশিয়ার। বক্সের সামান্য বাইরে দারুণ পরিস্থিতিতে বল পেয়েছিলেন মাতেও কোভাচিচ, শটও নিয়েছিলেন ঠিকঠাক। তবে পরাস্ত করতে পারেননি কর্তোয়াকে। ৫৪ মিনিটে ক্রোয়েশিয়াকে পর পর দুই বার হতাশ করেন কর্তোয়া। মার্সেলো ব্রোজোভিচের মাটি কামড়ানো শট ফিরিয়ে দেওয়ার পর মদ্রিচের বা পায়ের শটও ঠেকিয়ে দেন দারুণ দক্ষতায়। প্রবল চাপ তৈরি করে গোলের কাছে গিয়েও হতাশ হয় জাৎকো দালিচের দল।

৬০ মিনিটে অবিশ্বাস্য মিস করে বসে বেলজিয়াম। ডি ব্রুইনার পাস নিয়ে বক্সে ঢুকে কারাস্কা শট মারার আগেই রক্ষণে বাধাগ্রস্ত হন, বল দিক বদলে আসে ফাঁকায় দাঁড়ানো লুকাকোর পায়ে। এই ফরোয়ার্ড বিস্ময়করভাবে মারেন সাইড বারে!

পরের মিনিটে আবারও হতাশা উপহার দেন লুকাকো। এবার ক্রস পেয়ে সহজ হেড রাখতে পারেননি বক্সে।

৬৮ মিনিটে পেটকোভিচ কাটব্যাক করে ফাইনাল থার্ডে দিয়েছিলেন মদ্রিচের পায়ে। রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডারের নেওয়া শট তার ক্লাব সতীর্থ কর্তোয়ার পক্ষে ধরে ফেলা একদমই কঠিন হয়নি।

পরের ধাপে যাওয়ার সমীকরণ ফিকে হতে থাকায় আক্রমণে ধার বাড়ায় বেলজিয়াম, কিন্তু কোনভাবেই সুবিধা করতে পারছিল না তারা। উল্টো দারুণ সব আক্রমণ সাজিয়ে বেলজিয়ামকেও প্রবল চাপে রাখে ক্রোয়েশিয়া।

৮৭ মিনিটে দলকে তৃতীয় দফায় হতাশ করেন লুকাকু। এবার গোলমুখের সামনে দাঁড়িয়ে পা ঠিকমতো নাড়াতে পারেননি, তার পায়ে লেগে বল যায় বাইরে।

৯০ মিনিটে আরেকটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। এবারও সেই লুকাকো। থর্গান হ্যাজার্ডের দারুণ ক্রস উড়ে এসেছিল তার কাছে। শেষ মুহূর্তে নায়ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আরও এবার। এবার বক্সের সামনে গোলরক্ষকে একা পেয়েও শট নিতে পারেননি। তার শরীরে লেগে যাওয়া বল গোললাইন থেকে বাঁচান ক্রোয়েট গোলরক্ষক, পরের মিনিটে আরেকটি আক্রমণ থেকে লাগাতে পারেননি পা।

ম্যাচ শেষে সহকারী কোচ থিওরি ওঁরিকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন লুকাকো। এমন সহজ সব সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতায় হয়ত তীব্রভাবে দহন হচ্ছিল তার। দেশের হয়ে রেকর্ড গোলের মালিক, অনেক সাফল্যের নায়ক এদিন বনলেন খলনায়ক। 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

7h ago