উইন্ডোজ কম্পিউটারে র‍্যাম খালি রাখবেন যেভাবে

আপনার উইন্ডোজ পিসিতে যদি সর্বদাই লো অন মেমোরি দেখিয়ে থাকে তাহলে কম্পিউটারে র‍্যাম ফ্রি রাখার উপায় জানা প্রয়োজন।

আপনার উইন্ডোজ পিসিতে যদি সর্বদাই লো অন মেমোরি দেখিয়ে থাকে তাহলে কম্পিউটারে র‍্যাম ফ্রি রাখার উপায় জানা প্রয়োজন।

র‍্যাম ফ্রি রেখে কম্পিউটারের গতি বাড়াতে কিছু কৌশল কাজে লাগানো যায়। এগুলো উইন্ডোজ ১০ এবং ১১ দুই সংস্করণেই কাজ করবে।

র‍্যাম কী এবং কীসের জন্য ব্যবহৃত হয়?

উইন্ডোজে র‍্যাম কীভাবে ক্লিয়ার করবেন সে সম্পর্কে টিপসগুলোতে যাওয়ার আগে র‍্যাম কী করে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা যাক। র‍্যাম এর পূর্ণরূপ হলো র‍্যান্ডম একসেস মেমরি। এটি একটি স্বল্প-মেয়াদী স্টোরেজ মাধ্যম যা বর্তমানে আপনার কম্পিউটারে চলমান প্রোগ্রাম এবং প্রক্রিয়াগুলিকে ধারণ করে থাকে।

আপনার মেশিনে যত বেশি র‍্যাম থাকবে, কম্পিউটারের পারফরম্যান্স না কমিয়ে তত বেশি প্রোগ্রাম একবারে চালাতে পারবেন। র‍্যাম অপর্যাপ্ত হলে, তখন স্টোরেজ ড্রাইভের পেইজ ফাইল নামক একটি অংশ ব্যবহৃত হয়, যা র‍্যামের মতো কাজ করে। কিন্তু এটি র‍্যামের তুলনায় অনেক ধীরগতির হওয়ায় পারফরম্যান্স কমে আসে।

যেহেতু র‍্যাম একটি ভোলাটাইল মেমোরি, তাই কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে সংরক্ষিত বিষয়বস্তু হারিয়ে যায়। আপনি যদি কিছু স্থায়ীভাবে রাখতে চান তাহলে তা অবশ্যই হার্ড ড্রাইভ বা সলিড-স্টেট ড্রাইভের মতো স্থায়ী স্টোরেজে সংরক্ষণ করে রাখবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি সেভ না করা ওয়ার্ড ফাইল কম্পিউটার বন্ধ হলেই হারিয়ে যাবে।

উইন্ডোজ পিসিতে র‌্যাম ফ্রি রাখার ৮ কৌশল

এবার র‍্যাম ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর উপায়গুলো দেখে নেওয়া যাক। এই কৌশলগুলো সবসময় ব্যবহার করতে হবে এমন নয়। যখন মেমরির স্বল্পতা দেখা দেয় তখন এই পদ্ধতিগুলি কাজে দিতে পারে।

১. পিসি রিস্টার্ট দেওয়া

পিসি রিস্টার্ট করলে র‍্যাম সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে যায় এবং প্রোগ্রামগুলো পুনরায় চালু হয়। যদিও এতে র‍্যামের আকার না বাড়লেও মেমরি দখল করে রাখা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা প্রোগ্রামগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু কিছু প্রোগ্রাম চালু থাকে যা অনেক সময়ই বোঝা যায় না।

এজন্য কম্পিউটার নিয়মিত রিস্টার্ট করা উচিত। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে কম্পিউটার রিস্টার্ট করা না হয় এবং পিসি ধীর গতিতে কাজ করে তখন বুঝতে হবে রিবুট করার সময় এসেছে।

