বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ মোটরসাইকেল: দাম কোটির ওপরে

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোটরসাইকেল হলো নেইমান মার্কাস লিমিটেড এডিশন ফাইটার। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ মোটরসাইকেল: দাম কোটির ওপরে
বিএমএস নেমেসিস। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিগত বাহনগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল অন্যতম। ২ চাকার এই বাহনটি অনেকে প্রয়োজনে, অনেকে শুধু শখের জন্য কিংবা অনেকে উভয় কাজে ব্যবহার করেন। এই প্রিয় বাহনটির জন্যেও তাই অনেকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে পিছপা হন না। তবে এই বাহনের সর্বোচ্চ মূল্য কত পর্যন্ত হতে পারে বলে আপনার মনে হয়? 

চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এরকম কয়েকটি মোটরসাইকেল সম্পর্কে; কেন সেগুলো এত ব্যয়বহুল এবং কী তাদের এত অনন্য করে তোলে।

নেইমান মার্কাস লিমিটেড এডিশন ফাইটার

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোটরসাইকেল হলো নেইমান মার্কাস লিমিটেড এডিশন ফাইটার। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১১৭ কোটি টাকা।

এতে রয়েছে একটি ১২০ সিআই ৪৫-ডিগ্রি এয়ার-কুলড ভি-টুইন ইঞ্জিন। সঙ্গে টাইটানিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং কার্বন ফাইবার বডি পার্টস। মোটরসাইকেলের ফ্রেমটি কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি বলে এটি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত হালকা। যা খুব দ্রুত এর গতি বাড়াতে সাহায্য করে। এই সীমিত সংস্করণের মোটরসাইকেলটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯০ মাইল বা ৩০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। 

এর অনন্য নকশা এবং পারফরম্যান্স একে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে।

১৯৪৯ ই৯০ এজিএস পোর্কুপাইন

ই৯০ এজিএস পোর্কুপাইন ১৯৪৯ সালের মোটরসাইকেল হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোটরসাইকেলের তালিকায় স্থান করে  নিয়েছে। ১৯৪৯ সালে মোটরসাইকেলটির মাত্র ৪টি ইউনিটে উৎপাদিত হয়েছিল। রেসার লেস গ্রাহাম সেগুলোর মধ্যে একটিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। এই ক্লাসিক ভিনটেজ মোটরসাইকেলটির মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ।

ইকোস ইএস১ স্পিরিট 

ইকোস ইএস১ স্পিরিট-এর নকশা এবং উন্নত প্রযুক্তি একে একটি শিল্পে পরিণত করেছে। ৩৬ লাখ মার্কিন ডলারের এই মোটরসাইকেলটি টাইটেনিয়াম ফ্রেমে তৈরি, যা একে মজবুত করার পাশাপাশি ওজনেও অনেক হালকা করে তুলেছে। ১২০ কেজির মোটরসাইকেলটিতে রয়েছে একটি বিরল ভি-৪, ফোর-স্ট্রোক ইঞ্জিন। যা একে প্রতি ঘণ্টায় ২৪০ মাইল বা  ৩৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে সাহায্য করে।  

এই বিশেষত্বের কারণে, যারা এই দুর্দান্ত মোটরসাইকেলটি চালাতে চান তাদের প্রথমে প্রস্তুতকারকের থেকে ২ সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। 

হিল্ডব্র্যান্ড এবং উলফমুলার

১৮৮৪ সালে যখন ঘোড়ার প্রচলন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। তখন হেনরিক, উইলহেলম এবং অ্যালোইস উলফমুলার এই মোটরবাইকটি তৈরি করেছিলেন। এই অ্যান্টিক মোটরসাইকেলে কোনো ক্ল্যাচ বা প্যাডেল নেই, যা খুবই আশ্চর্যজনক। একে স্টার্ট করার জন্য চলা অবস্থায় ধাক্কা দিতে হয় এবং স্টার্ট হওয়ার পর লাফ দিয়ে মোটরসাইকেলটিতে উঠতে হয়।  

