বর্ষা শেষে মোটরসাইকেলের যত্ন

বিশ্বব্যাপী যানজটপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। ধারণক্ষমতার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত জনবসতি ও যানবাহনে পূর্ণ ঢাকার পথে চলাচল করা অতি দুরূহ কাজ। তবে, ঢাকাসহ সর্বত্র সময় বাঁচিয়ে চলতে অত্যন্ত জনপ্রিয় বাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বন্যাপ্রবণ একটি দেশ বাংলাদেশ, বর্ষা মৌসুম যেখানে মোটরসাইকেল মালিকদের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের সময়। পানি সব সময়েই মোটর বাইকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, হোক সেটা কম কিংবা বেশি।
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী যানজটপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। ধারণক্ষমতার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত জনবসতি ও যানবাহনে পূর্ণ ঢাকার পথে চলাচল করা অতি দুরূহ কাজ। তবে, ঢাকাসহ সর্বত্র সময় বাঁচিয়ে চলতে অত্যন্ত জনপ্রিয় বাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বন্যাপ্রবণ একটি দেশ বাংলাদেশ, বর্ষা মৌসুম যেখানে মোটরসাইকেল মালিকদের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের সময়। পানি সব সময়েই মোটর বাইকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, হোক সেটা কম কিংবা বেশি।

মুমূর্ষু ঢাকা নগরীর বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট খানাখন্দে পূর্ণ, আর বর্ষা মৌসুমে এসব সড়ক যেন একেকটা মরণফাঁদ। অসংখ্য গর্ত আর ঢাকনাহীন ম্যানহোল থেকে শখের বাইকটি সুরক্ষিত রাখতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তুলনামূলক নিরাপদ পথ ধরে গন্তব্যে পৌঁছালেও বৃষ্টির পানি থেকে নিজের বাইকটিকে রক্ষা করা দুরূহ কাজ। এমন পরিস্থিতিতে প্রিয় বাইকের রক্ষণাবেক্ষণে দরকার বাড়তি যত্ন, আজকের আলোচনা থেকে জেনে নেওয়া যাক মোটরসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণে কিছু সহজ ও কার্যকরী টিপস।

বাইক স্টার্ট না করা

পানি এবং যন্ত্রের সম্পর্ক সব সময়েই আদায়-কাঁচকলায়। গাড়ির ইঞ্জিন সাধারণত তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে চলতে সাহায্য করে। তাই, পানির সংস্পর্শে আসলে ইঞ্জিনের তাপ উৎপন্ন করার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ৎ

এ ক্ষেত্রে আপনার বাইকের এক্সস্ট পাইপ এবং ইঞ্জিনে যদি পানি ঢোকে তাহলে ইঞ্জিনের দহন বা কম্বাশন চেম্বার, স্পার্ক প্লাগ এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেমেও পানি প্রবেশর সম্ভাবনা থাকে। বাইকটি তখন স্টার্ট করলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের ফলে ইঞ্জিনের বেশ ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া বাইকের ওয়াটার হ্যামার ও কানেক্টিং রডও এর ফলে বেঁকে যেতে পারে। এ অবস্থায় বাইকটিকে স্টার্ট না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ব্যাটারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা

বৈদ্যুতিক গ্রাউন্ডিং প্রতিরোধ করার জন্য টার্মিনালগুলোতে ব্যাটারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাও হবে ভালো সিদ্ধান্ত। বাইকটি যদি নতুন হয় তাহলে বাইকটি অক্সিলারি সিস্টেম ও সেন্সর পূর্ণ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই, ভিজে যাওয়া নতুন বাইকটির ব্যাটারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়ে ওঠে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, নতুন বাইকটির এমন ধরনের সিস্টেম ও সেন্সরগুলোতে বন্ধ থাকা অবস্থাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকতে পারে৷ তাই, যদি সম্ভব হয় পুরো ব্যাটারিটি খুলে ফেলে একজন পেশাদার মেকানিক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেয়াই উত্তম।  

স্পার্ক প্লাগ প্রতিস্থাপন বা পরিষ্কার করা

বাইকের স্পার্ক প্লাগ জ্বালানি পুড়িয়ে স্ফুলিঙ্গ উৎপাদন করে ইঞ্জিনকে চলতে সহায়তা করে। তাই, এই স্পার্ক প্লাগ যত ভালো থাকবে বাইকের ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা তত দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু, বাইকটি ভিজে গেলে স্পার্ক প্লাগগুলোতে ক্ষয় ধরতে পারে। আর এই ভেজা অবস্থায় যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইকটিকে রেখে দেওয়া হয় কিংবা বৃষ্টির মধ্যে চালানো হয় তাহলে স্পার্ক প্লাগগুলোতে কাদা ঢুকে তা শক্ত হয়ে যেতে পারে। যা অপসারণ করা হয়ে উঠবে আরও কঠিন। তাই যত দ্রুত সম্ভব স্পার্ক প্লাগগুলো খুলে পরিষ্কার করে তা শুকাতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি আগেই কোনো ক্ষতি লক্ষ্য করা যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত প্লাগগুলো বদলে ফেলে নতুন স্পার্ক প্লাগ লাগানো উচিৎ। মোটরসাইকেলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ অতি গুরুত্বপূর্ণ। বৈদ্যুতিক ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনে স্পার্ক প্লাগ ছাড়াই বাইকটিকে কিক-স্টার্ট দিয়ে স্টার্ট করা উত্তম। অন্তত যতক্ষণ না পর্যন্ত এর সংস্কার বা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না হয়। আবার, নতুন স্পার্ক প্লাগ লাগানোর আগে চলমান কয়েলটি সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়েছে কি না তাও নিশ্চিত করতে হবে।