২. উইন্ডোজ টুলস দিয়ে র‍্যাম ব্যবহার চেক করুন

কোন কোন প্রোগ্রামগুলো র‍্যাম ব্যবহার করছে তা অনুমান করার পরিবর্তে উইন্ডোজে এটি দেখার জন্য একটি টুল ব্যবহার করুন। টুলটি চালু করতে স্টার্ট মেনু সার্চ করে টাস্ক ম্যানেজার খুলুন, অথবা কন্ট্রোল+অল্টার+শিফট শর্টকাট ব্যবহার করুন। যদি প্রয়োজন হয় তবে ফুল ভিউয়ের জন্য মোর ডিটেলস অপশনে ক্লিক করুন। তারপর প্রসেস ট্যাবে মেমরি হেডারে ক্লিক করুন যাতে কোন প্রোগ্রামগুলো সর্বাধিক থেকে সর্বনিম্ন র‍্যাম ব্যবহার করছে তা দেখা যায়। ভারী অ্যাপগুলির জন্য অধিক পরিমাণে র‍্যাম প্রয়োজন পড়ে তাই সেগুলোর প্রচুর র‍্যাম ব্যবহার করা কোনো সমস্যার লক্ষণ নয়। যেমন: এক ডজন ট্যাব খোলা একটি ব্রাউজার স্বাভাবিকভাবে একটি সাধারণ নোটপ্যাড অ্যাপের চেয়ে বেশি র‍্যামের জায়গা নেবে।

আরও তথ্যের জন্য পারফর্ম্যান্স ট্যাবে স্যুইচ করুন। মেমরি সেকশনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে র‍্যাম ব্যবহারের একটি চার্ট দেখতে পাবেন। নিচে ওপেন রিসোর্স মনিটর ক্লিক করলে মেমরি ট্যাবে এই ইউটিলিটির আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

৩. অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আন-ইন্সটল অথবা ডিসেবল করে রাখুন

যে অ্যাপগুলো আপনি কয়েক মাস ধরে চালাননি কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে সেগুলি আপনার কম্পিউটারের রিসোর্স নষ্ট করছে। তাই সেগুলি সরিয়ে ফেলা উত্তম। যেসব অ্যাপ সরাতে চান সেগুলো,

সেটিংস> অ্যাপস> অ্যাপস অ্যান্ড ফিচারস, এ গিয়ে আনইনস্টল অথবা ডিসেবল করে নিন।

মাঝে মাঝে ব্যবহার করার কারণে যদি কোনও অ্যাপ আনইনস্টল করতে না চান সেক্ষেত্রে প্রোগ্রামটিকে স্টার্টআপে বন্ধ করে দিতে পারেন। আপনি যখনই লগ ইন করেন তখন অনেক অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলার জন্য সেট হয়ে থাকে।

৪. নিয়মিত অ্যাপ আপডেট করুন

নিরাপত্তাজনিত কারণে সময়মত অ্যাপের আপডেট ইনস্টল করা উচিত। যেগুলো নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে আপনার র‍্যাম ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

অনেক সময় কিছু এপ্লিকেশন মেমরি লিক সমস্যায় ভুগে থাকে। যখন অ্যাপগুলো রিসোর্স ব্যবহারের পর প্রয়োজনীয় র‍্যাম পুলে সেগুলো ফেরত দেয় না তখন এটা ঘটে। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে এই অ্যাপগুলো আরও র‍্যাম ব্যবহার করতে থাকে যার ফলে অন্যান্য অ্যাপ প্রয়োজনীয় রিসোর্সের অভাবে ঠিকভাবে চলতে পারে না। এক্ষেত্রে অ্যাপগুলোর সর্বশেষ ভার্সন ইনস্টল করলে সমস্যার সমাধান হবে।

এছাড়াও, অ্যাপগুলির সর্বশেষ ভার্সনগুলো উন্নততর এবং অপ্টিমাইজড থাকে যাতে খুব বেশি র‍্যাম ব্যবহার না করতে হয়।

৫. হালকা অ্যাপ ব্যবহার করুন এবং চলমান প্রোগ্রামগুলো ম্যানেজ করুন

অনেকসময় পিসির র‍্যাম ক্লিয়ার করার প্রয়োজন হয় কিন্তু এতে ওয়ার্কফ্লো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমতাবস্থায় দুটি কাজ করা যেতে পারে।