অ্যান্টিক ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনা করে মোটরসাইকেলটির মূল্য ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে। যার কারণে এত বছরে পরও বিশ্বের সবচেয়ে দামি মোটরসাইকেলের তালিকায় এটি স্থান করে নিতে পেরেছে। 

বিএমএস নেমেসিস 

২০০৬ সালে ডেটোনা বিচের র‌্যাটস হোল শো-তে প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করে বিএমএস নেমেসিস মোটরসাইকেলটি। ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের এই মোটরসাইকেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৪-ক্যারেটের স্বর্ণ। এর নকশাটি অত্যন্ত বিলাসবহুল এবং চমৎকার। 

হার্লে ডেভিডসন কসমিক স্টারশিপ

যন্ত্রের সঙ্গে শিল্পের মিশেলে তৈরি করা হয়েছে এই মোটরসাইকেলটি। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী জ্যাক আর্মস্ট্রং এটির নকশা তৈরি করেন। যদিও এর স্ট্যান্ডার্ড বৈশিষ্ট্যগুলো বর্তমানের অনেক পাওয়ার বাইকের কাছাকাছিও আসে না। তবে জ্যাকের তৈরি এই বিরল প্রযুক্তিগত শিল্পটি বর্তমানে এক আইকনিক মাস্টারপিসে রূপান্তরিত হয়েছে। 

এক পর্যায়ে এই মোটরসাইকেলটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারেও বিক্রি হয়েছিল এবং বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাইকও ছিল। তবে বর্তমানে এর দাম কমার পরও সবচেয়ে মূল্যবান মোটরসাইকেলের তালিকায় স্থান করে নিতে পারছে। 

ডজ টমহক ভি১০

২০০৩ সালে সীমিত সংস্করণের মোটরবাইক হিসেবে মাত্র ৯টি ডজ টমহক ভি১০ সুপারবাইক বিক্রির জন্য রিলিজ দেওয়া হয়। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের দ্রুততম বাইকগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে রয়ে গেছে। যার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৪০০ মাইল পর্যন্ত এবং এটি ঘণ্টায় মাত্র ২ দশমিক ৫ সেকেন্ডে ৬০ মাইল পর্যন্ত গতি তুলতে পারে। তবে বাইকটি বেশ ভারী, এর ওজন ৬৮০ কেজি।

এ ছাড়া এতে রয়েছে একটি ভি১০ ফোর-স্ট্রোক ডজ ভাইপার ইঞ্জিন। যা এর সামগ্রিক কর্মক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ২০০৩ সালে এর দাম ছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এই মোটরসাইকেলটি আজও বিশ্বের দ্রুততম মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে একটির জায়গা দখল করে রেখেছে।

লিজেন্ডারি ব্রিটিশ ভিনটেজ ব্ল্যাক

১৯৪৮ সালে যখন এটি যুক্তরাজ্যে প্রথম উৎপাদিত হয়েছিল, তখন এটি প্রাথমিকভাবে ভিনসেন্ট-এইচআরডি নামে পরিচিত ছিল। আর সেই সময়ে এটি ছিল বিশ্বের দ্রুততম মোটরসাইকেল। শ্বাসরুদ্ধকর নকশার এই মোটরসাইকেলের মাত্র ৩৩টি ইউনিট তৈরি করা হয়। এই মোটরসাইকেলের উৎপাদন বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও আজও এটি একটি আইকনিক আইটেম হয়ে আছে। যা এখনো অনেক সংগ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে। তবে কেউ যদি এখন এটি কিনতে চান, তবে তাকে ব্যয় করতে হবে ৪ লাখ মার্কিন ডলার।

ইকোস ফাউন্ডারস এডিশন টিআই এক্সএক্স টাইটানিয়াম সিরিজ

ইকোসের এই মডেলটিকে বলা হয় প্রযুক্তিগত বিস্ময়। যা ২০০৭ সালে একটি সীমিত সংস্করণের মোটরবাইক হিসেবে উৎপাদিত হয়। এর বিক্রয়ের জন্য রয়েছে মাত্র ১৩টি ইউনিট। এটি সম্পূর্ণরূপে কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি। এতে রয়েছে একটি ২ দশমিক ৪-লিটার বিলেট অ্যালুমিনিয়াম ইঞ্জিন। যা একে প্রদান করে ২২৮ হর্সপাওয়ার। 

