যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী গাড়ির নাম ‘দ্য বিস্ট’

যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী গাড়ির নাম ‘দ্য বিস্ট’
দ্য বিস্ট। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী গাড়িটি বেশ আলাদা। রাস্তায় চলন্ত এই দুর্গটিকে তার সুরক্ষা সুবিধার জন্য 'দ্য বিস্ট' হিসেবে অবিহিত করা হয়েছে। 

মার্কিন কোম্পানি জেনারেল মটরস ২০০১ সালে সর্বপ্রথম ভি৮ ইঞ্জিন-বিশিষ্ট এই গাড়িটি নির্মাণ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়। পরবর্তীতে বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান জো বাইডেনকে নিরাপদে বহন করে চলেছে বিলাসবহুল ভারী সাঁজোয়াযান লিমুজিন ক্যাডিলাক ওয়ান। 

ক্যাডিলাক ওয়ান শুনে একটা গাড়ি মনে হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য রয়েছে ক্যাডিলাকের অভিন্ন মডেলের ১২টি লিমুজিন। 

বিজনেস ইনসাইডারের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেখানেই যান তার সঙ্গে কমপক্ষে দুটি বিস্ট থাকে। যার একেকটি প্রতি গ্যালনে ৪ মাইলেরও কম দূরত্ব চলতে পারে। এত বেশি জ্বালানি খরচের পেছনে গাড়িটির অস্বাভাবিক ওজন দায়ী, যার ওজন প্রায় ১০ হাজার কেজির সমান। 

অন্যান্য বিস্টগুলো যখন ব্যবহার করা হয় না, তখন মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সদর দপ্তরের বেসমেন্টে পার্ক করা করা থাকে। ২৪-ঘণ্টা সেগুলো নজরদারিতে রাখা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহর অন্তত ৪৫টি সশস্ত্র যান দিয়ে ঘেরা থাকে। যার মধ্যে থাকে দুটি বিস্ট, একটি ডিকয় যা শত্রুপক্ষের জন্য ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

বারাক ওবামার শাসনামলে পূর্বসূরি বিস্টের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো হয়। চলন্ত দুর্গটি নির্মাণে স্টিল, অ্যালুমনিয়াম, টাইটানিয়াম এবং সিরামিক ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়ির দরজাগুলো ৮ ইঞ্চি পুরু, যার একেকটির ওজন একটি বোয়িং ৭৫৭ জেট বিমানের কেবিনের দরজার সমান। 

এনবিসি নিউজের তথ্যসূত্রে, একেকটি ক্যাডিলাক লিমুজিনের পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। 

গাড়ির নিচে একটা স্টিল প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে যা গাড়িকে বোমা ও গ্রেনেড থেকে সুরক্ষা দেয়। জ্বালানী ট্যাংক বিস্ফোরণরোধী এক ধরনের বিশেষ ফেনা দ্বারা সুরক্ষিত এবং একটি রকেট প্রপেলড গ্রেনেডের (আরপিজি) সরাসরি আঘাত প্রতিহত করতে সক্ষম। গাড়ির কেবিন রাসায়নিক এবং গ্যাস আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত। কেভলারের পাঞ্চাররোধী টায়ার যেকোনো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিতে গাড়িকে সচল রাখতে পারবে। পুরো লিমুজিনের মাত্র একটা জানালা খোলার ব্যবস্থা আছে, যা চালকের পাশে অবস্থিত এবং সর্বোচ্চ ৩ ইঞ্চি পরিমাণে খোলা যাবে। 

দুর্গটি রক্ষার্থে ব্যবহৃত অনেক উপকরণের সম্পর্কেই তেমন কোনো তথ্য নেই, যা গোয়েন্দা সংস্থা গুরুতরভাবে গোপন রাখে। অভেদ্য এই গাড়ি যদি শত্রুপক্ষের হামলায় আক্রান্ত হয় তাহলেও রয়েছে ব্যবস্থা। গাড়িতে আছে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, নাইট ভিশন, টিয়ার গ্যাস ক্যানন এবং ফ্রিজ। যাতে বর্তমান প্রেসিডেন্টের রক্তের সঙ্গে মিলিয়ে রক্ত সংগৃহীত থাকে। ১৮ ফুট দীর্ঘ এবং ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই গাড়িটি শুধু প্রতিরক্ষার জন্য ডিজাইন করা হয়নি বরং পাম্প-অ্যাকশন শটগান, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার এবং একটি তেল স্লিকসহ সীমিত আক্রমণাত্মক ব্যবস্থার সঙ্গে সজ্জিত। এতে নাইট ভিশন ক্যামেরাও রয়েছে।

 

তথ্যসূত্র: কার অ্যান্ড ড্রাইভার, দ্য প্রেসটিজ, বিজনেস ইনসাইডার, এনবিসি নিউজ, হট কারস

গ্রন্থনা: এস এম সোহাগ
 

Comments

The Daily Star  | English
Barishal University protest

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

7h ago