প্রথমত, বিকল্প হিসেবে হালকা অ্যাপ ব্যবহারের চেষ্টা করুন। ছোটখাটো এডিটিং এর জন্য ফটোশপের পরিবর্তে পেইন্ট ডট নেট (Paint.NET) কিংবা গিম্প (GIMP)-এর মতো ছোট অ্যাপগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করুন। শুধুমাত্র তখনই ফটোশপ ব্যবহার করুন যখন জটিল এবং ডিটেলড কাজ করা লাগতে পারে।

দ্বিতীয়ত, নিয়মিত ব্যবহার নেই এমন সফ্টওয়্যারগুলো বন্ধ রাখুন। ফাইল সেভ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, তারপর যে অ্যাপটি চালু আছে সেটি বন্ধ করে দিন। পরবর্তীতে পড়তে চান এমন ব্রাউজার ট্যাবগুলিকে বুকমার্ক করে রাখুন, তারপর র‍্যাম খালি করতে তাদের বন্ধ রাখুন।

স্ক্রিনে টাস্কবারে নিচে ডান দিকে ছোট তীরের আইকনে ক্লিক করে সিস্টেম ট্রে এক্সপান্ড করে দেখুন। ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান প্রত্যেকটি প্রোগ্রামের আইকন এখানে দেখা যায়। প্রয়োজনে রাইট-ক্লিক করে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ক্লোজ করুন।

র‍্যাম দখল করে রাখার জন্য গুগল ক্রোম কুখ্যাত। যদি ব্রাউজারে অনেক বেশি কাজ করার প্রয়োজন হয় তবে ক্রোমের পরিবর্তে মাইক্রোসফট এজ কিংবা মজিলা ফায়ারফক্স ব্যবহার করুন। এই অ্যাপগুলো কম পরিমাণে র‍্যাম ব্যবহার করে।

তবে যে ব্রাউজারই ব্যবহার করুন না কেন ব্রাউজারে এক্সটেনশনগুলোর দিকে খেয়াল রাখা উচিত এবং অপ্রয়োজনীয় হলে সেগুলো রিমুভ করে ফেলা উচিত। ব্রাউজার এক্সটেনশনগুলো অতিরিক্ত মেমরি খরচ করে, তাই এগুলো রিমুভ করার মাধ্যমে র‍্যাম ব্যবহার কমিয়ে আনা যায়।

৬. ম্যালওয়্যার স্ক্যান করুন

আপনার পিসিতে সর্বদাই র‍্যাম অতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে হলে ম্যালওয়্যার স্ক্যান করা উচিত। ম্যালওয়্যার র‍্যাম দখল করে রাখে। তাই ম্যালওয়্যারবাইটস দিয়ে স্ক্যান করে সেগুলো দূর করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

৭. উইন্ডোজের ভার্চুয়াল মেমরি এডজাস্ট করুন

আগেই আমরা পেইজিং ফাইলের কথা বলেছি। যদি 'সিস্টেম ইজ লো অন ভার্চুয়াল মেমরি' এমন এরর মেসেজ দেখা যায় তবে এটি বাড়িয়ে পারফর্ম্যান্স স্থিতিশীল করা যায়।

এর জন্য, সেটিংস>সিস্টেম>এবাউট এ যান। তারপর সেখানে এডভান্সড সিস্টেম সেটিংস এ ক্লিক করলে একটি নতুন উইন্ডো খুলবে। উইন্ডোজ ১১-এর ক্ষেত্রে, এটি ডিভাইস স্পেসিফিকেশনস অপশনের নিচে রিলেটেড লিঙ্কস এ আছে।

নতুন উইন্ডোতে, এডভান্সড ট্যাবে পারফর্ম্যান্স অপশনের নিচে সেটিংস বাটনে ক্লিক করুন। যা একটি নতুন উইন্ডো খুলবে, সেখানে পুনরায় এডভান্সড ট্যাবে ভার্চুয়াল মেমরি সেকশনে চেঞ্জ বাটনে ক্লিক করুন।

এখন আপনি মেইন ড্রাইভে পেইজিং ফাইল সাইজ দেখতে পারবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উইন্ডোজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেইজ সাইজ ম্যানেজ করে। তবে আপনার কম্পিউটারে ভার্চুয়াল মেমরি কম হয়ে পড়লে এই অপশনটি আনচেক করে প্রয়োজনীয় ভ্যালু সেট করে নেওয়া যাবে।

