আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

সেমিতে এক পা দিয়ে বাংলাদেশকেও এগিয়ে দিল নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌড়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশও।

সেমিতে এক পা দিয়ে বাংলাদেশকেও এগিয়ে দিল নিউজিল্যান্ড

সেমিতে এক পা দিয়ে বাংলাদেশকেও এগিয়ে দিল নিউজিল্যান্ড

প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে এসে সেমিতে যেতে হলে যা করার দরকার ছিল, তার সবটুকুই করেছে নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কাকে ১৭১ রানেই অলআউট করে দিয়ে জিততে নেয়নি ২৩.২ ওভারের বেশি। ১০ পয়েন্ট নিয়ে নেট রানরেটে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সেমিতে এক পা দিয়েই রাখল ব্ল্যাক ক্যাপসরা।

আর সেইসঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌড়েও পিছিয়ে দিয়েছে অনেকটুকুই। যার আরেক মানে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়। যদি না শেষ ম্যাচে কোনো অঘটন ঘটায় নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হার এড়াতে হবে। ৫ উইকেটের হারে বাংলাদেশের সমান চার পয়েন্ট নিয়েও শ্রীলঙ্কা নেট রানরেটে পিছিয়ে শেষ দুইয়েই আছে।

১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় যা অঘটনের আশা ছিল শ্রীলঙ্কার, তা উড়িয়ে দেয় কিউইদের প্রথম পাওয়ারপ্লের ব্যাটিং। ব্ল্যাক ক্যাপস ওপেনাররা ধীরস্থির শুরুতে চার ওভারে ১৮ রান আনেন। এরপর দুই ওপেনারই চড়াও হন। ডেভন কনওয়ে পঞ্চম ওভারে দিলশান মাদুশাঙ্কাকে মারেন তিন চার। নিয়মিত বাউন্ডারি বের করে নিউজিল্যান্ড পঞ্চাশ রান করে ফেলে ৩৯ বলেই। স্টাইলিশ ব্যাটার রাচিন রবিন্দ্রও দৃষ্টিনন্দন শটে চার-ছক্কা মারতে থাকেন। ৪০ ওভার বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ড তাদের প্রয়োজনটা নামিয়ে আনে একশর কম রানে। কিন্তু কিউইদের চোখটা তো আদতে গেড়ে থাকে নেট রানরেটে।

লঙ্কান বোলিং আক্রমণের একমাত্র দুশমন্ত চামিরা এসে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন কনওয়েকে। শেষমেশ চামিরার বলেই আউট হয়ে কনওয়ে ফিরে যান ৯ চারে ৪২ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে। ৮৬ রানে প্রথম উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড দুই রানের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে আরেকটি উইকেট। রবিন্দ্র থিকশানাকে মারতে গিয়ে মিডঅনে ধরা খেয়ে যান। ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেই ফিরে যান।

কেন উইলিয়ামসন এসে ১৪ রানেই ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে যান। কিন্তু ড্যারিল মিচেল প্রথম বল থেকেই ব্যাটিং করেন নেট রানরেটে এক চোখ রেখে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তাড়ার তাড়না ফুটে উঠে তার ব্যাটে। দুর্দান্ত সব শটেও বেরও করতে থাকেন বাউন্ডারি। ভুল বোঝাবুঝিতে ৭ রানে মার্ক চ্যাপম্যান রানআউট হয়ে ফিরে যান। মিচেলের ইনিংস ৩০ বলের বড় হয়নি। তবে ৩০ বলের ইনিংসেই ৫টি চার ও ২ ছক্কা মেরে ৪৩ রানে এনে যখন ফিরছেন মিচেল, ব্ল্যাকক্যাপসরা ২৩তম ওভারে জয় থেকে ১০ রান দূরে। ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিও খেলে সময় নেননি বেশি গ্লেন ফিলিপস।

বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে টসে জিতে বোলিং নেওয়া নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট তুলে নেয়। ২ রান করে নিসাঙ্কার ফেরার পর কুশল মেন্ডিসও এক অঙ্কেই ফিরে যান। ৬ রান করে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে আউট হন যখন মেন্ডিস, লঙ্কানদের ৩০ রানেই চলে যায় দ্বিতীয় উইকেট। দুই রান যোগ হতে না হতেই উইকেটের ঘরে বেড়ে যায় সংখ্যা। সাদিরা সামারাবিক্রমা ১ রানেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ট্রেন্ট বোল্ট পেয়ে যান দ্বিতীয় উইকেট।

একপাশে উইকেটের মিছিল শুরু হয়ে গেলেও অপর পাশে যেন চলছিল অন্য খেলা। উইকেট হারাতে থাকা লঙ্কান ইনিংসে 'নিরাপদ ব্যাটিং' পালিয়ে যায় কুসল পেরেরার ব্যাটে। একের পর এক বড় শট খেলতে থাকেন বাঁহাতি কুসল৷ ষষ্ট ওভারেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় লঙ্কান ব্যাটাররা।

২২ বল খেলেই যখন পেরেরা নিজের ফিফটি পেয়ে গেছেন, ততক্ষণে ৯টি চার ও ২টি ছক্কা মেরে ফেলা সারা তার। কিন্তু শূন্য রানে জীবন পাওয়া পেরেরাকে ওই রানেই থেমে যেতে হয়। লোকি ফার্গুসনের বলে আবার মারতে গিয়ে ২৮ বলে ৫১ রানেই আউট হয়ে ফিরেন তিনি। আগের ওভারেই চারিথ আসালাঙ্কাও ৮ রানে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরে যান বোল্টের বলে। ৬ ওভারে ৩০ রানে স্পেলে তিন উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে পঞ্চাশ উইকেটের মাইলফলকও অর্জন করেন বোল্ট।

৭০ রানেই অর্ধেক উইকেট খুইয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা পরে বিপদ সামলায় ষষ্ট উইকেট জুটিতে। পাওয়ারপ্লেতে ৭৪ রান আনা লঙ্কানরা ১৬তম ওভারেই শতরান ছাড়িয়ে যায়। যদিও লঙ্কান ইনিংসে কিউই ধাক্কা আসতে বেশিক্ষণ লাগেনি। মিচেল স্যান্টনার এসে দুর্দান্ত ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ তোলান ১৬ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের। এরপর ১৯ রানে ধনাঞ্জয়া দি সিলভাকেও শিকার করেন স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে। এক রানে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে হারিয়ে ১০৫ রানেই সাত উইকেটে খুইয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। একাদশে ফেরা চামিকা করুনারত্নেও এক অঙ্কে ফিরে যান।

শ্রীলঙ্কার অলআউট হওয়াটা খুব নিকটেই ছিল। কিন্তু বারবার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েও স্যান্টনারের স্পেল শেষ হয়ে যায় আর কোন উইকেট না পেয়ে। ১০ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট পান বাঁহাতি এই স্পিনার। রাচিন রবিন্দ্র এসে চামিরার উইকেট নিতে পারলেও অন্যপাশে মাহেশ থিকশানা গেড়ে বসেন। একের পর এক ওভার যায়, থিকশানাকে টলাতে পারেনা কিউইরা। বোল্ট এসে তার কোটা শেষ করে যান ৩৭ রানে তিন উইকেটে, ফার্গুসন ৩৫ রানে দুই উইকেটে।

অলআউট হওয়ার সত্যিটা বরণ করে নিতে বড্ড আপত্তি ছিল থিকশানার। শেষমেশ একপাশে অপরাজিতই থেকেছেন ৯১ বলে ৩ চারে ৩৮ রান করে। শেষ উইকেটে দিলশান মাদুশাঙ্কা এসে ৪৮ বলে ১৯ রান করে যোগ্য সঙ্গ দিলে তারা জুটি গড়েন ৪৩ রানের। দশম উইকেটের সে জুটিতে শ্রীলঙ্কার ইনিংস তারা টেনে নিয়ে যান ৪৬.৪ ওভারে। প্রায় অর্ধেক ওভারেই শ্রীলঙ্কার ১৭১ রানের পুঁজি পেরিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

1h ago