ডাচদের ডুবিয়ে সেমির সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল আফগানিস্তান

রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদির ফিফটিতে তারা সহজ লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে ৭ উইকেট হাতে রেখে।
ছবি: এএফপি

প্রথম ম্যাচ হেরে শুরু করা আফগানিস্তান স্মরণীয় এক বিশ্বকাপ পার করছে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে একে একে চারটি জয় এখন তাদের ঝুলিতে। ডাচরা রানআউটের রেকর্ড গড়ে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ১৭৯ রানেই। এতে ম্যাচের মাঝপথেই জয়ের সুবাস মিলছিল আফগানদের। এরপর রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদির ফিফটিতে তারা সহজ লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে ৭ উইকেট হাতে রেখে।

শুক্রবার লখনউতে ৩১.৩ ওভারেই রান তাড়া করে পাওয়া জয়ে সেমিফাইনালের দৌড়েও নাম লিখিয়েছে আফগানিস্তান। ৭ ম্যাচে ৪ জয়ে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সমান ৮ পয়েন্ট তাদের। নেট রান রেটে তারা অবস্থান করছে আসরের পয়েন্ট তালিকার পঞ্চম স্থানে। আর ৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ডাচদের সেমির স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ধীরস্থির শুরু করে আফগানিস্তান। কিন্তু ডাউন দ্য লেগের নিরীহ এক বলে ক্যাচ দিয়ে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরে যেতে হয় ১০ রানেই। ষষ্ঠ ওভারে উইকেট হারানো আফগানিস্তানের বিপদ বাড়াতে দেননি আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত। পাওয়ারপ্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে দলটি তুলে ফেলে ৫৫ রান।

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরপরই আউট হয়ে যান ইব্রাহিম। রোলফ ফন ডার মারওয়ের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে ইব্রাহিম ফিরেন ৩৪ বলে ২ চারে ২০ রানের ইনিংস খেলে। রহমত দেখেশুনে খেলতে থাকেন। শহিদিকে নিয়ে নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেট করে রানের চাকা সচল রাখেন।

সিঙ্গেল রুখতে ব্যর্থ ডাচরা কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারেনি। স্পিনের বিপরীতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দুই ব্যাটার খেলে যান। দৃষ্টিনন্দন শটে কয়েকটি চার বের করেন রহমত। ১৯তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যায় আফগানিস্তান। কিছুক্ষণ পর ৪৭ বলে নিজের ফিফটিও পেয়ে যান রহমত।

জুটি ভাঙতে সাকিব জুলফিকারকে আক্রমণে নিয়ে আসেন ডাচ কাপ্তান স্কট এডওয়ার্ডস। প্রথম ৯ বলেই তিন চারে ১৮ রান দিয়ে ফেলেন এই লেগি। তবে এরপর অবশ্য ভেঙে দেন ৭৪ রানের জুটি। ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫৪ বলে ৮ চারে ৫২ রানের ইনিংস খেলে যখন রহমত ফেরেন, আফগানিস্তান তখন জয় থেকে ৫১ রান দূরে।

ততক্ষণে সেট হয়ে যাওয়া শহিদি নিরাপদে খেলতে থাকেন বেশ স্বস্তিতে। ২৮তম ওভারে দেড়শ ছাড়িয়ে যায় আফগানরা। সেমির দৌড়ে থাকা আফগানদের জন্য নেট রান রেটে এগিয়ে যাওয়াটাই জরুরি হয়ে পড়েছিল তখন। তবে অতটা আক্রমণাত্মক হননি শহিদি বা আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের কেউই। শহিদি তার ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৯ বলে।

শেষমেশ আফগানরা ১১১ বল হাতে রেখেই জয় পায়। একপাশে ২৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন ওমরজাই। ছক্কা মেরে অধিনায়ক শহিদি খেলা শেষ করেন ৬৪ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থেকে।

 

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া নেদারল্যান্ডস প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায়। আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান স্টাম্পে আক্রমণ করতে থাকেন। পঞ্চম বলেই তার গুগলিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ওয়েসলি বারেসি। ৩ রানে প্রথম উইকেট নিয়ে এরপর আফগানরা চাপ ধরে রাখতে পারেনি।

মুজিব ও পেসার ফজলহক ফারুকি আলগা বোলিং করেন। বেশ বাইরের লাইনে সুযোগ দেন বাউন্ডারির। ওপেনার ম্যাক্স ও'ডাউড কাটে চার বের করতেও একটু ভুল করেননি। কলিন অ্যাকারম্যানের ব্যাটেও মুজিবের বলে আসে চার। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই ১২টি চার মারে ডাচরা। ১ উইকেটে ৬৬ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ হয়। ভালো শুরুর পরও ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া আফগানরা পাওয়ারপ্লে শেষেই করে হাডল (কাঁধে হাত রেখে একত্রে গোল হয়ে জড়ো হওয়া)। এরপরই যেন ভোজবাজির মতো বদলে যায় সবকিছু!