৮. বাড়তি র‍্যামের জন্য রেডিবুস্ট ব্যবহার করুন

যদি আপনার কম্পিউটার অনেক পুরোনো হয় এবং র‍্যামের পরিমাণ কম হয়, তবে রেডিবুস্ট নামে স্বল্প পরিচিত একটি উইন্ডোজ ফিচার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে এসডি কার্ড বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভকে একটি অতিরিক্ত র‍্যামের মতো ব্যবহার করা যায়।

যদিও এটি শুনতে দারুণ শোনায়, তবে এর ব্যবহার বর্তমানে সীমিত। যদি আপনার কম্পিউটারে এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভ না থাকে তবে এই ফিচারটি কোনো কাজে আসবে না। কারণ এসএসডি ফ্ল্যাশ ড্রাইভের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন। তাই ইউএসবি ড্রাইভকে র‍্যামের মতো ব্যবহারের চেয়ে পেইজিং ফাইল বেশি কার্যকর।

এছাড়া বর্তমানে কম্পিউটারগুলো বেশি র‍্যামযুক্ত হওয়ায় রেডিবুস্ট ব্যবহার করে তেমন লাভ নেই যেমনটা পুরোনো কম্পিউটারে হতো। অতিরিক্ত র‍্যাম যুক্ত করার মাধ্যমে অনেক বেশি পারফর্ম্যান্স বৃদ্ধির সুযোগ আপনাকে রেডিবুস্টের 'প্রিটেন্ড র‍্যাম' দেবেনা। শুধুমাত্র অনেক পুরাতন সিস্টেমে রেডিবুস্ট ব্যবহার করে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

৯. বেশি র‍্যাম ইনস্টল করা

আপনার কম্পিউটার যদি সবসময়ই র‍্যাম লো দেখায় কিংবা একসঙ্গে অনেকগুলো প্রোগ্রাম চালাতে হয় তবে আপনার মেশিনে অতিরিক্ত র‍্যাম যুক্ত করাই একমাত্র পথ। যদিও এটি কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ তবে এতে পারফর্ম্যান্স অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। এক্সট্রা ফিজিক্যাল মেমরি স্টিক যুক্ত করার মাধ্যমে র‍্যাম বাড়ানো যায়।

সহজেই ডেস্কটপ কম্পিউটারে র‍্যাম বাড়ানো যায়। কিন্তু ল্যাপটপে জায়গার সীমাবদ্ধতার কারণে বাড়তি র‍্যাম যোগ করা কঠিন বা অসম্ভবও হতে পারে।

উভয় ক্ষেত্রেই, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি আপনার সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ র‍্যাম কিনছেন কিনা। আপনার সিস্টেমের সঙ্গে কী ধরনের র‍্যাম কাজ করে এবং আপগ্রেড করা সহজ কিনা জানতে পিসি প্রস্তুতকারকের ডকুমেন্টেশন দেখুন। অনলাইন ফোরামগুলোও এতে আপনাকে সহায়তা করতে পারে।

র‍্যাম ক্লিনার কি আসলেই কাজ করে?

আপনি হয়তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় র‍্যাম ক্লিনিং ইউটিলিটিস দেখেছেন যেগুলো বিভিন্নভাবে র‍্যাম বুস্ট করে। এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। সংক্ষেপে বললে, র‍্যাম বুস্টারগুলোকে 'প্লাসিবো' বলা যায়। এগুলো আসলে কাজ করে না।

তবে শুধু র‍্যাম আপগ্রেড করলেই হবে না, পিসির অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাম ছাড়াও কিছু হার্ডওয়ার আপগ্রেডের মাধ্যমে পিসির পারফর্ম্যান্স বাড়ানো যায়।

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

তথ্যসূত্র: www.makeuseof.com

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka denounces US 2023 human rights report

Criticising the recently released US State Department's 2023 Human Rights Report, the foreign ministry today said it is apparent that the report mostly relies on assumptions and unsubstantiated allegations

1h ago