শেষের নাটকীয়তার পর অস্ট্রেলিয়াকে সরিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

খুব বড় পুঁজি ছিল না শ্রীলঙ্কার বোর্ডে। সহজ রান তাড়ায় পাওয়ার প্লেতেই ৭০ রান এনে ফেলেছিলেন জস বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস। তখন কে জানত মাঝের ওভারে দ্রুত কয়েকটি উইকেট পড়ে এই ম্যাচ যাবে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে! শেষ পর্যন্ত অবশ্য পেরে উঠেনি শ্রীলঙ্কা। নাটক জমিয়ে সেমির টিকেট কেটেছে ইংল্যান্ডই। শ্রীলঙ্কার জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াও এই ম্যাচে পুড়ল হতাশায়। সেমির আগেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।

সিডনিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। লঙ্কানদের ১৪২ রানের পুঁজি ২ বল আগে পেরিয়ে জিতে জস বাটলারের দল। এই জয়ে ১ নম্বর গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। সমান ৭ পয়েন্ট হলেও নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ সেরা নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্টও ৭, অ্যারন ফিঞ্চের দল পুড়ল নেট রানরেটের বেহাল দশায়।

ম্যাচ জিততে ইংল্যান্ডের শেষ ওভারে দরকার ছিল ৫ রান, যে কারো চোখে সহজ সমীকরণই। যদি বলা হয় এক পর্যায়ে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে তাদের দরকার ছিল ৫৪ বলে ৪৯ রান। তাহলে মোড় ঘোরানোর ছবিটা কিছুটা পাওয়া যায়। কিংবা যদি মনে করিয়ে দেওয়া হয় ১৪৩ রান করতে প্রথম ৬ ওভারেই বিনা উইকেটে এসে গিয়েছিল ৭০ রান। ১৪ ওভারে বাকি ৭৩ রান করতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠল ইংল্যান্ডের। লাহিরু কুমারা, ভানিন্দু হাসারাঙ্গা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভাদের ছোবলে কয়েকটি উইকেট হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল ইংলিশরা। দলকে শেষ পর্যন্ত বিপদ থেকে রক্ষা করেন বেন স্টোকস। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ৩৬ বলে ৪২ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে ভেড়ান জয়ের বন্দরে। 

এর আগে হেলসের ৩০ বলে ৪৭ ও বাটলারের ২৩ বলে ২৮ রানে সহজ জয়ের দিকে ছিল ইংল্যান্ড। এই তিনজন ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের দেখা পাননি। 

সহজ রান তাড়ায় গিয়ে ঝড়ো শুরু আনেন হেলস আর বাটলার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই ইংল্যান্ড তুলে ফেলে ৭০ রান।  হেলসই ছিলেন বেশি আগ্রাসী। কাসুন রাজিতার এক ওভারে ২০ রান আনেন তিনি। হাসারাঙ্গাকে আক্রমণে পেয়ে ১২ রান আনেন বাটলার। 

৮ম ওভারে গিয়ে দলের ৭৫ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। হাসারাঙ্গার বলে মিড উইকেট দিয়ে উড়াতে গিয়ে চামিকা করুনারত্নের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন বাটলার। ইংল্যান্ড অধিনায়ক ফেরেন ২৩ বলে ২৮ করে। 

বাটলারের আউটের পরের কয়েক বল চাপ তৈরি করে শ্রীলঙ্কা। হাসারাঙ্গা তার তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফেরেন বিধ্বংসী হেলস। ফিফটির দিকে থাকা ইংলিশ ওপেনার ক্যাচ দেন বোলারের হাতে। ৩০ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় ৪৭ রান করেন তিনি। 

পরের ওভারে ধনঞ্জয়া নিজের বলে নিচু ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন আগ্রাসী হ্যারি ব্রুককে। দ্রুত তিন উইকেট পড়লেও সমীকরণ তখনো সহজই ছিল । লিয়াম লিভিংস্টোন নেমে তড়িঘড়ি খেলা শেষ করে দেওয়ার মতিতে ছিলেন। তার বিদায়ও ঝটপট। লাহিরু কুমারার বল উড়াতে গিয়ে পুরো ব্যাটে নিতে পারেননি। ১০৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। খানিক পর মঈন আলিকে তুলে নিয়ে নাটকীয়ভাবে খেলায় ফেরার আভাস দেয় শ্রীলঙ্কা।

সেই আভাস আরও প্রবল হয় স্যাম কারানের বিদায়ে। কুমারার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন তিনি। শেষ দুই ওভারের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১৩ রানের। এমনিতে সহজ সমীকরণ হলেও টানা উইকেট পড়তে থাকায় খুব একটা সহজ মনে হচ্ছিল না। স্টোকস স্নায়ু ধরে রেখে অবশ্য কাজটা সেরেছেন সাবধানে। 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা আনেন কুশল মেন্ডিস আর পাথুম নিশানকা। ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে আনতে থাকেন তারা। উড়তে থাকা লঙ্কানদের প্রথমে টেনে ধরেন ক্রিস ওকস। 

চতুর্থ ওভারে দলের ৩৯ রানে কাটা পড়েন মেন্ডিস। ১৪ বলে ১৮ করা এই ডানহাতি ধরা পড়েন লিভিংস্টোনের হাতে।  এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ছুটিতে থাকেন নিশানকা। প্রথম ৫ ওভার ছাড়িয়ে ৫০ ছাড়িয়ে যায় দলের পুঁজি।  পাওয়ার প্লেতে আসে ৫৪ রান। 

পাওয়ার প্লের পরই রান রানের চাকা হয়ে শ্লথ। থিতু হওয়ার আগেই স্যাম কারানের বলে ১১ বলে ৯ রান করে বিদায় নেন। চারে নেমে চারিথা আসালাঙ্কা বল নষ্ট করেছেন কেবল।  স্টোকসের বল উড়াতে গিয়ে টাইমিং পাননি। সহজ ক্যাচে বিদায় তার। নিশানকা ছিলেন টিকে, ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। 

১৫ ওভার শেষে লঙ্কানদের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১১৬ রান। শেষের ৫ ওভারে জুতসই ঝড় তুললেও ১৭০ রানের কাছাকাছি যাওয়া খুব সম্ভব ছিল। কিন্তু নিশানকা ফেরেন ভুল সময়ে। আদিল রশিদকে এগিয়ে এসে ছক্কা পেটাতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন তিনি। ৪৫ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কা করেন ৬৭ রান। 

পরের দিকে ধুঁকতে থাকেন লঙ্কান ব্যাটাররা। ঝড় তুলার সময়ে নেমে ভানুকা রাজাপাকসে ২২ বলে করেন ২২ রান। দাসুন শানাকা ৮ বলে ফেরেন ৩ রান করে।  হাসারাঙ্গার ব্যাট থেকে ৯ বলে আসে ৯ রান। শেষ ৩০ বলে আসে স্রেফ ২৫ রান। শেষ দিকে পর্যাপ্ত রান আনতে না পারার কারণেই মূলত কাছে গিয়েও পেরে উঠেনি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। 

Comments

The Daily Star  | English

Trump brokered ceasefire agreement in contact with Israel, Iran: White House official

Meanwhile, fresh series of explosions were reported in the Iranian capital Tehran, as per AFP journalist

1d ago