শেষ বলের নাটকীয়তায় বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়

ফাইল ছবি: এএফপি

শন উইলিয়ামস ফিফটি হাঁকিয়ে আশা দেখাচ্ছিলেন। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে সরাসরি থ্রোতে তাকে রানআউট করে দিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শেষ ওভারে ৬ বলে ১৬ রানের সমীকরণ জিম্বাবুয়েকে মেলাতে না দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল মোসাদ্দেক হোসেনের কাঁধে। তিনি তা পালন করলেন দারুণভাবে। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয় পেল বাংলাদেশ।

ব্রিসবেনে রোববার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৩ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছে টাইগাররা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে ৭ উইকেটে ১৫০ রান তোলে তারা। জবাবে পুরো ওভার খেলে জিম্বাবুয়ে পৌঁছাতে পারে ৯ উইকেটে ১৪৭ রান পর্যন্ত।

১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে উইলিয়ামস যখন এক্সট্রা কভার দিয়ে চার মারেন, তখন জিম্বাবুয়ের জয়ের পাল্লা ভারীর দিকে। অথচ পাওয়ার প্লেতে ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল তারা। পরের বলেই সাকিব বাংলাদেশকে এনে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। ৯ বলে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ১৯ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। উইলিয়ামস দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে কাটা পড়েন রানআউটে। থামে ৪২ বলে ৮ চারে গড়া তার ৬৪ রানের ইনিংস। উজ্জ্বল হয় বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা।

শেষ ওভারে ছড়ায় রোমাঞ্চ। দ্বিতীয় বলে সীমানার কাছে আফিফ হোসেনের ক্যাচে বিদায় নেন ব্র্যাডলি ইভান্স। পরের বলে জিম্বাবুয়ে চার পেয়ে যায় লেগ বাই থেকে। চতুর্থ বলে রিচার্ড এনগারাভা ছক্কা হাঁকালে উত্তেজনার পারদ বেড়ে যায়। ২ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৫ রান।

ঘুরে দাঁড়িয়ে পঞ্চম বলে বাংলাদেশকে উইকেট পাইয়ে দেন মোসাদ্দেক। এনগারাভাকে স্টাম্পড করে দেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। শেষ বলে ব্লেসিং মুজারাবানিকেও তিনি স্টাম্পড করলে জয়ের উল্লাসে মাতে টাইগাররা। পূর্ণ পয়েন্ট প্রাপ্তির আনন্দ নিয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে তারা। জিম্বাবুয়ে মাঠ ছাড়ে হতাশা নিয়ে। ওভারের প্রথম বলে লেগ বাই থেকে প্রান্ত বদল করা একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার রায়ান বার্ল আর স্ট্রাইক পাননি। কিন্তু নাটকীয়তার আরও বাকি ছিল তখনও!

তৃতীয় আম্পায়ার টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখতে পান, স্টাম্পের সামনে থেকে বল গ্লাভসবন্দি করেছিলেন সোহান। ফলে আউটের সিদ্ধান্ত তো পাল্টে যায়ই, সঙ্গে নো বলে বাড়তি ১ রান যোগ হয় জিম্বাবুয়ের সংগ্রহে। দুই দলের ক্রিকেটারদের আবার ফিরতে হয় মাঠে। ১ বলে ৪ রানের সমীকরণ অবশ্য মেলাতে পারেননি মুজারাবানি। মোসাদ্দেকের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাটই ছোঁয়ানো হয়নি তার। তাতে জয়ের স্বস্তি মেলে বাংলাদেশের। একই ম্যাচে দুবার!

ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন পেসার তাসকিন আহমেদ। আরও একবার বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু পাইয়ে দেন তিনি। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ৩ উইকেট শিকারে তার খরচা ১৯ রান। বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ২ উইকেট নেন ১৫ রানে। সমানসংখ্যক উইকেট নিতে মোসাদ্দেক দেন ৩৪ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় আগ্রাসী শুরুর আশায় প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। আউট সাইড এজড হয়ে ওয়েসলি মাধভেরে ক্যাচ দেন থার্ডম্যানে। ক্রেইগ আরভিন দুই বাউন্ডারিতে ভালো শুরুর আভাস দিচ্ছিলেন। তৃতীয় ওভারে তাসকিনের অনেক বাইরের বল তাড়া করে তিনি ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ৭ বলে ৮ রান করেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক।

মিল্টন শুম্বাকে তিনে নামিয়ে ফায়দা হয়নি। অনেকগুলো বল নষ্ট করেন এই বাঁহাতি। ডট বলের চাপ থেকে বাঁচতে মোস্তাফিজকে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়েছিলেন। মিড অফ থেকে বায়ে সরে দারুণ ক্ষিপ্রতায় তার ক্যাচ নেন সাকিব। ১৫ বলে তিনি করেন মাত্র ৮ রান। ওই ওভারেই বাজে শটে বিদায় রাজার। মোস্তাফিজের বলের গতি পড়তে না পেরে পুল খেলতে যান। টাইমিং গড়বড় করে সহজ ক্যাচে কোনো রান না করেই বিদায় তার।

কঠিন পরিস্থিতিতে উইলিয়ামসের সঙ্গে জুটি পান রেজিস চাকাভা। এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কিছুটা লড়াইয়ের আভাস দিলেও থিতু হয়েই টানেন ইতি। দ্বাদশ ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তাকে তুলে নেন তাসকিন। উইকেটের পেছনে ধরা দেন ১৯ বলে ১৫ করা চাকাভা। ৬৯ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় জিম্বাবুয়ের। সেখান থেকে উইলিয়ামস ও বার্লের ৪৩ বলে ৬৩ রানের জুটিতে জয়ের নাগাল পেয়েই যাচ্ছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা থেকে যায় অধরাই। বার্ল অপরাজিত থাকেন ২৫ বলে ২৭ রানে।

এর আগে বাংলাদেশ লড়াই করার পুঁজি পায় ওপেনার শান্তর কল্যাণে। ১৭তম ওভার পর্যন্ত টিকে দলের পক্ষে ৫৫ বলে সর্বোচ্চ ৭১ রান করেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ১ ছক্কা। শেষদিকে আফিফের ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ২৯ রানের ইনিংস। জিম্বাবুয়ে ব্যবহার করে সাত বোলার। পেসার মুজারাবানি ২ ওভারে ১৩ রানে নেন ২ উইকেট। আরেক পেসার এনগারাভার ২ উইকেট নিতে খরচা ২৪ রান। জিম্বাবুয়ের ফিল্ডিং ছিল রীতিমতো দৃষ্টিকটু। বেশ কয়েকটি ক্যাচও হাতছাড়া করে তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

4h ago