ক্রিকেট উন্মাদনার মাঝে রজনীকান্তের ফোনের অপেক্ষায়

বাংলাদেশিদের জন্যে চেন্নাই ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাষাগত বাধা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারতে এলে বাংলাদেশের মানুষরা সাধারণত স্থানীয়দের সঙ্গে হিন্দিতেই কথাবার্তা চালিয়ে নেন। যে ভাষা নিয়ে ভালোই বোঝাপড়া আছে দেশের অধিকাংশের, সেটা বলিউড মুভির খাতিরেই।
কিন্তু চেন্নাইয়ে হিন্দির দক্ষতা কাজে লাগে একেবারে সামান্য অথবা লাগেই না। এই ভাষায় এখানে কেউ কথা বলেই না বলা চলে। স্থানীয়রা কথা বলে তামিল ভাষায়, তামিলনাডু রাজ্যের অফিসিয়াল ভাষা। শহর ঘোরার সময় আর যে ভাষাটি কানে আসে, তা হচ্ছে ইংরেজি।
তাই ইংরেজি শব্দের সঙ্গে হাত দিয়ে ইশারা-ইঙ্গিতে বোঝানো— এই দুইয়ের মিশ্রণে স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় বাংলাদেশি পর্যটকদের। অনেক সময়ই যদিও সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ভাষাগত এই বাধা চেন্নাই শহরে ঘুরে বেড়ানোতে তাই তৈরি করে কিছুটা যন্ত্রণাও।
যদিও এই সমস্যাটা যেন বাতাসে মিলিয়ে যায় স্রেফ একজনের নাম বললে। যে-ই না তার নাম উচ্চারিত হয়, স্থানীয়রা বুঝে যায় যে, তামিল না জানা একজন লোক ঠিক কোথায় যেতে চান।
সেই ব্যক্তি, অবশ্যই, ভারতীয় সিনেমার সুপারস্টার রজনীকান্ত।
৭২ বছর বয়সী এই অভিনেতা দক্ষিণি সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম আইকন। যাকে চেন্নাইয়ে দেবতার সম্মান দেওয়া হয়।
চেন্নাইয়ে তার বাসা যেন এক পর্যটন এলাকা! বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে তার ভক্তকূল জড়ো হন এই অঞ্চলে, আইকনিক এই অভিনেতাকে এক নজর দেখবেন বলে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসার পর এই প্রতিনিধির কাজের ফাঁকে যে ফুরসত মিলেছিল, সেই সময়টা তিনি কাজে লাগাতে চাইলেন রজনীকান্তের বাসা ভ্রমণে গিয়ে।
এই প্রতিনিধিকে তাহলে কী করতে হলো? আর কী! শুধু 'রজনীকান্ত' নামটা উচ্চারণ করলেই তো হয়ে যায়! অটোরিকশা চালক তৎক্ষণাৎ বুঝে যান কোথায় আমি যেতে চাই। মুখে হাসি ফুটিয়ে 'হ্যাঁ' সূচক কায়দায় মাথা নাড়েন তিনি, আর দেরি না করেই আমি যাত্রা শুরু করি সুপারস্টারের বাসার উদ্দেশ্যে।
খুব বেশিক্ষণ লাগেনি পয়েস গার্ডেনে পৌঁছাতে— একটি উন্নত আবাসিক এলাকা, যেখানে রজনীকান্তের বসবাস।
একটা জায়গা পর্যন্ত গিয়ে অটোরিকশা থামাতে হলো। পরের যাত্রা এই প্রতিনিধি করলেন পায়ে হেঁটে। আর কিছুক্ষণ পরই তিনি দাঁড়িয়ে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে, যেটার মূল ফটকের বাইরে নেমপ্লেটে নাম লেখা 'রজনীকান্ত'।
এই প্রতিনিধি শুধু একাই ছিলেন না সেখানে। আরও অনেক রজনীভক্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন— ১৮, রাগাভা ভিরা এভিনিউ, পয়েস গার্ডেনের সামনে। ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন সবাই।
সুপারস্টার রজনীকান্ত যদিও ছিলেন না বাড়িতে। তিনি শহরেরই বাইরে অবস্থান করছেন নিজের পরের মুভির শুটিংয়ের কাজে।
আমি তখন ভাবলাম, আমাকে কেবল ব্যাকগ্রাউন্ডে রজনীকান্তের বাড়ি রেখে তোলা কয়েকটি ছবিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
তবে বিনয়ী নিরাপত্তাকর্মীরা যখন জানলেন, দূর বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমি, তারা আমাকে রজনীকান্তের অটোগ্রাফসহ একটা ছবি দিলেন স্মারক হিসেবে। যেখানে লেখা 'গড ব্লেস' অর্থাৎ 'ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক'।
তারা আমাকে আমার নাম ও মোবাইল নম্বরও লিখে দিতে বললেন অতিথিদের জন্য রাখা ডায়েরিতে। তারা জানালেন, রজনীকান্ত মাঝেমধ্যেই সেই ডায়েরি খুলে দেখেন এবং এমনকি বাড়ি দর্শনে আগত অতিথিদের ফোনও করেন মন চাইলে।
রজনীকান্তের মহানুভবতার একটি ক্ষুদ্র নিদর্শন এটা। অনাহারীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা, গরীব শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা, দেশজুড়ে বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ— দক্ষিণি সিনেমার তারকা এসব কাজের জন্য প্রসিদ্ধ।
চোখের সামনে রক্তমাংসের শরীরে আমি তাকে দেখতে না পারলেও এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা ছিল। তার বাড়ি ঘুরে ফেরার পর থেকে আমার ফোন যখনই বেজে উঠছে এবং কোনো অপরিচিত নম্বর ভেসে উঠছে স্ক্রিনে, তাড়াহুড়ো করে ফোন ধরছি এই আশায় যে, অপর প্রান্তের মানুষটা হবেন খোদ সুপারস্টারই।
Comments