হালকা আকার এবং নান্দনিকতার সমন্বয় একে দিয়েছে দেখার মতো সৌন্দর্য্য। এ কারণে মূল্য ৩ লাখ মার্কিন ডলার হলেও খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই। 

ডুকাটি ডেসমসডিসি ডি১৬আরআর এনসিআর এম১৬

২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে ডুকাটির প্রযুক্তিগত বিবর্তনের একটি নতুন সীমানা উন্মোচন করে এই মোটরসাইকেলটি। টাইটানিয়াম, এভিওনিক, অ্যালুমিনিয়াম এবং কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি মোটরসাইকেলটি। এতে রয়েছে একটি ফোর-স্ট্রোক ভি৪ ইঞ্জিন, একটি ইনজেকশন ফুয়েল সিস্টেম এবং একটি ৬ স্পিডের গিয়ারবক্স।

মোটরসাইকেলটি মূলত রেসিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটির মূল্য ২ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

মোটরসাইকেলগুলোর এত দামের কারণ

বিভিন্ন কারণে এই মোটরসাইকেলগুলো এত ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।  

প্রথমত, বলা যায় এদের এক্সক্লুসিভিটি। দামি মোটরসাইকেলগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় তাদের উৎপাদনের পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত। যা তাদের মূল্য বৃদ্ধি করে আরও বেশি এক্সক্লুসিভ করে তুলেছে। যার কারণে সেগুলো অনেক সংগ্রাহক এবং মোটরসাইকেলপ্রিয় মানুষের কাছে অত্যন্ত পছন্দের হয়ে উঠে। যা তাদের মূল্য বৃদ্ধিতে আরও বেশি ভূমিকা রেখেছে। 

তারপর রয়েছে এদের গুণমাণ। এই মোটরসাইকেলগুলো প্রায়শই অত্যন্ত উচ্চ মানের সামগ্রী এবং উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। যা তাদের বাজারের সেরা এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাইক হিসেবে স্থান করে দিয়েছে। কার্বন ফাইবার, টাইটানিয়াম এবং অন্যান্য উচ্চমানের উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে মোটরসাইকেলগুলো অবিশ্বাস্যভাবে টেকসই ও মজবুত।

এ ছাড়া এদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স; বিশেষ করে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা হয় দেখার মতো। এই মোটরসাইকেলগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উন্নত মানের ইঞ্জিন ব্যবহার করে। যেগুলো এই মোটরসাইকেলগুলোকে করে তোলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতির। যা এদের মূল্যবৃদ্ধির পেছনের আরেক কারণ। 

অন্যদিকে রয়েছে ব্র্যান্ডের খ্যাতি। যে ব্র্যান্ডগুলো এই দামি মোটরসাইকেলগুলো তৈরি করে, তাদের এরকম উচ্চ মানের এবং উচ্চ কর্মক্ষমতা সম্পন্ন বাইক তৈরির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই ব্র্যান্ডগুলোর খ্যাতি অনেক সময়ই মোটরসাইকেলের উচ্চমূল্যের কারণ। 

এ ছাড়া রয়েছে এসব ব্র্যান্ড থেকে দেওয়া বিশেষ কিছু সুবিধা। যার মধ্যে রয়েছে ক্রেতার প্রয়োজন অনুসারে কাস্টমাইজেশন করার সুযোগ। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মোটরসাইকেলে কাস্টম পেইন্ট জব থেকে শুরু করে বিভিন্ন পার্টস এবং ক্রেতার সুবিধামত আনুষাঙ্গিক অনেক কাস্টমাইজেশনের সুবিধা। 

কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে, নান্দনিকতা থেকে পারফরম্যান্স পর্যন্ত; সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে মোটরসাইকেলগুলো এত ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। 

তবে বাজার পরিস্থিতি এবং মোটরসাইকেলের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে এসব দাম বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হতে পারে। 

 

Comments