দ্বাদশ ওভারে খেলার ধারার বিপরীতে উইকেট পেয়ে যায় আফগানিস্তান। ডাবল নিতে গিয়ে ফাইন লেগ থেকে আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে যান ও'ডাউড। ৪২ বলে ৯ চারে ৪০ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে যায়। আফগান স্পিনাররা এরপর চেপে ধরেন প্রতিপক্ষকে।

রানের দেখা পেতে হাঁসফাঁস করছিলেন দুই ডাচ ব্যাটার। চরম ভোগান্তিতেই পড়েছিলেন সিব্র‍্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। ৩১ বলে ১২ রানে যখন এঙ্গেলব্রেখট, তখন রানের নেশায় হুট করেই মিডঅফের হাতে বল রেখে দৌড় দেন। উইকেটরক্ষক ইকরাম আলীখিলের প্রান্তে রান আউট হয়ে যান অ্যাকারম্যান। ৩৫ বলে ২৯ রানে থামেন।

বিপদের তখনও বাকি! অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস এসে প্যাডল সুইপ খেলতে গিয়ে গড়বড় বাঁধিয়ে ফেলেন। ইকরাম বল পেয়ে যখন স্টাম্প ভাঙেন, ততক্ষণে এডওয়ার্ডস ফিরতে পারেননি। ১ বলে শূন্য রানেই আউট হয়ে যান এডওয়ার্ডস, গোল্ডেন ডাক! নেদারল্যান্ডসের ইনিংসে ঝলমলে রোদের যে আভা মিলছিল, সেটা মিলিয়ে যেন হুট করেই কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়!

ডাচদের ইনিংসে আঁধার আরও ঘনীভূত হয় পরের দুই ব্যাটারও এক অঙ্কে ফিরে গেলে। বাস ডি লিডি ৩ রানে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ নবির বলে ইকরামের হাতে ক্যাচ তুলে। তাকেই ক্যাচ দিয়ে সাকিব জুলফিকারেরও মরণ ঘটে। আফগানদের একাদশে ফিরে আসা স্পিনার নূর আহমেদ পেয়ে যান প্রথম উইকেট।

নিখুঁত লাইন-লেংথে ডাচদের চেপে ধরা নবি ফিরে আসেন ১৫ রানে ৬ ওভারের স্পেল শেষে। ১২ বলে ২ রান আনা লোগান ফন বিক আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে নবির ফ্লাইটে পরাস্ত হয়ে যান। ৩১তম ওভারে ১৩৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। 

এঙ্গেলব্রেখট একপাশে মনোবল না হারিয়ে খেলে যান। নূরকে টানা দুই চার মেরে ফিফটিও করে ফেলেন ৭৪ বলে। কিন্ত ৩৫তম ওভারে দলকে ১৫২ রানে রেখে তাকেও ফিরে যেতে হয়। ৮৬ বলে ৬ চারে সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস খেলা এঙ্গেলব্রেখটেরও আউটের কারণ, রানআউট! রোলফ ফন ডার মারওয়ে বল মিডউইকেটের হাতে রেখে ছুটলে ইকরামের হাতে রানআউট হয়ে যান এঙ্গেলব্রেখট।

দুই অঙ্কে পৌঁছে যাওয়া মারওয়েও আউট হয়ে যান ৩৩ বলে ১১ রান করে। ৪৬.৩ ওভারে নেদারল্যান্ডস শেষমেশ গুটিয়ে যায় ১৭৯ রানেই। নবি ২৮ রানে ৩ উইকেট, নূর ৩১ রানে ২ ও মুজিব ৪০ রানে ১ উইকেট পেলেও রশিদ খানের উইকেটের খাতা থাকে শূন্য।

Comments