ব্রেকিং সিস্টেম

যেকোনো যানবাহনের জন্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার ব্রেকিং সিস্টেম। ২ চাকার যানটির জন্য যা আরও বেশি দরকারি। কিন্তু পানি ঢুকে বাইকের এই ব্রে-কিং সিস্টেম লক করে দিতে পারে, বিশেষ করে ড্রাম ব্রেকওয়ালা মোটরবাইকে এমন হবার সম্ভাবনা প্রবল। তখন ব্রেক করতে গেলে কিংবা বা রাইডের সময় বাইক থেকে তীক্ষ্ণ শব্দ পাওয়া যায় যা ব্রেক সিস্টেম লক করে দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। 

সমস্যাটি সমাধানে বাইকটি শুকিয়ে, ড্রাম এবং ব্রেক সিস্টেম খুলে ফেলতে হবে। তারপর ব্যাকিং প্লেটটিকে লুব্রিকেট করলে সমস্যাটির সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তবে, ড্রাম প্যাডগুলো পরীক্ষা করা অতি জরুরি, কারণ ড্রাম প্যাডগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে।  

অন্যদিকে, ডিস্ক ব্রেকসহ মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে পরবর্তী সমস্যা এড়াতে অবিলম্বে পরিষ্কার করা এবং শুকানো অপরিহার্য। এ ছাড়া ব্রেক ক্যাবল, ব্রেক লিভার, মাস্টার সিলিন্ডার এবং ব্রেক ফ্লুইড পরীক্ষা করা জরুরি। বৃষ্টি থামলে কিংবা পানির সংস্পর্শ থেকে চলে আসার পর বাইকের ব্রেকগুলোকে বার বার পাম্প করে উৎপন্ন তাপের কার্যকারিতা পরীক্ষা ও পানি নিষ্কাশন বা বাষ্পীভূত করা উত্তম। 

তেল প্রতিস্থাপন

দুর্বিষহ বন্যা-কবলিত বাইকটির তেল পরীক্ষা করে নিতে হবে কারণ এর সঙ্গে জলাবদ্ধ রাস্তায় থাকা নোংরা পানি মিশে যেতে পারে। যা শখের বাইকটির অভ্যন্তরীণ ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে তেলের রঙ পরীক্ষা করা যেতে পারে। তেলের রঙ যদি দুগ্ধ রঙ বা ঘোলাটে দেখায় তাহলে ধরে নিতে হবে তেলের সঙ্গে পানি মিশে গেছে। 

পানি মিশ্রিত তেল সঠিকভাবে লুব্রিকেট করবে না, যা ইঞ্জিনের এবং ইঞ্জিনের উপাদানগুলোকে নষ্ট করে দিতে সক্ষম। এ অবস্থায় তেল নিষ্কাশন বা ফ্লাশ করতে হবে। পরবর্তীতে সম্পূর্ণরূপে নতুন তেল দিয়েই বাইকটি ব্যবহার করা উত্তম।

এয়ার ফিল্টার

বাইকসহ যেকোনো যানবাহনের ইঞ্জিনে বাতাস আসা–যাওয়ার জন্য এক ধরনের ছাঁকনি থাকে, যাকে বলা হয় এয়ার ফিল্টার। এই যন্ত্রের কাজ হচ্ছে বাইরের ধুলাবালিযুক্ত বাতাস পরিষ্কার করে ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখা। ইঞ্জিনসহ এই যন্ত্রাংশে পানি প্রবেশ করলে এর প্রভাব ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সব যন্ত্রাংশে পড়বে। 

তাই, এয়ার ফিল্টারটি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় বাতাসের কারণে পানি কম্বাশন চেম্বারে ঢুকে যেতে পারে, যা ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই, সবচেয়ে উত্তম কাজ হচ্ছে এমন বিপর্যয় থেকে ফিরেই বাইকের এয়ার ফিল্টারটি প্রতিস্থাপন করে নেওয়া।


 
মোটর মেকানিকের সহযোগিতা নেওয়া 

প্রিয় বাইকটির যত্নে এসব টিপস ব্যবহার করার পরও একজন পেশাদার মেকানিকের কাছে বা সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে বাইকটির সম্পূর্ণ পরিচর্যা করা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম কাজ। দেশের পেশাদার মেকানিকেরা বিশেষত, রাজধানীতে অবস্থিত পেশাদার মেকানিকদের কাছে এমন সমস্যা খুবই সাধারণ ঘটনা। 

ফলে, বন্যা-কবলিত ২ চাকার প্রিয় বাহনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে পেশাদাররাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। তবে, বিরূপ পরিস্থিতিতে এসব সুযোগ না থাকলে উপরোক্ত টিপসগুলো মেনে চলে প্রিয় বাইকের পরিচর্যা করলে তুলনামূলক দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা মিলবে।

অনুবাদ করেছেন এস এম সোহাগ

 

 

Comments